Monday, 14 September 2020

নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি লাঘু হলে রাজ্যে বনধ হতে পারে অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্র



চাকরি যাওয়ার  আশংকা তাড়া করছে কর্মী-সহায়িকাদের,

দাবি না মানলে বিধানসভা ঘেরাও কর্মসূচি অক্টোবরে

RTN tv Live, কালাইন, ১৪ সেপ্টেম্বরঃ- 
নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি লাঘু হলে সিদুরে মেঘ দেখছেন আসাম রাজ্যিক অঙ্গনওয়াড়ী কর্মী সহায়িকা সংস্থার কর্মকর্তারা। এমনকি এই জাতীয় শিক্ষা নীতির ফলে  রাজ্যের অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্র সমূহ বন্ধ সহ তাদের চাকরি চলে যাওয়ার আশংকাও তাড়া করছে তাদের। তাই আগেভাগেই চাকরি স্থায়ীকরণ, বেতন বৃদ্ধি ও জাতীয় শিক্ষা নীতি  অনুযায়ী ৩ বছর থেকে ৬ বছর বয়সের শিশুদের অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্র থেকে প্রাথমিক স্কুলে স্থানান্তর না করার দাবীতে আন্দোলনের রূপ রেখা তৈরি করতে সারা রাজ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছেন অঙ্গনওয়াড়ী কর্মী-সহায়িকারা। 
এরই অঙ্গ হিসেবে শনিবার কালাইন ইউনিভার্সেল একাডেমিতে কাটিগড়া-কালাইন আইসিডিএস প্রকল্পের প্রায় পাঁচ শতাধিক ওয়ার্কার-হেপ্লারের উপস্থিতিতে  এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।  আসাম রাজ্যিক অঙ্গনওয়াড়ী কর্মী-সহায়িকা সংস্থার কাটিগড়া প্রজেক্ট কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এই সভায় বিভিন্ন বক্তা অঙ্গনওয়াড়ী কর্মী-সহায়িকাদের বিভিন্ন দাবি দাওয়ার দাবি তুলে  ধরেন। পাশাপাশি তারা বর্তমান রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সমালোচনা করে বলেন, সুদীর্ঘ কাল থেকে  থেকে তারা নুন্যতম পারিশ্রমিকে কাজ করে আসতেছেন। কিন্তু আসাম সরকার কোনো দিন তাদের ন্যায্য মূল্যায়ন করে নি। কেরলের রাজ্য সরকার সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে অঙ্গনওয়াড়ী কর্মীদের নানা সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তার ঠিক উল্টো পথেই হাটছেন আসাম সরকার।  বর্তমানে জাতীয় শিক্ষা নীতির মাধ্যমে ৩ থেকে ৬ বছরের শিশুদের প্রাথমিক স্কুলে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে বলে খবর রটিয়েছে। তাই যদি হয়, তাহলে  কার্যত আসামে অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্র বন্ধ করার পথেই হাটছে সরকার। কারণ ৩ থেকে ৬ বছর বয়সের শিশুদের শিক্ষাদান অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি  প্রজেক্ট। সরকার এই বয়সের শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার কথা বলে প্রাথমিক স্কুলে স্থানান্তর করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। আসলে অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্র সমূহে কোনো দিন সরকার উপযুক্ত সুযোগ সুবিধা, আসবাবপত্র, বিদ্যুতের ব্যবস্থা ইত্যাদি তৈরি করে দেয় নি। এছাড়া বহু কেন্দ্র ডেমেজ হয়ে পড়ে আছে। কোথাও আবার নেই কোনো কেন্দ্র ঘর।  নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়ে আছে অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্র সমূহ।  এই অবস্থায় শিক্ষাদান প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে অনেকাংশে সম্ভব হয়ে উঠেনি।   উপযুক্ত পরিকাঠামো ও শৈক্ষিক পরিবেশ গড়ে দিলে  তারা নিজেরাই ৩ থেকে ৬ বছরের শিশুদের শিক্ষাদানে আগ্রহী হয়ে উঠবেন বলেও সভায় মত পেশ করেন। তবুও কোনো অবস্থায় অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রের শিক্ষাদান প্রক্রিয়া মতো  গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগ কেটে নিতে দেওয়া হবে না। পাশাপাশি বেতন বৃদ্ধি ও চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিও তুলেন তারা। অন্যথায় আসাম রাজ্যিক অঙ্গনওয়াড়ী কর্মী সহায়িকা সংস্থার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসন্ন অধিবেশনে বিধানসভা ঘেরাও কর্মসূচি সহ নানা আন্দোলনে নামবেন তারা। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন  ছিলেন, আসাম রাজ্যিক সিটুর সম্পাদক সুরজিৎ ঘোষ, সিটুর কাছাড় জেলা কমিটির সম্পাদক বিধান গুপ্ত, কাছাড় জেলা অঙ্গনওয়াড়ী কর্মী সহায়িকা সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জর্না দাস, কাটিগড়া আইসিডিএস প্রকল্প কমিটির সভানেত্রী স্বপ্না বেগম, ইসলাম উদ্দিন প্রমুখ।

Friday, 11 September 2020

শাহসুফি ইব্রাহিম আলী (রহঃ) ও টান্টুর পীর সাহেব এর স্মৃতিচারণ সভা কাটিগড়া যুব আহলে সুন্নতের

আরটিএন, কাটিগড়া , ১১ সেপ্টেম্বরঃ সদ্যপ্রয়াত  বরাক উপত্যকার দুই আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব টান্টুর পীর সাহেব  শাহসুফি আতাউর রহমান চৌধুরী (রহঃ) ও কাটিগড়ার হজরত মাও  ইব্রাহিম আলী (রহঃ) এর স্মরণে  দোয়া ও আলোচনা মাহফিল অনুষ্ঠিত হলো কাটিগড়ায়। যুব আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের কাটিগড়া আঞ্চলিক কমিটির উদ্যোগে ও তেলিটিকর জামেয়া মুবাশ্বিরিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে খতমে কুরআন, খতমে খাজেগান, মিলাদ শরিফ, শিরনী বিতরণ সহ  নানা কর্মসূচির মাধ্যমে এই দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে ছিল প্রয়াত দুই পীর সাহেবের জীবনাদর্শ নিয়ে আলোচনা সভাও। 
ছবিঃ- বক্তব্য রাখছেন পশ্চিম কাটিগড়া আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের সাধারণ সম্পাদক মাও এনাম উদ্দিন সাহেব।             

 কাটিগড়া যুব আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের উদ্যোগে আয়োজিত এই মাহফিলে বিভিন্ন বক্তা প্রয়াত দুই আধ্যাত্মিক বুজুর্গের জীবনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বলেন, সর্বজন শ্রদ্ধেয় বুজুর্গ হজরত ইব্রাহিম আলী কাটিগড়ী (রহঃ) ও টান্টুর পীর শাহসুফি আতাউর রহমান চৌধুরী (রহঃ) আজীবন ছিলেন প্রচার বিমুখ। সহায়- অসহায়, ধনি-গরিব সকলের প্রতি তাদের ছিল সমান ভালোবাসা। অত্যন্ত বিনয়ী স্বভাব সহ সহজ-সরল জীবন যাপন করতেন  তাঁরা। বিপদে-আপদে  অভিভাবকের ভুমিকা দেখা যেত তাদের। এজন্য প্রয়াত দুই পীর সাহেব ছিলেন    সমাজের সর্বস্তরের মানুষের আশ্রয় স্থল। তাদের প্রয়াণে উপত্যকার আধ্যাত্মিক জগতে অপূরণীয় ক্ষতি হলো বলেও বিভিন্ন বক্তা  মত পোষণ করেন। 
 কাটিগড়া যুব আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের সভাপতি মাওলানা সরফ উদ্দিন তালুকদারের পৌরোহিত্যে আয়োজিত এই স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন, কাছাড় জেলা যুব আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের সভাপতি মাওলানা রশিদ আহমদ,  পশ্চিম কাটিগড়া আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা এনাম উদ্দিন, শিলচর আন নূর সিনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা ইমান উদ্দিন, জামেয়া মুবাশ্বিরিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাও সুহেল আহমদ কাজী, মুফতি আব্দুস ছুবহান, নুননগরী পীর সাহেব,   জানাব মুহিবুর রহমান প্রমুখ। সভাশেষে মুনাজাত পরিচালনা করেন হজরত মাও মইন উদ্দিন কাজী তেলিটিকরী। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বড়হাইলাকান্দি সিনিওর মাদ্রাসার শিক্ষক মাও আলা উদ্দিন,  হাফিজ মাশুক আহমদ, মাও জসিম উদ্দিন,  মাও আতিকুর রহমান প্রমুখ।

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে স্মরণ করলো কালাইন কংগ্রেস

আরটিএন, কালাইন, ০৮ সেপ্টেম্বর ঃ কালাইন ব্লক কংগ্রেস কমিটির উদ্যোগে ভারতরত্ন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির প্রয়াণে স্মৃতিচারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় রবিবার। ব্লক কার্যালয়ে সকাল ১১ ঘটিকায় ব্লক সভাপতি বিশাল সরকার প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবার পরিজনদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন । সভাপতি বিশাল জানান বাঙ্গালী জাতির গর্ভ ছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। প্রয়াতের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন প্রয়াতের মৃত্যুতে দেশের অফুরন্ত ক্ষতি হয়েছে বলে মত ব্যক্ত করেন তিনি । ব্লক সভাপতি প্রয়াত প্রাক্তন  রাষ্ট্রপতির কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন প্রণব মুখার্জী একজন দক্ষ রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। শিক্ষকতার পেশা থেকেই তার জীবনের যাত্রাপথ শুরু করে পরবর্তীতে রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে দেশের বিদেশমন্ত্রী,অর্থমন্ত্রী,
প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দায়ীত্ব সুনামের সহিত পালন করছেন  তিনি। বিশেষ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য অগ্রণী ভূমিকা ছিল প্রয়াত মুখার্জির। ব্লক কমিটির উপ-সভাপতি জাকির হোসেন খান প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন বাঙ্গালী জাতির অহংকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ছিলেন ভারতীয় রাজনীতির এক চানক্য। ইউপিএ সরকারের প্রথম কার্যকালে দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়ীত্বে থাকাকালে দেশের অর্থনীতির ব্যাপক সংস্কারের পাশাপাশি কৃষকদের সুবিধার্থে প্রায় ৬০ (ষাট) হাজার কোটি টাকার কৃষিঋণ মুকুব করেছিলেন প্রয়াত প্রণব মুখার্জী। সভায় উপস্থিত বিভিন্ন বক্তারা প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং প্রয়াতের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। সভায় প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান সহ পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন পূর্বক প্রয়াতের আত্মার চিরশান্তি কামনা করে দুই মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। তাছাড়া টাণ্টুর মাজারশরীফের প্রয়াত পীর আতাউর রহমান চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে কালাইন ব্লক কংগ্রেস কমিটির তরফে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয় এদিন। ব্লক সভাপতি বিশাল সরকারের পৌরোহিত্যে অনুষ্ট্তি সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্লক কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক সামছুল ইসলাম,সাধারণ সম্পাদক সাজাহান উদ্দিন, উপ-সভাপতি আছাদ উদ্দিন বড়ভূইয়া,ভৈরবপুর জিপির সভাপতি দীপণ রায়,কালাইন জিপির সভাপতি মৃদুল কান্তি রায়, মুহি উদ্দিন,মুজিবুর রহমান,মহেন্দ্র বৈষ্ণব সহ অন্যান্যরা।

Saturday, 5 September 2020

শাহসুফি হজরত ইব্রাহিম আলী কাটিগড়ী (রহঃ) এর প্রয়াণে গভীর শোক যুব আহলে সুন্নতের


আরটিএন,  কাটিগড়া, ১ সেপ্টেম্বরঃ- গ্রাম কাটিগড়ার সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীণ আলিমে দ্বীন হজরত মাও ইব্রাহিম আলী (রহঃ) এর প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করলো কাটিগড়া যুব আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত। এক বিবৃতিতে কাটিগড়া যুব আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের সভাপতি মাও সরফ উদ্দিন তালুকদার বলেন,  শাহসুফি হজরত মাওলানা ইব্রাহিম আলী (রহঃ)  গ্রাম কাটিগড়ার সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন বুজুর্গ ব্যক্তি ছিলেন। আজীবন  ছিলেন  প্রচারবিমুখ ।  আধ্যাত্মিক গুণ অর্জন করে   উচুমাপের আল্লাহ ওয়ালা হয়েছিলেন তিনি। তাঁর আধ্যাত্মিক গুরু ছিলেন উত্তর প্রদেশের প্রখ্যাত বুজুর্গ  হজরত আল্লামা ওয়াজিহ উদ্দিন রামপুরী (রহ)। এছাড়াও তিনি শামছুল উলামা হজরত আল্লামা ফুলতলী (রহঃ) এর সহচর ছিলেন তিনি।  গ্রাম কাটিগড়ার সবাই তাঁকে "কাটিগড়ার মৌলইছাব" বলে ডাকতো। বিপদেআপদে তিনিই ছিলেন এ অঞ্চলের ভরসাস্থল। কি হিন্দু, কি মুসলমান, সকলেই তাঁর দোয়া ও আর্শীবাদ নিতে ছুটতো "কাটিগড়ার মৌলইছাব" এর বাড়িতে। হাজারো গুণে গুণান্বিত হয়েও অতি সহজ-সরল জীবন যাপন করতেন তিনি। বৃদ্ধ বয়সেও অটোরিকশা নিয়েই কাটিগড়ার এ গ্রাম থেকে ও গ্রাম ঘুরে বেড়াতেন। কালাইন-কাটিগড়ার ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলিতে তিনিই থাকতেন সভাপতির আসনে।  তার সংক্ষিপ্ত বয়ান আর দোয়া মানুষের হৃদয়ে আত্মতৃপ্তি নিয়ে আসতো।  এক কথায় তিনিই ছিলেন কাটিগড়ার অভিভাবক। মাও সরফ বলেন, তিনি কতু উচু পর্যায়ের ওলি আল্লাহ ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া গেছে উনার নামাজে জানাজায়। লকডাউন সত্ত্বেও কয়েকহাজার মানুষের উপস্তিতি তাঁর জনপ্রিয়তার প্রমাণ করে।  কাটিগড়ী হুজুরের  চিরবিদায়ে গোটা কাটিগড়ায় যে শূন্যতার সৃষ্টি হলো তা কোনো দিনই পূরণ হবে না।  তিনি মরহুমের জান্নাতুল ফেরদৌস নছিব সহ পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সসহমর্মিতা জানান।

মাস্ক ও স্যানিটাইজেশনের খাতে বরাদ্দ প্রায় অর্ধ কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ কাটিগড়ায়



