দলীল গ্রহণে সহীহ হাদীস : একটি পর্যালোচনা
-আল্লামা মুফতী গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী
সহীহ শব্দের শাব্দিক অর্থ শুদ্ধ বা সুস্থ, যার বিপরীত ‘সাকীম’ বা অসুস্থ। কিন্তু মুহাদ্দিসীনগণের নিকট সহীহ একটি পরিভাষা। এটি হাদীসের সর্বোচ্চ স্তর। এছাড়াও হাদীসের বিভিন্ন পরিভাষা রয়েছে। যেমন হাসান, গরীব, যঈফ ইত্যাদি। কোন মুহাদ্দিসই সহীহ ছাড়া অন্যান্য স্তরকে বাতিল বলেননি। বিভিন্ন মুহাদ্দিসীনের নিকট হাদীস সহীহ হওয়ার জন্য বিভিন্ন মাপকাঠি রয়েছে। তাই একজন মুহাদ্দিসের মাপকাঠিতে কোন হাদীস সহীহ না হলেও অন্য মুহাদ্দিসের শর্তে তা সহীহ হতে পারে এবং উসুলে হাদীসের পরিভাষায় সহীহ নয় এমন সকল হাদীসই প্রত্যাখ্যানযোগ্য নয়। যেমন সহীহ এর সকল শর্ত পূরণ না করলে কোন হাদীস হাসান হতে পারে। এটিও বিশুদ্ধ হাদীসের একটি প্রকার। তাই কেবল সহীহ হাদীস দিয়ে দলীল তলব করাও এক প্রকার ভুল। সিহাহ সিত্তার কোনো সংকলক কোনো হাদীসকে সহীহ বলেছেন। কিন্তু ইমাম বুখারী (র.)-এর মাপকাঠিতে তা সহীহ এর পর্যায়ে পড়েনি বলে তিনি তাঁর কিতাবে তা সংকলন করেননি। তাই বলে এরূপ হাদীস আমলযোগ্য নয় বা দলীল হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না- এমন মন্তব্য করা উসূলে হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক। বর্তমানে গায়র মুকল্লিদগণ একটি বিষয় বেশি বেশি বলে থাকেন যে, দলীল গ্রহণের জন্য চাই সহীহ হাদীস। কোন গায়র সহীহ (হাসান, যঈফ স্তরের) হাদীস দিয়ে দলীল প্রদান করা যাবে না। কারণ তা গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদেও বক্তব্য হলো, যদি সর্বক্ষেত্রে সহীহ হাদীস দিয়ে দলীল প্রদান করতে হয় তাহলে হাদীস সহীহ কিংবা দুর্বল হওয়ার বিষয়টিও মারফূ হাদীস দিয়ে প্রমাণ করতে হবে। লা-মাযহাবীদের কাছে প্রশ্ন, তারা কি সারা জীবন চেষ্টা করে কোন হাদীস অর্থাৎ রাসূলে পাক (সা. )-এর উক্তি কিংবা সাহাবায়ে কিরামের উক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে পারবেন যে, কোন হাদীসটি সহীহ, আর কোনটি সহীহ নয়? নিশ্চয় তারা পারবেন না।
কোন হাদীস তো এমনি এমনি সহীহ বা যঈফ হয় না। হাদীসের মান নির্ধারিত হয় বর্ণনাকারীর অবস্থার দ্বারা। রাবী বা বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য হলে হাদীস সহীহ, বর্ণনাকারীর মধ্যে ত্রুটি থাকলে হাদীস যঈফ ইত্যাদি হয়ে থাকে। আর রাবীদের বর্ণনা হাদীসে নেই। এটি উসুলে হাদীসের আওতাধীন আলাদা একটি বিষয়। যার নাম হচ্ছে اسماء الرجال, এটি শুরু হয়েছে হাদীস সংকলনের সময় থেকে। তাবিঈগণের শেষ যুগে তথা ১৫০ হিজরীর দিকে এসে আইম্মায়ে হাদীস রাবীগণের তা’দীল ও তাজরীহ সম্পর্কে পর্যালোচনা করেন। এদের মধ্যে রয়েছেন- আল-আ’মাশ (র.), শু’বা (র.) মা’মার (র.), হিশাম আদ-দাস্তাওয়াঈ (র.), আওযাঈ (র.) প্রমূখ। এরা সকলেই ১৫০ হিজরীর পরের লোক। তাঁদের লিখিত অমর গ্রন্থসমূহের উপর ভিত্তি করেই হাদীসের মানদ- নিরূপন করা হয় বা হয়েছে। সহীহ, হাসান, গরীব, যঈফ, মুতাওয়াতির, মাশহুর ইত্যকার পরিভাষাও তাঁদের উদ্ভাবিত। লা-মাযহাবী আহলে হাদীস নামধারীগণ সহীহ হাদীস ছাড়া অন্য কোনো হাদীস মানেন না। অথচ হাদীস অবতরণের পথ রুদ্ধ হওয়ার পর অর্থাৎ সায়্যিদুল মুরসালীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তিকালের প্রায় দুই শত বছর পর যে পরিভাষা উদ্ভাবিত হয়েছে তা মানেন এবং তা দিয়ে মুহাদ্দিসীনে কিরাম হাদীসের যে মানদ- বিচার করেন তাও মানেন। এটা কি তাকলীদ নয়? নাকি ১২শ বছর আগের হাদীস বর্ণনাকারীগণের সাথে তাদের চলাফেরা, উঠাবসা হয়েছে যার ফলে তারা রাবীগণের নির্ভরযোগ্যতা নিজে যাচাই করেছেন? পাঠকগণ তাদের আত্মপ্রবঞ্চনার বিচার করবেন।