আরটিএন, কাটিগড়া , ৫ সেপ্টেম্বরঃ- মাস্ক বিতরণ ও সেনিটাইজ করার নামে বরাদ্দ লক্ষ লক্ষ টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠছে কাটিগড়ায়। অভিযোগ মতে,    জবকার্ড হোল্ডারদের  মধ্যে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ ও প্রত্যেক গাও পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, মন্দির-মসজিদ, হাটবাজার এবং জনবহুল এলাকা নিয়মিত  সেনিটাইজ করার জন্য বিভাগীয় তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়। এখাতে  চতুর্দশ অর্থ কমিশনের ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে প্রায় দু লক্ষ টাকা করে প্রত্যেক জিপিতে বরাদ্দ হয়। অভিযোগ মতে,  প্রত্যেক জিপিতে প্রায় দুই হাজার মাস্ক বিতরণ করার নির্দেশ থাকলেও বাস্তবে বড়জোর পাঁচশো-র মতো   মাস্ক বিতরণ করা হয়। বিভিন্ন জনবহুল এলাকা ও প্রতিষ্ঠানগুলি নিয়মিত সেনিটাইজ করার নির্দেশ থাকলেও বাস্তবে জিপির মাধ্যমে কোনো সেনিটাইজ করা হয় নি। কাটিগড়া দমকল বাহিনী কর্তৃক কিছু কিছু স্থানে সেনিটাইজেশন করা হয়েছে লকডাউন সময়ে। দমকল বাহিনীর সেনিটাইজ প্রক্রিয়া কে জিপি ভিত্তিক সেনিটাইজেশন প্রক্রিয়া বলে দেখানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। নামমাত্র মাক্স যেগুলা বিলিয়ে  দেওয়া হয়েছে তাও অতি নিম্নমানের।
  দু তিনটি জিপি ব্যতিত কাটিগড়া ও কালাইন উন্নয়ন খণ্ডের পঁচিশটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ছবি প্রায় একই। সংশ্লিষ্ট জিপি সভাপতি ও সচিবরা মিলে এই মোটা অংকের টাকা উদাও করেছেন বলে অভিযোগ সচেতন জিপি নাগরিকদের । তাদের মতে, জিপির জনবহুল এলাকা নিয়মিত সেনিটাইজেশন  না করার ফলে অতিমারী করুণা ভাইরাস আজ কমুউনিটি ট্রেন্সমিশন হয়েছে। গ্রাম কাটিগড়ার বিভিন্ন এলাকার করুণায় আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। নিয়মিত সেনিটাইজেশন করা হলে আজ এই অবস্থা হতো না।  সরকার করুণা ভাইরাসের থাবা থেকে আমজনতাকে রক্ষা করতে  একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে। লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করছে করুণা খাতে। আর এই সুযোগে একদল স্বার্থান্বেষী লোক উটেপড়ে লেগেছে তাদের উদরপূর্তি করারজন্য৷ কাটিগড়া-কালাইনে মাস্ক বিতরণ ও সেনিটাইজেশনের জন্য বরাদ্দ সমষ্টির  পঁচিশ জিপি মিলে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এই বৃহৎ পরিমাণ টাকা নয়ছয় করে পকেটস্থ করার বিষয়টি তদন্ত করে বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন আমজনগণ।   দুর্নীতিগ্রস্থ সংশ্লিষ্টদের   বিচারের আওতায় এনে এই মহামারীর সময় দুর্নীতিতে লিপ্ত হওয়ার কড়া শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

ফের নক্ষত্র পতন, টান্টুর পীর সাহেবের ইন্তেকালে শোক বিভিন্ন মহলে



আরটিএন, হাইলাকান্দি, ৫ সেপ্টেম্বরঃ- ঐতিহাসিক টান্টু দরবার শরীফের বর্তমান 
পীর সাহেব শাহসুফি  আলহাজ্ব হযরত মাও আতাউর রহমান চৌধুরীর চিরবিদায়ে গোটা বরাক উপত্যকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রয়াত পীর সাহেবের মৃত্যু সংবাদে বিভিন্ন মহল থেকে শোকবার্তা দেওয়া হয়েছে। শোকবার্তা সহ পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন উজানডিহির পীর সাহেব শাহসুফি সায়্যিদ জুনাইদ আহমদ মদনী, ভারত লতিফিয়া দারুল ক্বিরাত সমিতির সভাপতি শাহসুফি সায়্যিদ মুস্তাক আহমদ মদনী।
যুব আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের মুখ্য উপদেষ্টা  হজরত মাও আনোয়ার উদ্দিন তালুকদার শোকবার্তায় বলেন,  প্রয়াত টান্টুর  পীর সাহেব ছিলেন সকল জাতি গোষ্ঠী মানুষের আপনজন। তাঁর হাসিমুখ আর অমায়িক ব্যবহার বার বার ভক্তদের মনে ভেসে উটবে। তাঁর প্রয়াণে আমরা একজন অভিভাবক কে হারালাম।   নর্থ ইষ্ট লতিফিয়া ক্বারী এসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক হজরত মাও আজিজুর রহমান লতিফি এক শোকবার্তায় জানান,   টান্টুর পীর সাহেব শাহসুফি আলহাজ্ব আতাউর রহমান চৌধুরীর  অকাল ইন্তেকালে বরাকের তাসাউফ জগতে বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হল। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বরাকের সকল মানুষের এক নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্হল আজ আমাদের হাতছাড়া হয়ে গেল।   উত্তর পূর্বাঞ্চল যুব আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের সাধারণ সম্পাদক হজরত মাও আব্দুল আহাদ হানাফি বলেন,  একে একে বরাকের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বরা আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন না ফেরার দেশে। এটা আমাদের জন্য অশুভ সংকেত। তাঁর অবর্তমানে বরাকের আধ্যাত্মিক জগতে অপূরণীয় ক্ষতি হলো, যা কোনো দিন পূরণ হবে না। 
কাছাড় জেলা যুব আহলে সুন্নত, বিশিষ্ট সমাজসেবী কাটিগড়া ইউডিএফের নেতা খলিল উদ্দিন মজুমদার,  কংগ্রেস নেতা দাইয়ান হুসেন, রাহুল আলম লস্কর সহ একাধিক ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন সংস্থা-সংগঠন   আলহাজ্ব আতাউর রহমান চৌধুরী পীর সাহেব টান্টুর প্রয়াতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তারা মরহুমের আত্মার চিরশান্তি সহ পরিবারের প্রতি সমবেদনা  জানিয়েছেন।

Thursday, 27 August 2020

আহলে বায়তের প্রতি মুহাব্বাত ঈমানের বহিঃপ্রকাশ'--হযরত আল্লামা নজমুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী

'আহলে বায়তের প্রতি মুহাব্বাত ঈমানের বহিঃপ্রকাশ'
--হযরত আল্লামা নজমুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী

বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদরাসার  অধ্যক্ষ (অব.) হযরত আল্লামা নজমুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী বলেছেন মহাপাপী এজিদের প্রতি লানত এবং আহলে বায়তের প্রতি মুহাব্বাত প্রদর্শন ঈমানের বহি:প্রকাশ। প্রকৃত মুমিন ব্যক্তি কখনো এজিদকে সমর্থন করতে পারেনা। কেননা সে আহলে বায়তের প্রতি ইতিহাসের জঘন্যতম নৃশংস কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আহলে বায়তের প্রতি চরম বিদ্বেষের পরিচয় দিয়েছে,কাবা শরীফে আগুন জ্বালিয়েছে,পবিত্র মদীনা শরীফে তিন দিন পর্যন্ত লুণ্ঠন,সাহাবিদের উপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ এমনকি ঈমানদার নারীদের ইজ্জত হরণ করিয়েছে।এজন্য সে আল্লাহ,রাসুল এবং মুমিনের লানতযোগ্য, নিষ্টুর, মহাপাপী হিসেবে ধিকৃত হয়ে থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত।

তিনি আরো বলেন-এজিদের প্রেতাত্নাদের খপ্পর থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। নচেৎ নরকের পথিক হওয়ার আশংকা থাকবে। 
 
২০১৬ সালের ১০ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত আনজুমানে তালামিযে ইসলামিয়া কাজলসার ইউপি শাখার উদ্দোগে আটগ্রামে 'আশূরার তাৎপর্য শীর্ষক' সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।

Tuesday, 25 August 2020

দলীল গ্রহণে সহীহ হাদীস : একটি পর্যালোচনা -আল্লামা মুফতী গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী

দলীল গ্রহণে সহীহ হাদীস : একটি পর্যালোচনা 
-আল্লামা মুফতী গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী

সহীহ শব্দের শাব্দিক অর্থ শুদ্ধ বা সুস্থ, যার বিপরীত ‘সাকীম’ বা অসুস্থ। কিন্তু মুহাদ্দিসীনগণের নিকট সহীহ একটি পরিভাষা। এটি হাদীসের সর্বোচ্চ স্তর। এছাড়াও হাদীসের বিভিন্ন পরিভাষা রয়েছে। যেমন হাসান, গরীব, যঈফ ইত্যাদি। কোন মুহাদ্দিসই সহীহ ছাড়া অন্যান্য স্তরকে বাতিল বলেননি। বিভিন্ন মুহাদ্দিসীনের নিকট হাদীস সহীহ হওয়ার জন্য বিভিন্ন মাপকাঠি রয়েছে। তাই একজন মুহাদ্দিসের মাপকাঠিতে কোন হাদীস সহীহ না হলেও অন্য মুহাদ্দিসের শর্তে তা সহীহ হতে পারে এবং উসুলে হাদীসের পরিভাষায় সহীহ নয় এমন সকল হাদীসই প্রত্যাখ্যানযোগ্য নয়। যেমন সহীহ এর সকল শর্ত পূরণ না করলে কোন হাদীস হাসান হতে পারে। এটিও বিশুদ্ধ হাদীসের একটি প্রকার। তাই কেবল সহীহ হাদীস দিয়ে দলীল তলব করাও এক প্রকার ভুল। সিহাহ সিত্তার কোনো সংকলক কোনো হাদীসকে সহীহ বলেছেন। কিন্তু ইমাম বুখারী (র.)-এর মাপকাঠিতে তা সহীহ এর পর্যায়ে পড়েনি বলে তিনি তাঁর কিতাবে তা সংকলন করেননি। তাই বলে এরূপ হাদীস আমলযোগ্য নয় বা দলীল হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না- এমন মন্তব্য করা উসূলে হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক। বর্তমানে গায়র মুকল্লিদগণ একটি বিষয় বেশি বেশি বলে থাকেন যে, দলীল গ্রহণের জন্য চাই সহীহ হাদীস। কোন গায়র সহীহ (হাসান, যঈফ স্তরের) হাদীস দিয়ে দলীল প্রদান করা যাবে না। কারণ তা গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদেও বক্তব্য হলো, যদি সর্বক্ষেত্রে সহীহ হাদীস দিয়ে দলীল প্রদান করতে হয় তাহলে হাদীস সহীহ কিংবা দুর্বল হওয়ার বিষয়টিও মারফূ হাদীস দিয়ে প্রমাণ করতে হবে। লা-মাযহাবীদের কাছে প্রশ্ন, তারা কি সারা জীবন চেষ্টা করে কোন হাদীস অর্থাৎ রাসূলে পাক (সা. )-এর উক্তি কিংবা সাহাবায়ে কিরামের উক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে পারবেন যে, কোন হাদীসটি সহীহ, আর কোনটি সহীহ নয়? নিশ্চয় তারা পারবেন না।
কোন হাদীস তো এমনি এমনি সহীহ বা যঈফ হয় না। হাদীসের মান নির্ধারিত হয় বর্ণনাকারীর অবস্থার দ্বারা। রাবী বা বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য হলে হাদীস সহীহ, বর্ণনাকারীর মধ্যে ত্রুটি থাকলে হাদীস যঈফ ইত্যাদি হয়ে থাকে। আর রাবীদের বর্ণনা হাদীসে নেই। এটি উসুলে হাদীসের আওতাধীন আলাদা একটি বিষয়। যার নাম হচ্ছে اسماء الرجال, এটি শুরু হয়েছে হাদীস সংকলনের সময় থেকে। তাবিঈগণের শেষ যুগে তথা ১৫০ হিজরীর দিকে এসে আইম্মায়ে হাদীস রাবীগণের তা’দীল ও তাজরীহ সম্পর্কে পর্যালোচনা করেন। এদের মধ্যে রয়েছেন- আল-আ’মাশ (র.), শু’বা (র.) মা’মার (র.), হিশাম আদ-দাস্তাওয়াঈ (র.), আওযাঈ (র.) প্রমূখ। এরা সকলেই ১৫০ হিজরীর পরের লোক। তাঁদের লিখিত অমর গ্রন্থসমূহের উপর ভিত্তি করেই হাদীসের মানদ- নিরূপন করা হয় বা হয়েছে। সহীহ, হাসান, গরীব, যঈফ, মুতাওয়াতির, মাশহুর ইত্যকার পরিভাষাও তাঁদের উদ্ভাবিত। লা-মাযহাবী আহলে হাদীস নামধারীগণ সহীহ হাদীস ছাড়া অন্য কোনো হাদীস মানেন না। অথচ হাদীস অবতরণের পথ রুদ্ধ হওয়ার পর অর্থাৎ সায়্যিদুল মুরসালীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তিকালের প্রায় দুই শত বছর পর যে পরিভাষা উদ্ভাবিত হয়েছে তা মানেন এবং তা দিয়ে মুহাদ্দিসীনে কিরাম হাদীসের যে মানদ- বিচার করেন তাও মানেন। এটা কি তাকলীদ নয়? নাকি ১২শ বছর আগের হাদীস বর্ণনাকারীগণের সাথে তাদের চলাফেরা, উঠাবসা হয়েছে যার ফলে তারা রাবীগণের নির্ভরযোগ্যতা নিজে যাচাই করেছেন? পাঠকগণ তাদের আত্মপ্রবঞ্চনার বিচার করবেন।
প্রথমেই আমাদের জেনে রাখা অত্যাবশ্যক যে হাদীস বিশারদগণ হাদীসকে প্রধানত চারটি ভাগে বিভক্ত করেছেন। আর তা হলো সহীহ, হাসান, যঈফ ও মাওযূ।
লা-মাযহাবীদের কেউ কেউ যঈফ ও মাওযূকে একত্রিত করে ফেলেন। অথচ মুহাদ্দিসীনে কিরামের অভিমত অনুযায়ী যে সকল হাদীসে সহীহ ও হাসান হওয়ার কোন একটি শর্তও পাওয়া যায় না তাকে যঈফ হাদীস বলা হয়। কিন্তু কোন হাদীসকে মাওযু বলা যাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তাতে বর্ণনাকারীর মিথ্যা বলা প্রমাণিত না হবে। সুতরাং যঈফ হাদীসকে মাওযূ বলা হাদীস বিশারদদের পরিভাষা সম্পর্কে অজ্ঞতারই পরিচায়ক। আর যঈফ হাদীসকে মিথ্যা, অনর্থক ইত্যাদি বলে তার উপর আমলকে হারাম মনে করা ইলমে হাদীসের সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞতারই পরিচয় বহন করে।
বুখারী শরীফ দিয়ে দলীল গ্রহণ
মুকাল্লিদীন হানাফীগণ যখন নিজেদের অবস্থানের পক্ষে কোন হাদীস প্রদর্শন করেন তখন গায়র মুকাল্লিদীনগণ প্রশ্ন করেন যে, ঐ হাদীস কি বুখারী শরীফে আছে? অথচ তাদেরও একথা জানা আছে যে, সকল মাসআলার হাদীস বুখারী শরীফে নেই। এমতাবস্থায় বুখারী শরীফের হাদীস দেখানোর যিম্মা না নিয়ে আমাদের প্রশ্ন, লা-মাযহাবীগণ এরূপ কোনো আয়াত বা হাদীস কি দেখাতে পারবেন, যাতে লেখা আছে যে, হাদীস দ্বারা দলীল দিতে হলে তা কেবল বুখারী শরীফে থাকতে হবে?
দ্বিতীয়ত: তাদের নিজেদের আমলকৃত সকল মাসআলার দলীল তারা বুখারী শরীফে দেখাতে পারবেন কি? যদি পারেন তাহলে আমাদের কাছে হাদীস তলব করুন।
অবশ্য এক্ষেত্রে বাস্তবতা হলো, তাদের আমলকৃত অনেক মাসআলার দলীল বুখারী শরীফে নেই। উপরন্তু তারা অনেক ক্ষেত্রে বুখারী শরীফে বর্ণিত অনেক হাদীসের উপর আমলই করে না। যার আলোচনা সামনে রয়েছে।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا.
‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ কর। আর তিনি যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাক।’’ কিন্তু কুরআন হাদীসের কোথাও কি একথা লিখিত আছে যে,وَمَا آتَاكُمُ البخاري فَخُذُوهُ ‘‘বুখারী যা নিয়ে এসেছেন তোমরা কেবল তা-ই মেনে চল।’’ যদি কুরআন হাদীসে এরূপ কোন কথা না থাকে তাহলে দলীল গ্রহণে শুধু বুখারী কিংবা বুখারী-মুসলিমের শর্তারোপ করা কিভাবে শুদ্ধ হয়?
তাছাড়া اصح الكتب بعد كتاب الله الصحيح البخاري এ কথা গায়র মুকাল্লিদগণও বিশ্বাস করেন। তাদের কাছে প্রশ্ন, কুরআন হাদীসে এরূপ কোন বর্ণনা কি আছে? তাহলে কিসের ভিত্তিতে তারা এটা মানেন? উপরোক্ত মন্তব্যের উপর ইজমা তো পরবর্তী ইমামগণের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে।
লক্ষ্যণীয় যে, ইমাম বুখারী (র.)-এর জন্ম ১৯৪ হিজরীতে এবং বুখারী শরীফ সংকলন সমাপ্ত হয় ২৩৩ হিজরীতে এবং পরবর্তীতে চার মাযহাবের উপর ইজমাও সংঘটিত হয়। তাহলে প্রশ্ন হল সকল আমল যদি বুখারী শরীফ দেখেই করতে হয় তা হলে বুখারী সংকলনের পূর্ববর্তী প্রায় সোয়া ২০০ বছর ইসলামী শরীআতের উপর কিভাবে আমল করা হলো? আর তখন বুখারী শরীফ না থাকায় এর উপর যারা আমল করে যেতে পারেননি তাদের অবস্থা কি হবে?
প্রকাশ থাকে যে, ইমাম বুখারী (র.)-এর নিজের উক্তি অনুযায়ী তাঁর এক লক্ষ সহীহ হাদীস মুখস্থ ছিল। তন্মধ্যে বুখারী শরীফে তাকরার ছাড়া প্রায় ৪ হাজার হাদীস লিপিবদ্ধ হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন হলো, বাকী ৯৬ হাজার সহীহ হাদীস কেবল বুখারী শরীফে সংকলিত না হওয়ায় কি আমলের অযোগ্য হয়ে গেল? ঐ হাদীসসমূহ অন্য কিতাবে সংকলিত হলে কি তার উপর আমল করা যাবে না?
বাস্তব কথা হলো, আহলে হাদীস নামধারী লা-মাযহাবী ঐ সকল লোকদের নিজেদেরই বুখারী শরীফের উপর আমল নেই। আমলতো দূরের কথা, তাদের ইমাম বুখারী (র.)-এর উপর পুরোপুরি আস্থাও নেই। ইমাম বুখারী (র.) সংকলিত অনেক হাদীস, তাঁর অনেক ইজতিহাদ ও আমলের উপর তাদের আমল নেই। প্রমাণস্বরূপ আলোচ্য পুস্তকে অনেকগুলো মাসআলা দেখানো হয়েছে যাতে প্রমাণ হয় যে গায়র মুকাল্লিদগণ ইমাম বুখারী (র.)-এর আকীদা, আমল ও ইজতিহাদের সাথে একমত নয়।
‘সহীহ হাদীসই আমার মাযহাব’ উক্তির সঠিক ব্যাখ্যা
ইমাম আবূ হানীফা (র.) সহ কোনো কোনো ইমামের একটি প্রসিদ্ধ উক্তি-
إذا صح الحديث فهو مذهبي অর্থাৎ সহীহ হাদীসই আমার মাযহাব।
আহলে হাদীস, লামাযহাবী, সালাফীগণ উক্ত ‘সহীহ হাদীসই আমার মাযহাব’ কথাটি দ্বারা বুঝাতে চান মাযহাবের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোন সহীহ হাদীস পাওয়া গেলে সহীহ হাদীসের উপর আমল করে মাযহাব ত্যাগ করাই একান্ত কর্তব্য। এটি তাদের অপব্যাখ্যা ছাড়া আর কিছু নয়।
সহীহ হওয়া সত্ত্বেও সব আয়াত ও হাদীসের উপর আমল করা যায় না
ত্রিশ পারা কুরআন শরীফ সন্দেহাতীতভাবে মুতাওয়াতির বর্ণনা দ্বারা লিপিবদ্ধ। এতে কোন ঈমানদারের সন্দেহ করার উপায় নেই। এখন প্রশ্ন হলো, লা-মাযহাবীরা কুরআন শরীফের প্রত্যেক আয়াতের উপর আমল করতে পারবেন কি?
নমুনাস্বরূপ কুরআন শরীফের কয়েকটি আয়াত নি¤েœ পেশ করা হলো-
১. এবং খর্জুর বৃক্ষের ফল ও আঙ্গুর হতে তোমরা মাদক ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাক। (সূরা নাহল, আয়াত-৬৭)
২. লোকে তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, বল উভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ এবং মানুষের জন্য উপকারও; কিন্তু এদের পাপ উপকার অপেক্ষা অধিক। (সূরা বাকারা, আয়াত-২১৯)
৩. হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মুর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক সব ঘৃণ্য বস্তু শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা মায়িদা, আয়াত-৯০)
উপরে উল্লেখিত তিনটি আয়াতই সন্দেহাতীতভাবে মুতাওয়াতির বর্ণনা দ্বারা লিপিবদ্ধ। অথচ কেউ যদি উপরের প্রথমোক্ত দুটি আয়াতের উপর আমল করে তবে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। আমল করতে হবে তৃতীয় আয়াতের উপর। কুরআনে করীমে এরকম আরো অনেক আয়াত রয়েছে যা কুরআনের আয়াত হওয়া সত্ত্বেও আমল করা যায় না। কারণ এগুলো রহিত হয়ে গেছে। এতে প্রমাণিত হলো যে কুরআন শরীফে অনেক আয়াত ও অনুরূপভাবে অসংখ্য হাদীস সহীহ হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন কারণে এর উপর আমল করা যায় না।
ইবনে তাইমিয়ার বক্তব্য
শায়খ ইবনে তাইমিয়া যাকে লা-মাযহাবীরা ইমাম মনে করে এ প্রসঙ্গে তার একটি বক্তব্য শায়খুল হাদীস মাওলানা যাকারিয়া ছাহেব তার রচিত “শরীআত ও ত্বরীকত কা তালাযুম” গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, “আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (র.) “রফউল মালাম” নামক কিতাবে লিখেছেন যে, দশ কারণে ইমামগণ কোন হাদীস ছেড়ে দিতে পারেন। ১. ইমামের কাছে হাদীস পৌঁছেছে তবে তা প্রমাণিত হয়নি। ২. খবরে ওয়াহিদ গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য কিছু পূর্বশর্ত ছিল যা তিনি এ হাদীসে পাননি। ৩. ঐ হাদীসের প্রতিদ্বন্দ্বী হাদীসও তার কাছে পৌঁছেছিল যার কারণে বাধ্য হয়ে তিনি ঐ হাদীসের ভিন্ন কোন ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
এভাবে দশটি কারণ উল্লেখ করার পর তিনি বলেন, এগুলো তো খুব স্পষ্ট কারণ। অনেক হাদীসের ক্ষেত্রে এটাও সম্ভব যে, ইমামের কাছে তা গ্রহণ না করার এমন কোন কারণ রয়েছে যে সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণাই নেই। কারণ ইলমের ময়দান অনেক বিস্তৃত। আলিমদের সিনার মধ্যে এমন অনেক রহস্য লুকিয়ে রয়েছে যে সম্পর্কে আমাদের কোন অবগতি নেই। আলিমগণ কখনও তার দাবির সপক্ষে দলীল পেশ করেন আবার কখনো করেন না। যদি করেন তাহলে তা আবার কখনো আমাদের কাছে পৌঁছে আবার কখনো পৌঁছে না। আর পৌঁছলেও তা কখনো আমাদের বুঝে আসে আবার কখনো বুঝে আসে না। হাদীস সম্পর্কে যাদের ধারণা রয়েছে তারা সবাই জানেন যে, চার ইমামের নিকট অনেক সঠিক ও স্পষ্ট অর্থবহ হাদীস পৌঁছেছিল। কিন্তু অন্য কোন শক্তিশালী দলীলের কারণে তারা সেগুলোকে গ্রহণ করেননি।” (শরীআত ও ত্বরীকত কা তালাযুম, পৃষ্ঠা ৯৭)
উক্ত কিতাবে (শরীআত ও তরীকত কা তালাযুম) তিনি আরো লিখেছেন- বজলুল মজহুদের ৫খ-, ১৩৭ পৃষ্ঠায় باب السارق يسرق مرارا -এর মধ্যে একাধিক বার চুরি করলে চোরকে হত্যা করা হবে এ মর্মের অনেকগুলো হাদীস আনা হয়েছে। পরে হযরত শায়খ ইবনুল কাইউম (র.) থেকে এ কথা বর্ণনা করা হয়েছে যে, হযরত ইমাম আহমদ (র.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনি এসব হাদীস গ্রহণ করেননি কেন? তিনি উত্তর দিলেন, হযরত উসমান (রা.)-এর এক হাদীসের উপর ভিত্তি করে, যার মধ্যে বলা হয়েছে, কোন মুসলমানকে শুধু তিন অবস্থায় কতল করা জায়িয আছে, আর তার মধ্যে চুরি করার কথা নেই। বজলুল মজহুদের মধ্যে এ ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনা করা হয়েছে। আমার তো এখানে এটা বলা উদ্দেশ্য যে, চোরকে হত্যা করা সংক্রান্ত হাদীস হযরত ইমাম আহমদ (র.)-এর কাছে পৌঁছেছে কিন্তু তিনি এর উপর আমল করেননি। পানি সংক্রান্ত ব্যাপারে হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র.)-এর মাযহাব দুই কুল্লা ওয়ালা। অথচ বি’রে বুদাআ’র হাদীসকে তিনি সঠিক বলেছেন। যেমন মুগনী কিতাবের ১ম খ-, ২৫ পৃষ্ঠায় রয়েছে। (শরীআত ও ত্বরীকত কা তালাযুম, পৃষ্ঠা ৯৬)
আল্লামা শায়খ হাবীব আহমদ আল-কায়রাওয়ানী (র.) বলেন- সহীহ হাদীসই আমার মাযহাব এ বক্তব্যের বাস্তবতা বা মূল অর্থ হল- (ইমামগণ বলেন, আমাদের প্রদত্ত প্রতিটি (ফিকহী সমাধান বা মাসআলার) দলীল আমাদের কথা নয়, বরং হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণীই মূল দলীল।
অতএব, তোমরা এ কথা ধারণা কর না যে, আমাদের কথা স্বতন্ত্র দলীল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথার বিপরীত আমাদের কোন কথা হলে আমরা আল্লাহ তাআলার দরবারে দায়মুক্তি ঘোষনা করছি। তবে এ বাস্তবতা এটি আবশ্যক করে না যে, কোন ব্যক্তি যে কোন হাদীসকে সহীহ বলবে আর সেটিই ইমাম শাফিঈ (র.)-এর মাযহাব হয়ে যাবে। (ইলাউস সুনান, আল্লামা শায়খ হাবীব আহমদ আল-কায়রাওয়ানী, দ্বিতীয় মুকাদ্দামাহ, পৃষ্ঠা-৬৪)
ইবনে আবিদীন শামী (র.) তাঁর রদ্দুল মুহতার কিতাবে ইমাম শা’রানী (র.) থেকে ইমামগণের উক্ত বাক্য (সহীহ হাদীসই আমার মাযহাব) উল্লেখ করে বলেন- এটি কোন আলিমের কাছে অপ্রকাশ্য নয় যে, ইমামগণের এ নসীহত ঐ সকল ব্যক্তিদের জন্য যারা এ নসীহতের যোগ্য। অর্থাৎ যারা নুসুস তথা কুরআন ও হাদীসভা-ারের উপর ব্যাপক গবেষণার সামর্থ রাখেন। মানসূখ বা রহিত হয়ে যাওয়া হাদীসগুলো সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন এবং যে হাদীসগুলো আমলযোগ্য তাও তাদের নখদর্পনে থাকে। (রদ্দুল মুহতার, ১ম খ-, ৬৭ পৃষ্ঠা)
ইবনে হাজার আসকালানী (র.) বলেন- এমন বহু হাদীস রয়েছে যা উলূমে হাদীসের শর্তানুযায়ী সহীহ; কিন্তু সে হাদীস রহিত হয়ে গেছে। (ফতহুল বারী, ১ম খ-, ৪১৩ পৃষ্ঠা)
কেবল সহীহ নয় বরং আমলযোগ্য হাদীসই গ্রহণীয়
ফাকীহুল ইরাক ইমাম ইবরাহীম নাখাঈ (র.) বলেন, আমি হাদীস শ্রবণ করি অতঃপর দেখি কোন হাদীস আমলযোগ্য আর কোন হাদীস আমলযোগ্য নয়। যেগুলো আমলযোগ্য সেগুলো আমি গ্রহণ করি। আর বাকীগুলো ছেড়ে দেই। (শরহু ইলালিত তিরমিযী , ১ম খ-, ৪১৩ পৃষ্ঠা)
ইমামুল মুজতাহিদীন ইবনে আবী লায়লা (র.) বলেন, কোন ব্যক্তি ফিকহুল হাদীস বা হাদীসের ফিকহ অর্জন করতে পারে না, যতক্ষণ না সে হাদীসভা-ারের কিছু গ্রহণ করে ও কিছু ছেড়ে দেয়। অর্থাৎ আমলযোগ্য হাদীসগুলো গ্রহণ করে ও যেগুলো আমলযোগ্য নয় সেগুলো ছেড়ে দেয়।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওহাব (র.) বলেন, যদি মালিক ইবনে আনাস ও লাইস ইবনে সা’আদ (রা.) না থাকত তাহলে আমি হালাক বা ধংস হয়ে যেতাম। কারণ আমি ধারণা করতাম হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যে সব হাদীস বর্ণিত হয়েছে সবই আমলযোগ্য। অপর বণর্নায় এসেছে, হাদীসের ইখতিলাফের কারণে আমি পথভ্রষ্ট হয়ে যেতাম। (ইবনে রজব হাম্বলী, শরহু ইলালিত তিরমিযী, ১ম খ-, ৪১৩ পৃষ্ঠা; ইবনে আবি হাতিম, মুকাদ্দামাতুল জারহি ওয়াত তা’দীল, পৃষ্ঠা- ২২)
কাযী ইয়ায (র.) আব্দুল্লাহ ইবনে ওহাব (র.)-এর কথাটি এভাবে বর্ণনা করেছেন: আব্দুল্লাহ ইবনে ওহাব (র.) বলেন, যদি মালিক ইবনে আনাস ও লাইস ইবনে সা‘আদ না থাকত তাহলে আমি পথভ্রষ্ট হয়ে যেতাম। আব্দুল্লাহ ইবনে ওহাব (র.) এ কথা বললে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো আপনি পথভ্রষ্ট হয়ে যেতেন কেন?
তিনি উত্তরে বলেন, আমি প্রচুর হাদীস সংকলন করেছিলাম। হাদীসের আধিক্য আমাকে দিশেহারা করে তোলে, তখন আমি উক্ত হাদীসগুলো ইমাম মালিক ও ইমাম লাইস (র.)-এর নিকট পেশ করি। তারা আমাকে বলেন তুমি এই এই হাদীস গ্রহণ কর এবং এই হাদীস ত্যাগ কর (তারতীবুল মাদারিক, খ–২, পৃষ্ঠা-৪১৭)
লা-মাযহাবীদের জন্য ইমাম মালিক (র.)-এর একটি উপযুক্ত জবাব
ইমাম শাফিঈ (র.) বলেন, ইমাম মালিক (র.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো ইবনে উয়াইনার নিকট যুহুরী (র.) থেকে অনেক হাদীস রয়েছে সে হাদীসগুলো তো আপনার নিকট দেখি না।
উত্তরে ইমাম মালিক (র.) বলেন, যে সকল হাদীস আমি সংকলন করেছি তার সবই যদি আমি বর্ণনা করি তাহলে আমি মানুষদের পথভ্রষ্ট করে দিব। (খতীব বাগদাদী (র.) ‘আল জামি’উ লি আখলাকির রাবি ওয়া আদাবিস সামি’ খ–২, পৃষ্ঠা-১০৯)
যে হাদীসের উপর ইমামদের আমল নেই তার হুকুম
ইমাম যাহাবী (র.) তাঁর ‘সিয়ারু আলামিন নুবালা’ কিতাবে বলেন, যে হাদীস গ্রহন করা থেকে ইমামগণ বিরত থেকেছেন উক্ত হাদীস অনুযায়ী আমল করা জায়িয নেই, যদিও হাদীসটি সহীহ হয় না কেন। (ইমাম যাহাবী (র.), সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, খ–১৬, পৃষ্ঠা-৪০৪)
ইবনে রজব হাম্বলী (র.)-এর দৃষ্টিভঙ্গি
হাফিয ইবনে রজব হাম্বলী (র.) বলেন, হাদীসের ইমামগণ ঐ সকল সহীহ্ হাদীসের অনুসরণ করেছেন, যে হাদীসগুলো সাহাবাগণের নিকট ও পরবর্তী ইমামগণের নিকট আমলযোগ্য ছিল, অথবা তাদের কোন এক দলের নিকট আমলযোগ্য ছিল। এজন্যে ইমামগণ কোন হাদীসকে বর্জন করলে উক্ত হাদীসের উপর আমল করা জায়িয নেই। কেননা তারা উক্ত হাদীসকে এ কথা জেনেই বর্জন করেছেন যে, উক্ত হাদীসের উপর আমল করা হবে না। (فضل علم السلف علي الخلف পৃষ্ঠা-৯, সূত্র: আসারুল হাদীস, পৃষ্ঠা-৭৮)
হাদীসের উপর আমল করতে হলে কি জানতে হয়
হাদীসের উপর আমল করতে হলে কি জানতে হয় এ প্রসঙ্গে শায়খুল হাদীস আল্লামা যাকারিয়া সাহেব তদীয় ‘শরীআত ও ত্বরীকত কা তালাযুম’’ পুস্তকে একটি সুন্দর আলোচনা করেছেন। তিনি লিখেছেন- হাদীসের উপর আমল করার জন্য উসূলে হাদীস জানা থাকা জরুরী। নমুনাস্বরূপ কিছু উল্লেখ করা হল। এগুলো ছাড়াও হাফিয ইবনে হাজার (র.) যে কয়েকটি প্রকার জানা জরুরী বলেছেন তা হলো: ১. হাদীসে মাকলূব ২. হাদীসে মদ্বতারাব ৩. হাদীসে মুস্হাফ ৪. হাদীসে মুহাররাফ ৫. হাদীসে মারফু ৬. হাদীসে মাকতু ৭. হাদীসে মুসনাদ ৮. হাদীস আল উলূউল মুতলাক ৯. হাদীসে আল উলূউন নাসাবী ১০. হাদীস আল মুয়াফাকা ১১. হাদীসে বদলে মুসাওয়াত ১২. হাদীসে মুসাফাহা ১৩. হাদীসে নুযুলে আকরান ১৪. হাদীসে মুদাব্বাজ ১৫. হাদীসে রিওয়ায়াতুল আকাবির আনিল আসাগির ১৬. হাদীসে আস’সাবিক ১৭. হাদীসে আল’লাহিক ১৮. হাদীসে মুসালসাল ১৯. হাদীসে মুত্তাফাক ২০. হাদীসে মুফতারাক ২১. হাদীসে মুতালাফ ২২. হাদীসে মুখতালাফ ২৩. হাদীসে মুতাশাবিহ।
হাদীস বুঝার জন্য এতটুকই যথেষ্ট নয় যে, হাদীসের অনুবাদ পড়ে মুহাদ্দিস হয়ে যাবে এবং হাদীস দ্বারা মাসআলা বের করা শুরু করে দিবে। হাফিয ইবনে হাজার (র.) তার “নুখবাতুল ফিক্র” নামক কিতাবে একথাও লিখেছেন যে, এই সংক্ষিপ্ত কিতাবে এ বিষয়ের আলোচনা সম্ভব নয়। এর জন্য অনেক বড় কিতাবের প্রয়োজন। সুতরাং কোন হাদীসের কিতাবের অনুবাদ পড়ে নেয়া কিংবা কোন ফাযায়িলের কিতাব দেখে নেয়াই যথেষ্ট নয়। মুহাদ্দিস হওয়া অনেক কঠিন কাজ। তেমনিভাবে কুরআন পাকের অনুবাদ পড়ে নিজেকে কুরআন পাকের প-িত মনে করাও আহাম্মকী ও বোকামী। কুরআন বুঝার জন্য শুধু অনুবাদ পড়াই যথেষ্ট নয়। কুরআন বিষয়ক বিশদ ইল্ম হাসিল করার পূর্বে নিজেকে কুরআনের গবেষক মনে করলে মারাত্মক ভুলের মধ্যে পড়ে যেতে হয়।
আহলে হাদীসের জনৈক ব্যক্তির আমল ছিল, সে ইস্তিঞ্জা করার পর বিতির নামায পড়ত। কেউ তাকে প্রশ্ন করল, তুমি এটা কিসের নামায পড়? সে উত্তর দিল, হাদীসে আছে- من استجمر فليوتر অর্থাৎ ‘যে ব্যক্তি ইস্তিঞ্জা করবে তার বিতির পড়া উচিত।’ অথচ হাদীসের অর্থ হল, যে ব্যক্তি ইস্তিঞ্জা করবে তার জন্য বে-জোড় সংখ্যক ঢিলা ব্যবহার করা উচিত। এখানে সে বেজোড় সংখ্যা ঢিলার কথা বুঝতে না পেরে বে-জোড় রাকাত নামাযের কথা বুঝতে পেরেছে, তথা বিতিরের নামাযের অর্থ বুঝেছে।
তেমনিভাবে এক লোক তার কূপের পানি অন্য লোকের ক্ষেতের জন্য দিত না, কঠোরভাবে সে এতে বাঁধা দিতো। সে এর কারণ বলত হাদীসে আছে,لايسقى احدكم مائه زرع غيره! অর্থ : “কেউ যেন তার পানি অন্যের ক্ষেতে সেচন না করে”। অথচ হাদীসের উদ্দেশ্য হল, অন্তঃসত্ত্বা দাসী খরিদ করার পর যেন তার সাথে সহবাস না করে। হাদীসে পানি দ্বারা বীর্য বুঝানো হয়েছে, আর ক্ষেত দ্বারা মহিলার লজ্জাস্থানকে বুঝানো হয়েছে। এ ধরনের আরো অনেক উপমা রয়েছে যা আল্লামা ইবনে জাওযী ‘তালবীসে ইবলীস’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
আবূ দাউদ শরীফে আছে, জনৈক ব্যক্তি হযরত ইমরান বিন হুসাইন (রা.) কে বলল, আপনি এমন অনেক হাদীস বর্ণনা করেন যার কোন ভিত্তি কুরআনে নেই। একথা শুনে তিনি রাগান্বিত হয়ে বললেন, তুমি কুরআনে কোথাও কি একথা পেয়েছো যে, প্রতি চল্লিশ দিরহামে এক দিরহাম যাকাত দিতে হবে। এতগুলো ছাগল হলে এত যাকাত দিতে হবে, এতগুলো উট হলে এত যাকাত দিতে হবে? এসব কথা কুরআন পাকের কোথাও পেয়েছ? সে বলল, না। তখন তিনি বললেন, কুরআনে নেই তো এগুলো পেলে কিভাবে বা এর উপর আমল কর কিভাবে? তুমি এগুলো আমার থেকে শিখেছ আর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শিখেছি। এমনিভাবে তিনি আরো মাসআলার কথা বললেন যেগুলোর বর্ণনা কুরআনে নেই। এ দ্বারা বুঝা গেল যে, কুরআন পাকের উপর আমল করার জন্য হাদীসের জ্ঞান থাকা অতীব জরুরী। আর কুরআন ও হাদীস বুঝার জন্য আবার ঐসব বিষয় জানা জরুরী যার বর্ণনা ইতোপূর্বে করা হয়েছে। (শরীআত ও ত্বরীকত কা তালাযুম, শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা যাকারিয়া, পৃষ্ঠা-৫৯-৬০)।
সর্বক্ষেত্রে সহীহ হাদীস দিয়ে দলীল গ্রহণের ভ্রান্ত দাবি
লা-মাযহাবী আহলে হাদীস নামধারীরা সর্বক্ষেত্রে সহীহ হাদীস দিয়ে দলীল গ্রহণের দাবি করে থাকে। অথচ এ দাবিটি ভ্রান্ত। মুহাদ্দিসীনে কিরাম ফযীলতের ক্ষেত্রে যঈফ হাদীসকেও দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে হাদীসের ইমামগণের কয়েকটি সিদ্ধান্ত উল্লেখ করা হলো।
আল্লামা আব্দুল হাই লাখনভী (র.) তাঁর الاجوبة الفاصلة কিতাবের ৩৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-
و قد قال الامام احمد و غيره من الائمة: اذا روينا في الحلال والحرام شددنا واذا روينا في الفضائل و نحوها تساهلنا. (كذا في الكفاية للخطيب البغدادي)
অনুবাদ : ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ও অপর অনেকে বলেন, যখন আমরা হালাল ও হারাম বিষয়ে কোন বর্ণনা পেশ করি তখন (সনদের ক্ষেত্রে) কঠোরতা অবলম্বন করি। আর যখন ফযীলতের ক্ষেত্রে কোন বর্ণনা পেশ করি তখন উদারতা অবলম্বন করি। (এরূপই বর্ণিত হয়েছে খতীবে বাগদাদীর ‘কিফায়াহ’ গ্রন্থে)
একই দিনে জুম’আ ও আরাফা অনুষ্ঠিত হওয়ার ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস
افضل الأيام يوم عرفة إذا وافق يوم الجمعة فهو أفضل من سبعين حجة.
অনুবাদ : উত্তম দিন হচ্ছে আরাফার দিন এবং যদি সেদিনের সাথে জুম’আর দিন একত্রিত হয় তবে তা সত্তরটি হজ্জের চেয়েও উত্তম।
হাদীসখানাকে কেউ কেউ যঈফ বলে থাকেন। মোল্লা আলী কারী (মৃত্যু-১০১৪হি.) রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাদের জবাবে বলেন,
فإن الحديث الضعيف معتبر في فضائل الأعمال عند جميع العلماء من ارباب الكمال. (الحظ الاوفر في الحج الاكبر)
অনুবাদ: সকল শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কিরামের নিকট ফাযায়েলে আমলের ক্ষেত্রে যঈফ হাদীস গ্রহণযোগ্য। (আল হায্যুল আউফার)
মোল্লা আলী কারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ওযূতে ঘাঢ় মাসেহ করা সম্পর্কে তার ‘আল-মাওদুআত’ কিতাবে লিখেন-
وَالضَّعِيفُ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ اتفَاقًا وَلِذَا قَالَ أَئِمَّتنَا إِنَّ مَسْحَ الرَّقَبَةِ مُسْتحَبٌّ أَوْ سُنَّةٌ.
অনুবাদ: উলামায়ে কিরামের সর্বসম্মত মত হল, ফাযায়িলে আমালের ক্ষেত্রে যঈফ হাদীসের উপর আমল করা যাবে। এ কারণে আমাদের আলিমগণ বলেন, ঘাঢ় মাসেহ করা মুস্তাহাব বা সুন্নত।
ইমাম মুহিউদ্দীন আবূ যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবনে শরফ নববী (র.) (৬৩১-৬৭৬ হি.) তাঁর ‘তাকরীব’ কিতাবে লেখেন-
ويجوز عند أهل الحديث وغيرهم التساهل في الأسانيد ورواية ما سوى الموضوع من الضعيف والعمل به من غير بيان ضعفه في غير صفات الله تعالى والأحكام (التقريب والتيسير للنووي)
অনুবাদ: হাদীস বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্য উলামায়ে কিরামের নিকট সনদের ক্ষেত্রে উদারতা অবলম্বন ও মাওযু ব্যতীত যঈফ হাদীস রেওয়ায়েত করা এবং এর উপর আমল করা জায়িয। হাদীসের দুর্বলতা উল্লেখ না করেও জায়িয। তবে তা অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার সিফাত ও বিধান বর্ণনার ক্ষেত্রে নয়। (আততাকরীব ওয়াত্তাইসীর লিন নববী)
মুহাদ্দিসগণের নিকট শরীআতের আহকাম ও আকাইদ ব্যতিত সকল ক্ষেত্রে যঈফ হাদীসও বর্ণনাও জায়িয। এমনকি যঈফ হাদীসের দুর্বলতার উপর তাম্বীহ করাও আবশ্যক নয়। মোট কথা উপদেশ, আমলের ফযীলত, তারগীব ও তারহীবের ক্ষেত্রে যঈফ হাদীস বর্ণনা জায়িয। এ প্রসঙ্গে হাফিয ইবনুস সালাহ তার مقدمة গ্রন্থে লেখেন-
يجوز عند أهل الحديث وغيرهم التساهل في الأسانيد ورواية ما سوى الموضوع من أنواع الأحاديث الضعيفة من غير اهتمام ببيان ضعفها فيما سوى صفات الله تعالى وأحكام الشريعة من الحلال والحرام وغيرهما . وذلك كالمو

Monday, 24 August 2020

কভিড ও বাস্তবতা



লেখকঃ অরূপ বৈশ্য

সবকিছুরই একটা সময় আছে, যখন লড়াইটা আদিম ও আধুনিক জীবন্ত প্রাণের মধ্যে, তখন মন কি বাতের ভাঙা রেকর্ড বাজালে চলে না।

লকডাউন যখন চেইন ব্রেকের জন্য ভাবা হয়েছিলো তখন করা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। যখন ট্রেসিং - টেস্টিং - আইসোলেশনকে মুখ্য ভাবা হয়েছে, তখন যতোভাবে তাকে অবজ্ঞা করা যায় তা করা হয়েছে, তবে অর্থ ব্যয় করে বড় ব্যবসায়ীদের পকেট ভরার ক্ষেত্রে কোনো খামতি ছিল না। 

এখন যখন কম্যুনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে গেছে, যখন আমাদের টেস্ট করার ও হাসপাতালের সুবিধা দেওয়ার পর্যাপ্ত সুবিধা নেই, তখন আবার আগের পদ্ধতির জয়গান চলছে। 

রন্ধ্রে রন্ধ্রে দূর্নীতি, মুনাফাখোরদের লাভের জন্য বুদ্ধি সাঁটতে ব্যস্ততা ও ক্ষমতার দম্ভ চিন্তাশক্তিকে স্থবির করে দেয়, মস্তিষ্কের রেকর্ডে পিন আঁটকে যায়। ঘ্যানর ঘ্যানর করে একই শব্দবন্ধ কানে বাজতে থাকে, "লকডাউন, টেস্টিং, ট্রেসিং, আইশোলেশন ইত্যাদি' - শব্দগুলি সবার মুখস্ত, তাই মন কি বাত এই শব্দযুগলে মানুষ ভালো বুঝে।

কিন্তু আমাদের অপ্রতুল প্রস্তুতির কথা স্বীকার করতে আপত্তি কোথায়? জনগণকে সত্যি কথা জানাতে আপত্তি কোথায়? সত্যি কথা না জানিয়ে চিকিৎসার নামে নরক ভোগান্তির কী মানে?

কম্যুনিটি ট্রান্সমিশনের পর বরাকের ২% মানুষকে সুলভ ও সঠিক চিকিৎসা দেওয়ার স্বাস্থ্য পরিকাঠামো কি আমাদের আছে? যদি নেই, তাহলে সেই বাস্তবতার উপর দাঁড়িয়ে এবার আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। চেইন ব্রেক করার ক্ষেত্রে আগের ভুলগুলো তো আর সংশোধন করা যাবে না, কিন্তু বর্তমানে কিছু সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া যায়। 

সেই সঠিক পদ্ধতির অন্যতম হচ্ছে, জনগণ যাতে সংক্রমণ হলে শুরুতেই সতর্কতামূলক প্রাথমিক পদক্ষেপ নিজেরাই নিতে পারে তারজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও সাপোর্ট সিস্টেম রেডি করা। আমাদের গ্রাম - শহরে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন, তাদের জন্য একদিনের রিগোরাস ট্রেনিংই যথেস্ট। টিবি নির্মূলীকরণ অভিযানে স্বাস্থ্যকর্মীরা যেভাবে কাজ করেছেন সেভাবে তাদের কাজে লাগান, তাদের জন্য হাততালি নয়, তাদের পরিবারের স্বাচ্ছন্দ্য জীবন যাপনের ব্যবস্থা করে দিন।

কিন্তু সঠিক পদ্ধতি গ্রহণের আশায় গুড়ে বালি, হাওয়ায় যে গান্ধীর ছবি থাকা কাগজগুলো উড়ছিলো, তা তো পকেটস্থ হয়ে গেছে।

Saturday, 22 August 2020

রাসূলুল্লাহ ‎ﷺ-এর ৫ দফা নির্দেশনা ‎: ‏জীবন চলার পাথেয়


লেখকঃ- মারজান আহমদ চৌধুরী ফুলতলী

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ
الْمُؤْمِنُ الْقَوِيُّ خَيْرٌ وَأَحَبُّ إِلَى اللَّهِ مِنَ الْمُؤْمِنِ الضَّعِيفِ وَفِي كُلٍّ خَيْرٌ احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ وَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَلاَ تَعْجِزْ فَإِنْ أَصَابَكَ شَىْءٌ فَلاَ تَقُلْ لَوْ أَنِّي فَعَلْتُ كَذَا وَكَذَا وَلَكِنْ قُلْ قَدَّرَ اللَّهُ وَمَا شَاءَ فَعَلَ فَإِنَّ ‏لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيْطَان
"সবল মুমিন আল্লাহর কাছে দুর্বল মুমিন থেকে উত্তম ও প্রিয়, যদিও উভয়ের মাঝে কল্যাণ রয়েছে। চেষ্টা করে যাও সে বিষয়ের জন্য, যা তোমাকে কল্যাণ দেবে এবং আল্লাহর সাহায্য কামনা করো। হাল ছেড়ে দিওনা। যদি কোনো সমস্যা/বিপদ-আপদ আসে, তাহলে এটি বলো না যে, যদি আমি এরূপ এরূপ করতাম (তাহলে এরকম না হয়ে ওরকম হতো)। বরং বলো, এসব আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, তিনি যা চান তা-ই করেন। কেননা "যদি" শব্দটি শয়তানি কাজের দরজা খুলে দেয়।" [সহীহ মুসলিম; কিতাবুল ক্বাদর, সুনান ইবনে মাজাহ, কিতাবুস সুন্নাহ]

উপরিউক্ত হাদিসে আল্লাহর নবী ﷺ উম্মতের জন্য ৫ দফা নির্দেশনা প্রদান করেছেন, যা অনুসরণ করে আমরা জীবন চলার পথে প্রয়োজনীয় সব সিদ্ধান্ত (Decision) এবং ব্যবস্থাপনা (Management) গ্রহণ করতে পারি। অমূল্য এ হাদিসটি একটু ব্যাখ্যা করা যাক। 

হাদিসের প্রথম নির্দেশনা হচ্ছে, "সবল মুমিন আল্লাহর কাছে দুর্বল মুমিন থেকে উত্তম ও প্রিয়, যদিও উভয়ের মাঝেই কল্যাণ রয়েছে।" এখানে সবল বলতে কেবল দৈহিকভাবে বলশালী হওয়া উদ্দেশ্য নয়। হতে পারে কেউ শারীরিকভাবে শক্তিশালী, কেউ মানসিকভাবে দৃঢ়, আবার কেউ জ্ঞান-বুদ্ধির দিক থেকে অধিক বিচক্ষণ। আল্লাহ একেকজনকে একেক ধরণের নিয়ামত দেন। প্রয়োজন কেবল নিজের Strong point তথা শক্তিশালী দিকটি যথাযথভাবে শনাক্ত করা এবং এটি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। উদাহরণস্বরূপ, সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ রা. শারীরিকভাবে শক্তিশালী এবং সামরিক দিক থেকে সুকৌশলী ছিলেন। অপরদিকে হাসসান ইবনু সাবিত রা. ছিলেন কাব্য-সাহিত্যে পারদর্শী। তাঁরা উভয়েই নিজ নিজ সক্ষমতাকে শনাক্ত করতে পেরেছিলেন। তাই খালিদ মাঠ কাঁপিয়েছেন তরবারি হাতে, হাসসান কাঁপিয়েছেন কলম হাতে। 
আমাদেরকে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে ভেবে দেখা উচিৎ যে, আমি কি সত্যিই এ পথে যেতে চাই? এ পথে যাওয়ার ইচ্ছা এবং সামর্থ কি আমার মধ্যে আছে? নইলে ভূতের বেগারখেটে কোনো লাভ নেই। হ্যাঁ, কিছু মানুষ আছেন, যারা অনেক ক্ষেত্রে দুর্বল। তবে কল্যাণ তাঁদের মধ্যেও রয়েছে। এ কল্যাণটি ঈমানের কল্যাণ। 

দ্বিতীয় নির্দেশনা হচ্ছে, "চেষ্টা করে যাও সে বিষয়ের জন্য, যা তোমাকে কল্যাণ দেবে।" এখানে কল্যাণ দ্বারা দুনিয়া আখেরাত উভয়ের কল্যাণ উদ্দেশ্য। 
যখনই আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারব যে, আমার মধ্যে এই নির্দিষ্ট গুণ রয়েছে বা এই কাজে আমার জন্য কল্যাণ রয়েছে, আমার উচিৎ তখন থেকেই সে কাজে নিজেকে সমর্পিত করা। আন্তরিক ইচ্ছা এবং অবিরাম চেষ্টা ব্যতীত দুনিয়াতেও কিছু হাসিল হয় না, আখেরাতের জন্যও কিছু প্রস্তুত করা যায় না। আল্লাহ বলেছেনঃ 
وَأَن لَّيْسَ لِلْإِنسَانِ إِلَّا مَا سَعَىٰ
"এবং মানুষ কেবল তা-ই পায়, যার জন্য সে চেষ্টা করে।" [সুরা নাজম : ৩৯]
হ্যাঁ, মাঝেমধ্যে আল্লাহর দয়ায় চেষ্টা না করেই সফলতা ধরা দিয়ে দেয়। তবে সেটি সাধারণ নিয়ম নয়। 

তৃতীয় নির্দেশনা হচ্ছে, "আল্লাহর সাহায্য কামনা করো।" আমি নির্দিষ্ট কাজে যতই সক্ষম হই না কেন, যত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম-ই করি না কেন, শেষপর্যন্ত আল্লাহর সাহায্যই আমাকে আমার কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাইয়ে দেয়। সুতরাং আমি পরিশ্রম করব, কিন্তু ভরসা আমার পরিশ্রমের ওপর নয়; ভরসা আল্লাহর ওপর। 

চতুর্থ নির্দেশনা হচ্ছে, "হাল ছেড়ে দিওনা।" সবল এবং দুর্বলের মধ্যে পার্থক্য এই জায়গায়। সবল হতাশ হলেও হাল ছাড়ে না, দুর্বল সামান্য দুশ্চিন্তায় মাঠ ছেড়ে পলায়ন করে। এ নির্দেশনা শুধু আমাদের জন্য নয়; বরং নবী-রাসূলদের জন্যও প্রযোজ্য ছিল। খোদ সায়্যিদুল মুরসালিন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে জীবনে বহুবার শূন্যহাতে ঘরে ফিরতে হয়েছে, বহু বিরোধিতা বহু আঘাত সহ্য করতে হয়েছে, বহু বাধাবিপত্তি পেরুতে হয়েছে- কিন্তু ইসলামের নবী এক মূহুর্তের জন্যও হাল ছাড়েননি। ছেড়ে দিলে আজ পৃথিবীতে ইসলাম বলে কিছু থাকত না। 
মোটকথা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পর "একবার আগে-একবার পিছে" করা দুর্বল ঈমানের লক্ষণ। 

পঞ্চম নির্দেশনা হচ্ছে, ব্যর্থতায় নিজের ওপর যদি-কিন্তুর বোঝা না চাপিয়ে তাকদীরের ওপর আস্থা রাখা। 
আমি আমার পছন্দ ও সামর্থ অনুযায়ী একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম, এটি হাসিল করার জন্য খুব চেষ্টা করলাম, আল্লাহর সাহায্য কামনা করলাম, সব বাধাবিপত্তির মাঝেও নিজেকে অবিচল রাখলাম- তবুও সফলতার নিশ্চয়তা আমি দিতে পারি না। তাই আন্তরিক ইচ্ছা, অবিরাম প্রচেষ্টার পরও যদি ব্যর্থতা আসে, তাহলে এর জন্য অতীতের কবর খুঁড়ে নিজেকে দোষারোপ করার কোনো মানে নেই। অতীত থেকে শিক্ষা নেয়া উচিৎ, কিন্তু অতীতকে নিয়ে বসে থাকা বা হাহাকার করা বোকামি। "যদি এটি না করে ওটি করতাম, যদি এমন না হয়ে তেমন হতো"- এ ধরণের কথা মূলত ঈমানের দৈন্যতা এবং শয়তানের চোর-দরজা। বস্তুত, আল্লাহ আমার ভাগ্য নির্ধারণ করেন এবং তিনি যা ভালো মনে করেন, সেটিই বাস্তবায়িত হয়। 

মুমিনের উচিৎ, এই ৫ দফা নির্দেশনা (নিজের সবলতাকে শনাক্ত করা, অবিরাম চেষ্টা করা, আল্লাহর সাহায্য চাওয়া, হাল না ছাড়া এবং ব্যর্থতাকে মেনে নেয়া) অনুসরণ করে জীবনে সিদ্ধান্ত এবং ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা। ইনশাআল্লাহ এতে আমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে।

Friday, 21 August 2020

মহররম ও আশুরার কয়েকখানা দালিলিক হাদিস


সর্বোত্তম রোযা মুহররমের রোযা
⦾عن أبي هريرة  قال : سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : أفضل الصلاة بعد الفريضة صلاة جوف الليل ، وأفضل الصيام بعد شهر رمضان شهر الله الذي تدعونه المحرم.
হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা কে বলতে শুনেছি ফরয নামাযের পর সর্বোত্তম নামায হচ্ছে মধ্যরাতের নামাজ আর রামাদ্বান মাসের রোযার পরে সর্বোত্তম রোযা হচ্ছে আল্লাহর মাসের রোযা যাকে তোমরা মুহাররম বলে থাক।[মুসলিম, আহমদ, হাকিম]
⦾عن ابن سعد ، قال : أتى عليا رجل فقال : يا أمير المؤمنين ، أخبرني شهرا أصومه بعد رمضان قال : لقد سألت عن شيء ما سمعت أحدا يسأل عنه بعد رجل سأل عنه رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال : إن كنت صائما شهرا بعد رمضان فصم المحرم ؛ فإنه شهر الله ، وفيه يوم تاب قوم ويتاب على آخرين .

হযরত ইবনে সা’দ হতে বর্ণিত তিনি বলেন আলী (রা.) এর কাছে এক ব্যক্তি এসে বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন, রামাদ্বান মাস ছাড়া এমন একটি মাসের কথা বলুন যে মাসে আমি [নফল] রোযা রাখতে পারি। তিনি বলেন, তুমি এমন একটি বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করেছো যে বিষয়ে কেবল একজনকেই রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাসা করতে শুনেছি। অত:পর তিনি বললেন, তুমি যদি রামাদ্বান মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে রোযা রাখতে চাও তাহলে মুহাররম মাসে রাখবে। কেননা এটি আল্লাহর মাস।  [তিরমিযী , দারিমী]

মূসা (আ.)-এর মুক্তির খুশি প্রকাশ
⦾عن ابن عباس ، قال : قدم النبي صلى الله عليه وسلم المدينة واليهود تصوم يوم عاشوراء فقال : ما هذا اليوم الذي تصومونه قالوا : هذا يوم عظيم أنجى الله فيه موسى وأغرق آل فرعون فيه فصامه موسى شكرا ، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : فنحن أحق بموسى منكم  ، فصامه رسول الله صلى الله عليه وسلم وأمر بصيامه
হযরত ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত : তিনি বলেন, নবী (সা.) মদীনায় শুভাগমন করলেন, সে সময়ে ইহুদীরা আশুরার রোযা রাখত। তিনি (সা.) ফরমালেন এটা কোন দিন যে তোমরা রোযা রাখ? তারা বলল এটি একটি মহান দিন, এদিনে আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আ.)-কে [ফিরআওনের হাত থেকে]  মুক্তি দিয়েছেন এবং ফেরাউনকে দলবলসহ (নীল নদে) ডুবিয়েছিলেন। মূসা (আ.) এদিনে শুকরিয়াস্বরূপ রোযা রেখেছিলেন।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমালেন ‘আমরাতো তোমাদের চেয়ে মূসা (আ.)-এর উপর অধিক হকদার।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এদিনে নিজে  রোযা রাখলেন এবং রোযা রাখার জন্য আদেশ করলেন। (বুখারী, মুসলিম, আহমদ)

প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলায়হি ওয়াসাল্লাম বেশি গুরুত্ব দিতেন:
⦾عن عبيد الله بن أبي يزيد ، أنه سمع ابن عباس ، يقول : ما رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يتحرى صيام يوم يلتمس فضله على غيره إلا هذا اليوم يوم عاشوراء وشهر رمضان
হযরত ওবায়দুল্লাহ ইবনে আবী ইয়াযীদ (রা.) হতে বর্ণিত তিনি হযরত ইবনে আব্বাস (রা.)-কে বলতে শুনেছেন, আমি রাসূল (সা.)-কে আশুরার দিন ও রামাদ্বান মাসের রোযা ছাড়া অন্য কোনো রোযাকে এত গুরুত্ব দিতে দেখিনি। (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ)

আশুরার রোযা এক বছরের গুনাহের কাফ্ফারা:
عن أبي قتادة ، قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : صوم عاشوراء كفارة سنة -وصوم عرفة كفارة سنتين سنة قبله وسنة بعده .
-হযরত আবূ কাতাদাহ (রা.) হতে বর্ণিত : তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ফরমান আশুরার রোযা এক বছরের (গুণাহের) কাফ্ফারা এবং আরাফার দিনের রোযা পূর্ববর্তী এক বছর  ও পরবর্তী এক বছর এই দুই বছরের (গুণাহের) কাফ্ফারা।  (মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে খুযায়মা)

রামাদ্বান মাসের রোযা ফরয হওয়ার পূর্বে আশুরার রোযা বাধ্যতামুলক ছিল:
⦾أخبرنا عروة بن الزبير ، أن عائشة ، رضي الله عنه قالت : كان رسول الله صلى الله عليه وسلم أمر بصيام يوم عاشوراء قبل أن يفرض رمضان فلما فرض صيام شهر رمضان كان من شاء صام عاشوراء ومن شاء أفطر
-হযরত উরওয়াহ ইবনে যুবায়র (রা.) হতে বর্ণিত, হযরত আয়িশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স) রামাদ্বানের রোযা ফরয হওয়ার পূর্বে আশুরার রোযা রাখার জন্য আদেশ দিয়েছিলেন। যখন রামাদ্বান মাসের রোযা ফরয হল যার ইচ্ছা এ দিনের রোযা রাখত যার ইচ্ছা ছেড়ে দিত।
(বুখারী, মুসলিম, তিরমীযি, আবু দাউদ)

আশুরার রোযা দুই দিন  রাখার বিধান:
⦾عبد الله بن عباس ، يقول : حين صام رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم عاشوراء وأمر بصيامه قالوا : يا رسول الله ، إنه يوم تعظمه اليهود والنصارى فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : فإذا كان العام المقبل صمنا يوم التاسع إن شاء الله تعالى  قال : فلم يأت العام المقبل حتى توفي رسول الله صلى الله عليه وسلم 
-আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল (সা.) যখন আশুরার দিনে নিজে রোযা রাখলেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন তখন সাহাবায়ে কিরাম বললেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.)! এটাতো এমন এক দিন যাকে ইয়াহুদী ও খৃষ্টানরা বিশেষ সম্মান  দিয়ে থাকে । তখন রাসূল (সা.) ফরমালেন, আগামী বছর আমরা  নয় তারিখেও রোযা রাখব ইনশা আল্লাহ! বর্ণনাকারী বলেন, পরবর্তী বছর [আশুরা] আসার আগেই রাসূল (সা.) ইন্তিকাল ফরমান। (মুসলিম, আবু দাউদ )

⦾عن داود بن علي ، عن أبيه ، عن جده ابن عباس ، قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : صوموا يوم عاشوراء وخالفوا فيه اليهود وصوموا قبله يوما أو بعده يوما
-হযরত দাঊদ বিন আলী (রা.) তাঁর বাবা থেকে তাঁর বাবা তার দাদা ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ফরমান- তোমরা আশুরার দিনে রোযা রাখ। আর এ ব্যাপারে  ইহুদীদের সাথে বিরোধিতা/ব্যতিক্রম কর। আশুরার আগে বা পরের দিন রোযা রাখ। (আহমদ, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক )

আশুরায় পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করার ফদ্বীলত:
⦾عن أبي سعيد الخدري ، قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : من وسع على أهله يوم عاشوراء وسع الله عليه سائر سنته
-হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ফরমান- যে ব্যক্তি আশুরার দিনে তার পরিবার-পরিজনের জন্য (খরচের ব্যাপারে) উদার হবে; আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ব্যাপারে সারা বছর উদার থাকবেন। (তাবারানী, মাজমাউয যাওয়াইদ লিল হায়ছামী)।
লেখকঃ- হযরত মাও আহমদ হাসান চৌধুরী ফুলতলী    

একনজরে হযরত মাও আহমদ হাসান চৌধুরী ফুলতলী।

তিনি কে?
তিনি ফেসবুকে নাই। তিনি ইউটিউবেও নাই। তিনি নাই ইন্টারনেটে। তিনি মানুষের জটলায় থাকেন না। তিনি প্রচলিত মাহফিলের পোস্টারে থাকেন না। তিনি সভাপতি হতে চান না। প্রধান অতিথির চেয়ারের প্রতিও তিনি দেখান না আগ্রহ। তিনি কারো বাড়িতে সহসাই যেতে চান না। তিনি কারো কষ্টের কারণ হতে চান না। তিনি অযাচিত কোনো ধনীর করিডোরে রাখেন না কদম।
ছবিঃ- হযরত মাও আহমদ হাসান চৌধুরী শাহান ফুলতলী।    

তিনি যিকরুল্লাহর মজলিসে যান। তিনি এতিমের মাহফিলে যান। তিনি দুঃস্থ মানুষের কাছে বসেন। তিনি রিকশা বিতরণে আছেন। তিনি এতিমের নৌকায় উঠে বসেন। তিনি এতিমদের গোসল করান সস্নেহে। তিনি মেডিকেলে রোগীর খোঁজ রাখেন। তিনি বিধবার ঘর বানান। মসজিদ করে দেন। লঙ্গরখানা করে দেন। তিনি ব্রিজ করে দেন মানুষের পারাপারের জন্য। তিনি চাল, ডাল, কেরোসিন বিতরণ করেন। তিনি বন্যা, খরা, জলোচ্ছাসে ভেসে যাওয়া মানুষের সাথী। তিনি বৃদ্ধ—বৃদ্ধার ঘরের বাতি। তিনি সবহারাদের বন্ধু-স্বজন।
তিনি শিশুদের বড় ভালোবাসেন। তিনি সবার সুখে হাসেন। তিনি উদার মনের মানুষ। তিনি দরসে বুখারীর শায়খ। তিনি দুরুদের মজলিসে বসেন। তিনি ইলমে কিরাতের ইমাম শ্রেণীর খাদেম। তিনি জ্ঞানের উপমা। তিনি প্রজ্ঞার দ্যুতনা। তিনি সব কল্যাণের সাথে চলেন। তিনি এ যুগের আলোর নকীব।
তিনি সাধারণ তবে ব্যতিক্রম। তিনি সবার থেকে আলাদা। তিনি আরাম—আয়েশের প্রতি ঝুঁকেন না। তাঁর কাঠের চেয়ারটির পেছনের হেলান দেওয়ার অংশটি নেই। এটা কত বড় শরাফতী ভাবা যায়?
তিনি কাউকে কাফির কাফির বলেন না। তিনি মুনাফিকদের দলেও চলেন না। তিনি ঘৃণার চাষ করেন না। তিনি জৌলুশ নিয়েও চলেন না। তিনি সাদাসিধে। সবার। সকলের। মানুষের। মানবতার। তিনি গর্বের ধার—ধারেন না। মাওলানা, আল্লামা লিখেন না। তিনি চলমান স্রোতের বিপরীত। যিকির, ফিকির, দুআ, তসবিহ, শোকর, তাকওয়া, তাওয়াক্কুল এসবের নূরে নূরানী। তিনি এ সময়ের, এই উম্মাহর কাঙ্ক্ষিত মানুষ। তিনি নবীজি (সা)—এর প্রকৃত অনুসারী।
তিনি কারো মুরশিদ। কারো কাছে বড় ছাব। কারো পিতা। কারো উস্তাদ। কারো অভিভাবক। কারো শিক্ষক। কারো কাছে নেতা। কারো কাছে দরবেশ। আসলে তিনি সময়ের প্রেক্ষিতে তুলনাহীন। সবচেয়ে ভালো। সবচেয়ে উন্নত। সবচেয়ে বেহতর। মানবিক উপমা। রূহের চিকিৎসক।
তিনি মানুষের মনে। তিনি মাবুদের ধ্যানে। তিনি সৃষ্টির সেবায়। তিনি আল্লাহর রেদ্বায়। তিনি আছেন। তিনি থাকবেন তার মহান মাওলার ইচ্ছায়। তিনি কে? তিনি আমাদের বড় ছাহেব কিবলা, শ্রদ্ধেয় আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী।
আল্লাহ তাঁর ছায়া, তাঁর দুআ আমাদের উপর দীর্ঘায়িত করুন।

ইমাম মাহদীর অপেক্ষায়, কবে এসে রক্ষা করবেন?

আজকে থেকে প্রায় ১ হাজার বছর আগে চেঙ্গিসখানের সৈন্যরা যখন পৃথিবী দখল করে নিচ্ছিল, মুসলমানরা তাদেরকেই ইয়াজুজ মাজুজ ভেবে মাহদীর জন্য অপেক্ষা করছিল। বলেছিল যুদ্ধ করে কী লাভ! মাহদী ছাড়া আর কেউ ওদের ঠেকাতে পারবে না। সুলতান রুকনুদ্দিন বাইবার্স এবং তুর্কীরা ওদেরকে প্রথম ঠেকিয়ে দিয়ে অন্যদের বুঝিয়েছিল এরা ইয়াজুজ মাজুজ না।এরা অপ্রতিরোধ্য নয়, এদেরকেও পরাজিত করা যায়।
ক্রুসেডাররা যখন মসজিদুল আকসা দখল করে নিয়েছিল, তখন মুসলমানরা ধরেই নিয়েছিল এরাই দাজ্জাল। মাহদী আসবে, আল আকসা উদ্ধার করবে, মুসলমানদের বাঁচাবে। ঈমাম মাহদী আসেনি। সুলতান সালাউদ্দিন আল আয়ুবী জেরুজালেম বা আল আকসা খ্রিস্টানদের কাছ থেকে উদ্ধার করেন।

তারও আগে খলীফার ক্ষমতা যখন কেবল বাগদাদের প্রাসাদ কেন্দ্রিক হয়ে পড়ে, মুসলমানরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে, চারিদিক থেকে মার খাচ্ছিল। এমন খারাপ সময়ে মুসলমানরা মাহদীর অপেক্ষা করে। ধরে নেয় মাহদী এসে রক্ষা করবে। সে সময়ে সুলতান আল্প আরসালান এসে ছিন্নভিন্ন মুসলমানদের একত্রিত করেন, যাযাবরের মত ঘুরে বেড়ানো, চারিদিকে মার খাওয়া মুসলমানদের জন্য আনাতোলিয়ার সেলজুক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলমানদের জন্য শক্তিশালী একটি রাষ্ট্র গড়ে তুলে মুসলমানদের উদ্ধার করেন। আল্প আরসালান অর্থ সিংহ সৈনিক বা সিংহের মত বীর।সুলতান আল্প আরসালানের আসল নাম মুহম্মদ। 

স্পেনে যখন মুসলমানদের পতন হচ্ছিল, তখনো অনেকে ধরে নিয়েছিল মাহদী এসে তাদেরকে রক্ষা করবে। কেউ রক্ষা করেনি, স্পেনের মুসলিম সভ্যতা হারিয়ে যায়।

৭শ বছর আগে বাইজেন্টাইন আর মঙ্গোলীয়দের কাছে যখন মার খাচ্ছিল মুসলমানরা তখনো অনেকে মাহদীর আশায় ছিল। তখন ওসমান ইবনে আর্তুরুল এসে বাইজেন্টাইনদের মার দিয়ে ওসমানী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। যারা পরে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যকেই ভেঙে দেয়, তাদের রাজধানী ইস্তাম্বুল জয় করে নেয়। প্রায় সব গুলো ক্রুসেড ঠেকিয়ে দেয়। প্রায় অর্ধেক ইউরোপের দখল নিয়ে নেয়। মুসলমানদের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। কনস্টান্টিনোপল বিজয়ী সেনাপতির নামও মুহম্মদ। 

আজকে থেকে তিনশ বছর আগেও মানুষ মাহদী আসবে বলে প্রস্তুতি শুরু করেছিল, অপেক্ষায় ছিল।
বলেছিল চেষ্টা করে কী লাভ! মাহদী ছাড়া আর কেউ ওদের ঠেকাতে পারবে না। পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বিভিন্নবার মুসলমানরা নিজেদের বিপদ থেকে নিজেরা উদ্ধার হওয়ার চেষ্টার বদলে মাহদীর অপেক্ষা করেছে।ব্রিটিশ আমলেও ভারতের কাদিয়ানের একজন নিজেকে নবী,  মাহদী, ঈসা/মসীহ দাবী করেছিল। তার শক্তিশালী সমর্থক গোষ্ঠীও রয়েছে। যারা আহমদিয়া বা কাদিয়ানী নামেও পরিচিত। কেয়ামতের অনেক আলামতের এখনো প্রচুর বাকী আছে।  বলা হয়েছে কেয়ামতের আগে মাহদী আসবে, যার আসল নাম হবে মুহম্মদ। 

মুসলমানদের যতবারই দূঃসময় আসে তারা মাহদীর জন্য অপেক্ষা করে। ধরে নেয় মাহদী এসে মুসলমানদের রক্ষা করবে। প্রত্যেকবারই কেউ না কেউ নিজেকে মাহদী দাবী করে বসে। যুগে যুগে আরো এমন মাহদী, ঈসা, মসীহ, নবী দাবীদার আসবে। মুসলমানরা কাউকে ইয়াজুজ-মাজুজ ভাববে, কাউকে দাজ্জাল ভাববে, কাউকে মাহদী/ঈসা মেনে নিয়ে অনুসরণ করবে।  সালাউদ্দিন আয়ুবী, রুকনুদ্দীন বাইবার্স, আল্প আরসালান, ওসমানরা এসে রক্ষাও করবে।
এমন হয়তো আরো শতশত বছর চলবে। তবে সহসাই যে মাহদী/ঈসা/দাজ্জাল আসবে না, সেটা মোটামুটিভাবে বলে দেয়া যায়। তাই আমার মাহদী নিয়ে কোনো আগ্রহ নাই। মাহদী আসলে সেটা এমনিতেই বুঝা যাবে, কেউ তাকে বা তার ক্ষমতাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। 

লিখেছেন: তাহমিদুল ইসলাম

Thursday, 20 August 2020

করোনা পজিটিভের সম্পর্কে থাকা কমরুলের টেস্ট করতে গিয়ে হামলার শিকার স্বাস্থ্যকর্মীরা, থানায় মামলা, ক্ষোভ এলাকায়


এইচ,এ চৌধুরী,  কাটিগড়া, ২০ আগষ্ট ঃ কাটিগড়া তৃতীয় খণ্ডের বাসিন্দা আঙ্গনওয়াদী কেন্দ্রের কর্মী কোভিড নাইনটিন পজিটিভ রোগী ছালেহা বেগম লস্করের সংস্পর্শের লোকদের সোয়াব টেস্ট করতে গিয়ে ছালেহার দেবর কমরুল ইসলাম লস্করের হাতে প্রাণঘাতী হামলার শিকার হন একই গ্ৰামের বাসিন্দা তথা জলালপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অধীন কর্মরত ব্লক প্রোগ্রাম মেনেজার (বিপিএম) বুরহানুল হক চৌধুরী। সঙ্ঘটিত সমুহ ঘটনার বিবরন জানিয়ে ছালেহার দেবর অভিযুক্ত কমরুলের বিরুদ্ধে ১৭ আগষ্ট সোমবার কাটিগড়া থানায় মামলা রুজু করছেন জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অধীনস্থ কর্মী বিপিএম বুরহানুল হক চৌধুরী। মৃত এনামুল হক চৌধুরীর পুত্র বুরহানুল হক চৌধুরীর দেওয়া এজাহারের বয়ানমতে ঘটনার রবিবরনে প্রকাশ ১৬ আগষ্ট রবিবার জলালপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ইনচার্জ ডাঃ সুমন ভৌমিকের নির্দেশে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এমপিডব্লিউ কর্মী দীপক সাহা,স্থানীয় আশা কর্মী রোসনা বেগম সহ বিপিএম বুরহানুল হক চৌধুরী ও অন্যান্যরা কোভিড নাইনটিন পজিটিভ রোগী ছালেহার বাড়ির সংস্পর্শের লোকদের সোয়াব টেস্ট করতে  সালেহার বাড়িতে যান বিকাল আনুমানিক ৩ ঘটিকায়। আশা কর্মী রোসনা ও দীপক সাহা সহ অন্যান্যরা হোম আইসলেশনে থাকা কোভিড-পজিটিভ রোগী ছালেহার বাড়িতে উপস্থিত হয়ে ছালেহার সংস্পর্শের লোকদের রেপিড এণ্টিজেন্স টেস্টের মাধ্যমে সোয়াব টেস্টের কথা জানালে ছালেহার দেবর কমরুল প্রথমে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের জিজ্ঞাসা করে জানতে চায় কে বা কাহারা তার বাড়িতে তাদেরকে পাঠিয়েছে,জবাবে আশা কর্মী রোসনা স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশের কথা শুনালে অকথ্য ভাষা ব্যবহার করে তৎসঙ্গে বিপিএম বুরহানুল হককে উদ্দেশ্যে করে নানা ধরনের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে পাশাপাশি স্বাস্থ্য কর্মীদের সম্মুখে বুরহানুলকে মারধরের হুমকি দিয়ে রাখে কমরুল। এসময় বিপিএম বুরহানুল হক আশা কর্মী রোসনা সহ অন্যান্যদের সঙ্গে  ছালেহার বাড়িতে প্রবেশ করেন নাই। মুলত ডাক্তারের নির্দেশে সঙ্গে থাকা স্বাস্থ্য কর্মীদের ছালেহার বাড়ির পথ দেখিয়ে দিয়ে ছালেহার বাড়ি থেকে কিছু দূরবর্তী স্থানে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বুরহানুল। স্বাস্থ্যকর্মীরা এদিন ছালেহার বাড়িতে সোয়াব টেস্টর জন্য উপস্থিত হলে ছালেহার ঘরের লোকেরা প্রথমে সোয়াব টেস্ট করাতে রাজি হয় নাই,একসময় আশা কর্মী রোসনা ছালেহার পরিবারের লোকেদের বুঝিয়েসুজিয়ে ছালেহার  স্বামী ফয়জুর রহমান লস্কর সহ ছেলে,মেয়েদের সোয়াব টেস্ট করান এদিন, এতে ছালেহার ২ মেয়ের গায়ে কোভিড পজিটিভ ধরা পড়ে,যাহার পরিপেক্ষিতে ছালেহার দেবর কমরুলকে তার সোয়াব টেস্ট করাতে অনুরোধ জানায় আশাকর্মী রোসনা, এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কমরুল নিজের গায়ের সোয়াব টেস্ট করার পরিবর্তে আশাকর্মী সহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে পুনরায় অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে তৎসঙ্গে বিপিএম বুরহানুল হককে মারধর করার জন্য ধারালো অস্ত্র নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে বুরহানুলকে রাস্তার পাশে দাঁড়ানো অবস্থায় পেয়ে  অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে পাশাপাশি ধারালো অস্ত্র দিয়ে বুরহানুলের উপর প্রাণঘাতী হামলা চালায়,ঠিক ওই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত গ্ৰোফ সদস্য স্থানীয় আলতাবুর রহমান ও খলিল উদ্দিন সহ অন্যান্যরা কমরুলের হাত থেকে বুরহানুলকে কোনক্রমে রক্ষা করেন বলে এজাহারে উল্লেখ করছেন বুরহানুল। বিপিএম বুরহানুলের উপর প্রাণঘাতী হামলা সহ স্বাস্থ্য বিভাগের অন্যান্য কর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহারের জেরে এমপিডব্লিউ কর্মী সংস্থার জেলা কমিটির তরফে স্বাস্থ্য বিভাগের জেলা যুগ্ম  সঞ্চালকের মাধ্যমে সমুহ ঘটনার বিবরন জানিয়ে কাছাড়ের জেলাশাসক সহ পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপির প্রদান করে তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বলে জানা গেছে, উপরন্তু বুরহানুল হক চৌধুরীর উপর প্রাণঘাতী হামলা সহ স্বাস্থ্য কর্মীদের সহিত অভ্যভ্য আচরণকারী অভিযুক্ত কমরুলকে সত্তর গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে সংস্থা বলে খবর পাওয়া গেছে। এদিকে বিপিএম বুরহানুল হক চৌধুরীর উপর প্রাণঘাতী হামলায় জড়িত অভিযুক্ত কমরুলের বিরুদ্ধে তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে কাটিগড়া থানার ওসি নয়ন মনি সিং এর কাছে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন জলালপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ইনচার্জ ডাঃ সুমন ভৌমিক সহ কাটিগড়া মডেল হাসপাতালের উপ-অধিক্ষক ডাক্তার রত্মা চক্রবর্তী। একই ভাবে বিপিএম বুরহানুল হকের উপর প্রাণঘাতী হামলার দায়ে অভিযুক্ত কমরুলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ওসি নয়ন মনি সিনহাকে  নির্দেশ দিয়েছেন কাটিগড়ার সার্কেল মেজিষ্ট্রেট প্রাণজিত দেব বলে জানা গেছে। তবে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী বুরহানুল হকের দায়েরকৃত মামলা নথিভুক্ত করে তদন্ত করছে কাটিগড়া পুলিশ,যদিও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মামলার তদন্তের দায়ীত্বে থাকা এস,আই ডি শর্মা অভিযুক্ত কমরুলকে এখনও করায়াত্ত করতে পারেন নাই। এদিকে সঙ্ঘটিত ঘটনার ৪/৫ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও বুরহানুলের উপর হামলাকারী অভিযুক্ত কমরুলকে গ্রেপ্তার না করায় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী সহ স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।

Monday, 17 August 2020

বদরপুর স্টিমার ঘাটের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী হাজী নামর আলী প্রয়াত, শোক বিভিন্ন মহলে




আরটিএন মিডিয়া, কাটিগড়া , ১৭ আগষ্ট ঃ কর্কট রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ দিন অসুস্থ থাকার পর অবশেষে পরপারে পাড়ি দিলেন   কাটিগড়া তৃতীয় খণ্ডের বাসিন্দা তথা কেন্দ্রীয় জল পরিবহন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী বিশিষ্ট সমাজসেবী হাজী নামর আলী তালুকদার।  সোমবার  দুপুর ১২ টা ৩০ মিনিটের সময় নিজ বাসভবনেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর  বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। রেখে গেছেন স্ত্রী সহ দুই ছেলে,চার মেয়ে,নাতি,নাতনি সহ অসংখ্য গুণমুগ্ধদের। কাটিগড়া বিধানসভা যুব কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুনিম তালুকদারের পিতা  প্রয়াত নামর আলী তালুকদারের  মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। অসংখ্য গুণমুগ্ধরা শেষ দেখা দেখতে প্রয়াতের বাড়িতে ভীড় জমান। পরে  এদিন   সন্ধ্যা ৬ টা ৩০ মিনিটের সময় নিজ বাড়ির সংলগ্ন স্থানে নামাজে জানাজা  আদায়  শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাপনকার্য্য সম্পন্ন করা হয় প্রয়াতের। কর্মজীবনে 
  প্রয়াত নামর আলী তালুকদার  কেন্দ্রীয় জল পরিবহন বিভাগের বদরপুর স্টিমার  ঘাট কার্যালয়ে এবং পরে এখান থেকে বদলি হয়ে বিভাগের করিমগঞ্জ ডিভিশন কার্যালয়ে নিষ্ঠার সাথে কর্তব্য পালন করে ২০০৩ সালে অবসর গ্ৰহণ করেন। চাকরি জীবন শেষে তিনি    সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকে সমাজ সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে রেখেছিলেন আজীবন। 
এদিকে প্রয়াত হাজী নামর আলী তালুকদার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন উত্তর পূর্বাঞ্চল যুব আহলে সুন্নতের মুখ্য উপদেষ্টা হজরত মাও আনোয়ার উদ্দিন তালুকদার,  কাটিগড়া ব্লক কংগ্রেস সভাপতি হুসেন আহমদ চৌধুরী,এআইইউডিএফ নেতা হাজী খলিল উদ্দিন মজুমদার,  দলের কাটিগড়া  সমষ্টি সভাপতি আতাউর রহমান লস্কর ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুর রহমান বড়ভুইয়া, দক্ষিণ কাটিগড়া জেলাপরিষদ সদস্য অসীম দত্ত, কাটিগড়া জিপির জিপি সভাপতি মনছুর আহমদ,ফুলবাড়ি জিপির জিপি সভাপতি ইকবাল আলম বড়ভুইয়া, কাটিগড়া সমষ্টি যুব কংগ্রেস কমিটির  সভাপতি মাছুম আহমদ,যুব কংগ্রেস সমষ্টি কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল বাহার চৌধুরী,সামছুল ইসলাম লস্কর, খালেদ আহমদ তালুকদার , তারিক আজিজ বড়ভুইয়া,ব্লক কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক লস্কর, আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, মৃদুল নাগ, নিরঝর দাস, প্রাক্তন জেলা পরিষদ সদস্য বিশ্বজিৎ মালাকার,পূর্ব কাটিগড়া জেলাপরিষদ সদস্যার প্রতিনিধি আয়নূল হক বড়ভুইয়া অন্যান্যরা।
ছবিঃ- প্রয়াত নামর আলীতালুকদারের ফাইল ছবি।    

Friday, 14 August 2020

যুব কংগ্রেস নেতা কে মারধর করার হুমকিভরা পোস্ট ফেসবুকে, মামলা কাটিগড়া থানায়



RTN Media: - ফেসবুকের মাধ্যমে মারধরের হুমকি সহ নানা আপত্তিকর পোস্ট করার পরিপ্রেক্ষিতে বহিস্কৃত কংগ্রেস নেতা  জাহাঙ্গির আলম লস্করের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হলো কাটিগড়া থানায়।  মামলা করলেন কাটিগড়া বিধানসভা যুব কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুকন উদ্দিন তালুকদার।
ছবিঃ- কাটিগড়া থানায় দায়ের করা মামলার কপি। 
    
 মামলার বয়ান মতে,  "আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর শান্ত" নামের ফেসবুক  একাউন্ট থেকে  জাহাঙ্গির আলম লস্কর লেভারপুতা জিপির  রুকন উদ্দিন তালুকদারের বিরুদ্ধে মারধর করা সহ নানা হুমকি ভরা  পোস্ট দিতে থাকেন।  পোস্টে তিনি লিখেন, "আমি রুকন দালালরে কইতার তর যদি ক্ষমতা থাকে আর মার দুধ খাছ বাইর হইয়া আয়"। এসময় যুব কংগ্রেসের ঐ নেতা জরুরি কাজে কাটিগড়া  সার্কেল অফিসে অবস্থান করছিলেন। মামলার বয়ান মতে, জাহাঙ্গীর তার দলবল নিয়ে  রুকন উদ্দিনের পিচুধাওয়া করে কাটিগড়ায় চলে আসেন।  রুকন উদ্দিন কে খোজাখুজি করেন। না পেয়ে আবার ফেসবুকে পোস্ট দেন অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর। এবারে তিনি লিখেন, "হিতায় গিয়া পাইলা না জাগাত, কুত্তার লাকাইন বাগিছে"। আবার ফেসবুকের অন্য একটি পোস্টে তিনি লিখেন, "লেভারপুতার এক দুই টেকি জি হুজুর গেংগের দালাল সীমা ছাড়ি দের, মাটিত ফালাইয়া খালি গরু ফিটা দিমু, সময় একদম কাছাই গেছে"। এছাড়াও আরও বিভিন্ন হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে মামলার বয়ানে উল্লেখ রয়েছে। দায়ের করা  মামলায় রুকন উদ্দিন  বলেন,  তিনি যেকোনো সময় হামলার শিকার হতে পারেন। তার প্রাণনাশের আশংকা রয়েছে।  তাই তিনি পুলিশের দারস্থ হয়ে  উপযুক্ত তদন্ত ক্রমে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার আর্জি জানিয়েছেন।
ছবিঃ-হুমকিভরা ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট।       

Thursday, 13 August 2020

সচিবদের গাফিলতি, চতুর্দশ অর্থকমিশনের কাজে ধীরগতি কাটিগড়ায়,


 
 রিপোর্ট জমা না দিলে কড়া পদক্ষেপঃ বিডিও সুজা আহমদ মজুমদার  

এইচ.এ.  চৌধুরী, কাটিগড়া, ১৩ আগষ্ট ঃ কাটিগড়া উন্নয়ন খণ্ডের অন্তর্গত প্রতিটি জিপি এলাকার সার্বিক উন্নয়নের জন্য জিপিডিপির অধীন চতুর্দশ অর্থকমিশনের বরাদ্দকৃত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের দ্বিতীয় কিস্তি সহ ২০১৭-১৮,২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০ অর্থ বছরের অধীন প্রতিটি জিপিতে প্রায় কোটি টাকার অধিক পরিমাণ টাকা জিপি সচিব ও সভাপতিদের যৌথ ব্যাঙ্ক একাউন্টে গচ্ছিত রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। কিন্তু জিপি সচিব ও সভাপতিদের উদাসীনতার পাশাপাশি চরম গাফিলতিতে ব্লকের অন্তর্গত দুধপুর গণিরগ্ৰাম,ফুলবাড়ি,
তারিনীপুর,গোবিন্দপুর,
কাতিরাইল সহ মোট ১০ টি জিপি এলাকার উন্নয়নের জন্য জিপিডিপির অধীন সরকারের বরাদ্দকৃত চতুর্দশ অর্থকমিশনের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ স্তম্ভিত অবস্থায় রয়েছে বলে জানান বিডিও সুজা হুসেন মজুমদার। 
ছবিঃ- সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছেন কাটিগড়া উন্নয়ন খন্ড আধিকারিক সুজা আহমদ মজুমদার।            

বুধবার পড়ন্তবেলায় নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সম্মুখে বিডিও সোজা মজুমদার জানান বিভাগীয় নির্দেশ অনুযায়ী প্রতিটি জিপি এলাকার সার্বিক উন্নয়নের জন্য মঞ্জুরীকৃত বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের গতি তরান্বিত করার পাশাপাশি কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখার জন্য মাসিক অথবা ত্রৈইমাসিক পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় ব্লক কার্যালয়ে। স্থানীয় বিধায়ক সহ জেলা গ্ৰামোউন্নয়ন বিভাগের মুখ্য কার্যবাহী আধিকারিকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিতব্য পর্যালোচনা সভায় জিপি সচিবরা জিপিডিপির অধীন চতুর্দশ অর্থকমিশন কাজের অগ্রগতির খতিয়ান জমা করা সহ অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের মঞ্জুরীকৃত প্রকল্পের কাজের অগ্রগতির রিপোর্ট জমা দিতে হয়। জিপি সচিবদের জমাকৃত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিটি কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি উন্নয়নমুলক বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের পরবর্তী প্রক্রিয়ার  সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নিয়ম অনুযায়ী। বিডিও জানান ব্লকের অন্তর্গত বিভিন্ন জিপির অধীন চতুর্দশ অর্থকমিশনের বরাদ্দকৃত কোটি কোটি  টাকার কাজের অগ্রগতির খতিয়ান জিপি সচিবরা ব্লক কার্যালয়ে আজ পর্যন্ত জমা দেন নাই,এমনকি কাজের অগ্রগতির খতিয়ান দেখার পাশাপাশি মঞ্জুরীকৃত বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতির রিপোর্ট জমা করার বিডিও কতৃক ব্লক কার্যালয়ে সচিবদের জানিয়ে সময়ে সময়ে ব্লক পর্যালোচনা সভা আহ্বান করা হয়েছে,যদিও সচিবরা বিডিওর ডাকে আহুত সভায় উপস্থিত হন নাই, এমনকি প্রতিটি জিপির কাজের অগ্রগতির রিপোর্ট জমা দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন সচিবরা। বিশেষ করে চতুর্দশ অর্থকমিশনের কাজের অগ্রগতি জন্য জিপি সচিবদের অসহযোগিতার পাশাপাশি কাজের দ্রুত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উদাসীনতার কথা জানিয়ে একসময় তিনি জেলা পরিষদের সিইও দীপশিখা দের কাছে সচিবদের উদাসীনতার ব্যাপারে লিখিত নালিশ জানিয়েছেন তিনি । বিডিও মজুমদার আরও জানান সচিবদের বিরুদ্ধে লিখিত নালিশের পরিপেক্ষিতে জেলা পরিষদের সিইও দীপশিখা দে গত ৭ জুলাই তারিখে ব্লকের অধীন প্রতিটি জিপির দায়ীত্বপ্রাপ্ত সচিবদের কাজের গাফিলতি সহ উদাসীনতার জন্য সচিবদের প্রতি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়ে কারণ দর্শানোর লিখিত জবাবদিহির (এস্কপ্লেনেশন) নোটিশ জারি করেন। জেলা পরিষদের সিইও দীপশিখা দের লিখিত এস্কপ্লেনেশনে সচিবদের কাছে ৩ দিনের মধ্যে চতুর্দশ অর্থকমিশনের কাজের অগ্রগতির রিপোর্ট ব্লক কার্যালয়ে জমা দেওয়ার পাশাপাশি কাজের গতি তরান্বিত করতে বিডিওর সহযোগিতায় ২০১৯- ২০ ইং সাল পর্যন্ত চতুর্দশ অর্থকমিশনের নামে সরকারের বরাদ্দকৃত বিভিন্ন প্রকল্পের মঞ্জুরীকৃত টাকার কাজ শ্রীগ্ৰই সম্পন্ন করার নির্দেশনা দিয়েছেন সিইও। বিডিও সুজা মজুমদার জানান বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা দেওয়ার পরিপেক্ষিতে ব্লকের অধীন কেবল তারিনীপুর, সিদ্ধেশ্বর,কাটিগড়া সহ ২/১টি জিপিতে চতুর্দশ অর্থকমিশনের কিছু কিছু কাজ আরম্ভ হয়েছে যদিও এসব জিপির জিপি সচিব সহ অন্যান্য জিপির সচিবরা আজ পর্যন্ত কাজের প্রগ্ৰেস রিপোর্ট জমা করেন নাই ব্লক কার্যালয়ে । বিডিও মজুমদার আরও জানান বিভাগীয় মন্ত্রীর পরিচালনায় বিভাগের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের উপস্থিতিতে শিলচর বঙ্গভবনের অনুষ্ঠিতব্য আয়োজিত সভায় চতুর্দশ অর্থকমিশনের অধীন বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ শ্রীগ্ৰই সম্পন্ন করার সিদ্ধান্তমতে চতুর্দশ অর্থকমিশনের কাজের অগ্রগতির রিপোর্ট ৭ দিনের ভিতর জমা দেওয়ার জন্য গত ১৬ জুন তারিখে সচিবদের কাছে লিখিত ভাবে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কিন্তু সচিবরা আজ পর্যন্ত চতুর্দশ অর্থকমিশনের কাজের অগ্রগতির রিপোর্ট জমা না দেওয়ায় বুধবার সংবাদ মাধ্যমের কাছে সচিবদের কাজের উদাসীনতার কথা জানিয়ে একপ্রস্থ ক্ষোভ প্রকাশ করেন বডিও। একই সঙ্গে প্রতিটি জিপির দায়ীত্বপ্রাপ্ত সচিবদের কাছে মোবাইলের হোয়াটসআপের মাধ্যমে ১৩ আগষ্টের ভিতর চতুর্দশ অর্থকমিশনের কাজের অগ্রগতির খতিয়ান জমা করার লিখিতভাবে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিডিও । ১৩ আগষ্টের ভিতর সচিবদের কাছ থেকে চতুর্দশ অর্থকমিশনের কাজের অগ্রগতির রিপোর্ট জমা না  হলে আগামী ১৪ আগষ্ট থেকে বিডিও জিপি ভিত্তিক প্রতিটি প্রকল্পের কাজের সরেজমিন পরিদর্শন করে পিছিয়ে পড়া কাজের গতি তরান্বিত করার পাশাপাশি কাজের অগ্রগতির ক্ষেত্রে জিপি সচিবদের উদাসীনতার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভাগীয় উধ্তন কর্তৃপক্ষের নিকট রিপোর্ট পেশ করতে পিছপা হবেন না বলে সচিবদের প্রতি কড়াবার্তা দিয়েছেন এদিন বিডিও সোজা মজুমদার। এদিকে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী ব্লকের অধীন বিভিন্ন জিপিতে বর্তমান চলতে থাকা চতুর্দশ অর্থকমিশনের কাজের ব্যাপক অনিয়ম সঙ্ঘটিত হয়েছে। জিপি সচিবরা প্রতিটি জিপিতে জিএসটির বাহানায় সিস্কিটি ফোর্টি রেশিয়য়ে কাজ আরম্ভ শুরু করছেন। তাছাড়া প্রতিটি কাজের কনষ্ট্রাকশন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়মের পাশাপাশি স্বজনপোষণ নীতির গ্ৰহণ করেছেন বলে জানা গেছে ইতিমধ্যে।

Friday, 7 August 2020

একুশে কাটিগড়ায় প্রার্থী হচ্ছেন সুস্মিতা? সকাশে প্রস্তাব নিয়ে হাজির ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসীরা

কাটিগড়া উদ্ধারে হেভিওয়েট প্রার্থীতে ভরসা

প্রস্তাব নিয়ে সুস্মিতা সকাশে কাটিগড়ার  ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসীরা

RTN Blog:- ঠিকঠাক থাকলে  একুশের বিধানসভা নির্বাচনে  কাটিগড়ায় কংগ্রেস প্রার্থী হচ্ছেন সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেস সভানেত্রী প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব। আপাতত এমই চর্চা ভেসে আসছে  সুস্মিতা ঘনিষ্ঠ  কাটিগড়ার  কংগ্রেস মহল থেকে। এখানকার একদল কংগ্রেসী রীতিমতো সুস্মিতা সকাশে  প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়ে প্রাথমিক আলোচনাও সেরে ফেলেছেন বলে সুত্রের খবর। তাই যদি হয়, তাহলে কংগ্রেস টিকেটে বিধায়ক হওয়ার চুরমার হয়ে যাবে অনেকের। 

সূত্রমতে,   একুশে কাটিগড়া আসনটি উদ্ধারে  হেভিওয়েট প্রার্থী নিয়েই মাঠে নামতে চাইছেন একাংশ কংগ্রেস কর্মীরা।  উড়ে এসে জুড়ে বসা প্রার্থী নিয়ে প্রায় ত্রিশ বছর নির্বাচন হয়েছে। এ দীর্ঘ সময় কংগ্রেস কাটিগড়ায় নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে পারে নি। তাই এবার চেনা-জানা মুখই  তাদের ভরসা, এমন দাবী দলের মধ্য থেকেই উঠে আসছে। এ যাত্রায় সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেস সভানেত্রী সুস্মিতা দেবই প্রথম পছন্দ। নির্ভরযোগ্য  সুত্রমতে, কাটিগড়ায় প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব নিয়ে ইতিমধ্যে সুস্মিতা সকাশে হাজির হয়েছেন একদল কংগ্রেসীরা। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে কাটিগড়ায় দলীয় প্রার্থী হওয়ার  রীতিমতো প্রস্তাব দিয়েছেন। যদিও   ঘনিষ্ঠ দলীয় কর্মকর্তাদের এই প্রস্তাবে সরাসরি "হ্যা"অথবা "না" বলেন নি শিলচরের প্রাক্তন এই সাংসদ। তবে সুস্মিতা মহলের আশা, আখেরে সুস্মিতাই কাটিগড়ায় কংগ্রেস প্রার্থী হতে পারেন। কারণ আসন পুননির্ধারন হলে  শিলচর লোকসভা আসন সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সে যাত্রায় শিলচর আসন থেকে দলীয় প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকছে না কংগ্রেসের এই হেভিওয়েট নেত্রীর কাছে। তাই আপাতত ক্ষমতায় ফেরার জন্য বিধানসভা নির্বাচনই একমাত্র হাতিয়ার বলে সুস্মিতা মহলের দাবি। সুস্মিতা জয়ী হলে আর দিশপুর কংগ্রেসের দখলে গেলে নিশ্চিত মন্ত্রী পদ থাকবে সন্তোষ-তনয়ার জন্য। তাই তিনি আখেরে কাটিগড়ায় দলীয় প্রার্থী হতে পারেন বলে অনুমান অনেকের।  এদিকে সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের এই নেত্রী কাটিগড়ায় টিকেট প্রত্যাশী হলে অনেক ভূমিপুত্রদের স্বপ্ন চুরমার হয়ে যাবে। দিদির কাছ থেকে টিকেট ছিনিয়ে আনা প্রায় অসম্ভবই হয়ে দাড়াবে তাদের জন্য।  তখন দিদির হয়ে কাজ করা নতুবা লেংমারা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না স্থানীয়-বহিরাগত অন্যান্য দলীয় টিকেট দাবিদারদের কাছে। তখন যে  দলীয় কোন্দল দেখা দিবে তা কিন্তু টেকাতে হবে খোদ সুস্মিতাকেই। 

 করোনা সংকট উপেক্ষা করে প্রত্যেক রাজনৈতিক দল নির্বাচনী রণতরী সাজাতে জোর প্রস্তুতি শুরু করেছে। দিসপুরের মসনদ দখল করতে কোনো খামতি রাখতে চাইছে না কোনো দলই। নিজ নিজ দলীয় টিকেটের আশায় মাঠে-ময়দানে ঘুরিয়ে বেড়াচ্ছেন টিকেট প্রত্যাশীরাও।  জনসংযোগ বাড়াতে জনতার দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন তারা৷ একইভাবে প্রত্যেক দলই নিজের সাংগঠনিক অবস্থান মজবুত করতে বিভিন্ন পদে রদবদল করে সংগঠন কে  ঢেলে সাজাতে ব্যস্ত। একুশের বিধানসভা নির্বাচন কে সামনে রেখে এই একই চিত্র গোটা আসামে দেখা যাচ্ছে। সেই একই চিত্র   ইন্দো-বাংলা সীমানা লাগুয়া কাটিগড়া আসনটিতেও।  এই চর্চিত বিধানসভা কেন্দ্রে বর্তমান বিধায়ক অমর চাঁদ জৈন ও তাঁর দল বিজেপি বহু আগে থেকেই মাঠে-ময়দানে নেমে পড়েছেন। জনসম্পর্ক, জনসংযোগ ইত্যাদি কর্মসূচির মাধ্যমে বিজেপি আম জনতার ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। মাওলানা বদরুদ্দিন আজমলের এআইইউডিএফও পিছিয়ে নেই। সাংগঠনিক ভাবে দলীয় অবস্থান ততটা মজবুত না হলেও,  জনসংযোগ রক্ষার্থে দলটিকে প্রথম কাতারে রাখতেই হবে। ব্যতিক্রম শুধু কংগ্রেসে। আপাতত  তেমন লড়চড় পরিলক্ষিত হচ্ছে না দলটির মধ্যে।  গোটা  কাটিগড়ায়   শত বছর পুরনো কংগ্রেস দলটির বর্তমান সাংগঠনিক  অবস্থান  খাতায়-পত্রে বেশ ভালো। বাস্তবে দলটির দায়িত্বশীলরা ভাতঘুমে আচ্চন্ন। দলগত ভাবে জনসংযোগ নেই বললেই চলে।  বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থান বেশ নড়েবড়ে।  এই অবস্থায় স্থানীয় কয়েকজন কংগ্রেস কর্মী ভুমিপুত্রের জিগির তুলে টিকেটের দাবীদার বলে পরস্পর শুনা যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তাদেরও তেমন জনসংযোগ রক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে না। জনগণও তেমন কাউকে পছন্দ করছেন বলে হয় না।  তাঁর উপর দলীয় অর্ন্তকোন্দল তো আছেই। মনপছন্দ প্রার্থী না হলেই লেং মারামারি প্রতা হয়ে গেছে কংগ্রেসের। এই অবস্থায় সুস্মিতা কে প্রার্থী করে চমক দিতে চাইছেন দলীয় কর্মীরা।  আসন্ন নির্বাচনে হারজিত যাই হোক, কিন্তু বিগত লোকসভা নির্বাচন গুলোতে   কাটিগড়া বাসী কংগ্রেসের ঝুলি ভরে ভোট দিয়ে আসছেন। এমনকি খোদ সুস্মিতা দেবের চৌদ্দ ও উনিশের লোকসভা নির্বাচনে কাটিগড়ায় কংগ্রেস লিড করেছে। সেই  পরিসংখ্যান থেকেই হয়তো সুস্মিতায় ভরসা জাগছে কংগ্রেসীদের।  ঘনিষ্ঠ মহলের প্রস্তাবে সায় দিয়ে কাটিগড়ার জমিতে সুস্মিতা দেব পা মাড়ান কিনা, তাই আখেরে দেখার বিষয়।

বাবর কি সত্যিই রামমন্দির ভেঙে ফেলেছিলেন?



বাবর যদি রাম জন্মস্থান অর্থাৎ রামমন্দির ধ্বংসের আদেশ দিতেন তাহলে তার উল্লেখ 'তুজুক ই বাবরি'  বা সমসাময়িক অন্য কোথাও লেখা থাকতো। রাম মন্দির ধ্বংসের কথা উল্লেখ করতে বাবরের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ ছিল না। তিনি যদি ধর্মীয় কারণে এই মন্দির ধ্বংসের আদেশ দিতেন তাহলে তিনি তার স্মৃতিকথায় সে কথার উল্লেখ করতে গর্ববোধ করতেন। গোয়ালিয়রের কাছে উড়িয়া উপত্যকায় নগ্ন-জৈন  মূর্তিগুলি ধ্বংসের যে আদেশ বাবর  দিয়েছিলেন সে কথা  স্বীকার করতে তিনি দ্বিধাবোধ করেননি। এই মূর্তিগুলি তার অশ্লীল বলে মনে হয়েছিল। যদি নগ্ন মূর্তি নষ্ট করার কথা স্বীকার করতে তিনি গর্ববোধ করতে পারেন তাহলে রাম জন্মস্থান মন্দির ধ্বংসের কথা তিনি উল্লেখ অনায়াসে করতেই পারতেন। ঐতিহাসিকদের মতে বাবরের আত্মবিশ্বাস প্রবল ছিল বলেই এসব তিনি নির্দ্ধিধায় বলতে পারতেন। 

 বাবরের সমসাময়িক সূত্র গুলিতেও অযোধ্যায় মন্দির ধ্বংসের কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না। এমনকি তুলসীদাস যিনি হিন্দিতে 'রামচরিতমানস' লিখেছিলেন এবং যিনি পরম রামভক্ত ছিলেন তিনিও এরকম কোনো ঘটনার উল্লেখ করেননি। বাবর বা  তার কোনো সভাসদ রাম মন্দির ধ্বংস করতেন তবে তা সমসাময়িক হিন্দুদের চোখ এড়িয়ে যেত না। জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিকরা একথা ঠিকই বলেছেন যে "এ সম্পর্কে তথ্যাদি সরকারি নথিতে প্রথম পাওয়া যায় ঊনবিংশ শতাব্দীতে। এ বিষয়ের নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক প্রমাণের কথা উঠলে এসব নথিরই উদাহরণ দেওয়া হতো।" মন্দির ধ্বংসের কথা আমরা পাই বৃটিশ নথিতে। পি কার্নেগির 'হিস্টোরিক্যাল স্কেচ অব তহসিল ফৈজাবাদ, ১৮৭০', এইচ,আর নেভিলের 'ফৈজাবাদ ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার, এলাহাবাদ,১৯৫০' ইত্যাদিতে। তাও সব নথি, তথ্য অনুমাননির্ভর। বাবরের স্মৃতিকথার অনুবাদক শ্রীমতি এ,এফ,বেভারিজ লিখেছেন, বাবর যেহেতু মুসলমান ছিলেন, তাই নিশ্চয়ই আংশিকভাবে হলেও রামমন্দির ভেঙ্গে সেখানে মসজিদ স্থাপন করেছিলেন। এই সিদ্ধান্তের পেছনে তার যুক্তি, বাবর মুসলমান, তাই অন্যধর্মের প্রতি তিনি উদার ছিলেন না! তিনি তার লেখায় মন্দির আছে বলেও কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেন নি। মনমতো পাইকারি একটা সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে তিনি ভুলেই গেছেন, তার অনুদিত কাব্যে তিনি লিখেছেন, বাবর তাঁর পুত্র হুমায়ুনকে  হিন্দুদের প্রতি সহনশীল হওয়ার  উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন, যদি ভারতবর্ষ শাসন করতে চাও তো গরুর মাংস খেয়ো না'।                     

ইতিহাস এবং ঐতিহাসিকদের আলোচনা বিশ্লেষণ করলে বাবরের মন্দির ধ্বংসের কোনো প্রমাণ তো পাওয়া যায়ই না। বরং রামমন্দিরের কোনো অস্তিত্ব কোনো ইতিহাসবিদও প্রমাণ করতে পারেন নি। সেখানে রামের জন্মস্থান ছিল বলে কোনো নথিতে আমি অন্তত পাই নি। সে বিষয়ে অন্য পোস্টে বিস্তারিত তুলে ধরার ইচ্ছে আছে।

লেখকঃ- মানসি চৌধুরী  

Thursday, 6 August 2020

আপনার উপর যাকাত ফরয, একটু হিসাব মিলিয়ে দেখবেন কি ?


~~~~~~~~~
বর্তমানে ৫২.৫ তোলা রুপার মূল্য ৪২০০০ টাকা।সে হিসাবে যাদের কাছে ৪২০০০ টাকা বা এর চেয়ে বেশি টাকা অথবা সমপরিমাণ অস্থাবর সম্পদ (নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বাদে) একবছর যাবত ছিল,তাদের উপর ২.৫% হারে যাকাত ফরয। বছরের শুরু ও শেষে নিসাব পূর্ণ থাকলে যাকাত আদায় করতে হবে। মাঝে নিসাব কমে যাওয়া ধর্তব্য নয়। 

নামাযের পরেই যাকাতের গুরুত্ব বেশি।আল-কুরআনে "যাকাত" শব্দের উল্লেখ এসেছে ৩২ বার। বার বার নামাযের পরেই যাকাতের উল্লেখ করা হয়েছে। তাই যাকাত প্রদানে টালবাহানা করবেন না। যাকাত প্রদান না করলে হালাল উপার্জনের সম্পদ অপবিত্র থাকে। তাই যাকাত দিন, সম্পদ পবিত্র করুন।

সুরা বাকারায়, হেদায়াতপ্রাপ্ত মুত্তাকিদের পরিচয় দিতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “…আমার দেয়া রিযক হতে যাকাত প্রদান করে”। এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর ভয় অন্তরে লালন করা ও হেদায়াতের পূর্ণতায় পৌঁছুতে যাকাত প্রদানের কোনো বিকল্প নেই। যে ব্যক্তি যাকাত ফরয হওয়ার পরও তা আদায় করে না, তার পক্ষে পূর্ণ হেদায়াত লাভ করা কখনো সম্ভব নয়।

বর্তমান যুগে কিছু মুসলিম আছেন, যারা নামায পড়েন কিন্তু যাকাত দিতে কলিজা কাঁপে; সম্পদ বুঝি এই শেষ হয়ে গেল। অথচ যাকাত দিলে সম্পদ বৃদ্ধি পায়। তারা ভাবেন, আতর লাগিয়ে শুক্রবার নামাযে যাচ্ছি; সেজেগুজে ঈদের নামাযে হাজিরা দিচ্ছি; ব্যাস.. মুসলমানের দায়িত্ব তো পালন হলোই; বেহেশত তো পাচ্ছিই; হুর-গেলমান তো থাকবেই; ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু না… যাকাত প্রদান করলে যেমন পাচ্ছেন হেদায়াত ও আল্লাহ তাআলার নৈকট্য, ঠিক তেমনি যাকাত না আদায় করলেও প্রস্তুত থাকছে ভয়ানক শাস্তি।

আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ – يَوْمَ يُحْمَىٰ عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَىٰ بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ ۖ هَٰذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ

আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না , তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে। (সেদিন বলা হবে), এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা রেখেছিলে, সুতরাং এক্ষণে আস্বাদ গ্রহণ কর জমা করে রাখার। [৯:৩৪-৩৫]

সুরা হুমাযা পুরোটাই যাকাত প্রদান না করার শাস্তির আলোচনা করছে। দেখুন,

وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ – الَّذِي جَمَعَ مَالًا وَعَدَّدَهُ – يَحْسَبُ أَنَّ مَالَهُ أَخْلَدَهُ – كَلَّا ۖ لَيُنْبَذَنَّ فِي الْحُطَمَةِ – وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْحُطَمَةُ – نَارُ اللَّهِ الْمُوقَدَةُ – الَّتِي تَطَّلِعُ عَلَى الْأَفْئِدَةِ – إِنَّهَا عَلَيْهِمْ مُؤْصَدَةٌ – فِي عَمَدٍ مُمَدَّدَةٍ

প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ,যে অর্থ সঞ্চিত করে ও গণনা করে। সে মনে করে যে,তার অর্থ চিরকাল তার সাথে থাকবে। কখনও না,সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে পিষ্টকারীর মধ্যে। আপনি কি জানেন,পিষ্টকারী কি ? এটা আল্লাহর প্রজ্বলিত অগ্নি,যা হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছবে। এতে তাদেরকে বেঁধে দেয়া হবে,লম্বালম্বি খুঁটিতে। [১০৪:১-৯]