প্রথমেই আমাদের জেনে রাখা অত্যাবশ্যক যে হাদীস বিশারদগণ হাদীসকে প্রধানত চারটি ভাগে বিভক্ত করেছেন। আর তা হলো সহীহ, হাসান, যঈফ ও মাওযূ।
লা-মাযহাবীদের কেউ কেউ যঈফ ও মাওযূকে একত্রিত করে ফেলেন। অথচ মুহাদ্দিসীনে কিরামের অভিমত অনুযায়ী যে সকল হাদীসে সহীহ ও হাসান হওয়ার কোন একটি শর্তও পাওয়া যায় না তাকে যঈফ হাদীস বলা হয়। কিন্তু কোন হাদীসকে মাওযু বলা যাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তাতে বর্ণনাকারীর মিথ্যা বলা প্রমাণিত না হবে। সুতরাং যঈফ হাদীসকে মাওযূ বলা হাদীস বিশারদদের পরিভাষা সম্পর্কে অজ্ঞতারই পরিচায়ক। আর যঈফ হাদীসকে মিথ্যা, অনর্থক ইত্যাদি বলে তার উপর আমলকে হারাম মনে করা ইলমে হাদীসের সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞতারই পরিচয় বহন করে।
বুখারী শরীফ দিয়ে দলীল গ্রহণ
মুকাল্লিদীন হানাফীগণ যখন নিজেদের অবস্থানের পক্ষে কোন হাদীস প্রদর্শন করেন তখন গায়র মুকাল্লিদীনগণ প্রশ্ন করেন যে, ঐ হাদীস কি বুখারী শরীফে আছে? অথচ তাদেরও একথা জানা আছে যে, সকল মাসআলার হাদীস বুখারী শরীফে নেই। এমতাবস্থায় বুখারী শরীফের হাদীস দেখানোর যিম্মা না নিয়ে আমাদের প্রশ্ন, লা-মাযহাবীগণ এরূপ কোনো আয়াত বা হাদীস কি দেখাতে পারবেন, যাতে লেখা আছে যে, হাদীস দ্বারা দলীল দিতে হলে তা কেবল বুখারী শরীফে থাকতে হবে?
দ্বিতীয়ত: তাদের নিজেদের আমলকৃত সকল মাসআলার দলীল তারা বুখারী শরীফে দেখাতে পারবেন কি? যদি পারেন তাহলে আমাদের কাছে হাদীস তলব করুন।
অবশ্য এক্ষেত্রে বাস্তবতা হলো, তাদের আমলকৃত অনেক মাসআলার দলীল বুখারী শরীফে নেই। উপরন্তু তারা অনেক ক্ষেত্রে বুখারী শরীফে বর্ণিত অনেক হাদীসের উপর আমলই করে না। যার আলোচনা সামনে রয়েছে।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا.
‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ কর। আর তিনি যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাক।’’ কিন্তু কুরআন হাদীসের কোথাও কি একথা লিখিত আছে যে,وَمَا آتَاكُمُ البخاري فَخُذُوهُ ‘‘বুখারী যা নিয়ে এসেছেন তোমরা কেবল তা-ই মেনে চল।’’ যদি কুরআন হাদীসে এরূপ কোন কথা না থাকে তাহলে দলীল গ্রহণে শুধু বুখারী কিংবা বুখারী-মুসলিমের শর্তারোপ করা কিভাবে শুদ্ধ হয়?
তাছাড়া اصح الكتب بعد كتاب الله الصحيح البخاري এ কথা গায়র মুকাল্লিদগণও বিশ্বাস করেন। তাদের কাছে প্রশ্ন, কুরআন হাদীসে এরূপ কোন বর্ণনা কি আছে? তাহলে কিসের ভিত্তিতে তারা এটা মানেন? উপরোক্ত মন্তব্যের উপর ইজমা তো পরবর্তী ইমামগণের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে।
লক্ষ্যণীয় যে, ইমাম বুখারী (র.)-এর জন্ম ১৯৪ হিজরীতে এবং বুখারী শরীফ সংকলন সমাপ্ত হয় ২৩৩ হিজরীতে এবং পরবর্তীতে চার মাযহাবের উপর ইজমাও সংঘটিত হয়। তাহলে প্রশ্ন হল সকল আমল যদি বুখারী শরীফ দেখেই করতে হয় তা হলে বুখারী সংকলনের পূর্ববর্তী প্রায় সোয়া ২০০ বছর ইসলামী শরীআতের উপর কিভাবে আমল করা হলো? আর তখন বুখারী শরীফ না থাকায় এর উপর যারা আমল করে যেতে পারেননি তাদের অবস্থা কি হবে?
প্রকাশ থাকে যে, ইমাম বুখারী (র.)-এর নিজের উক্তি অনুযায়ী তাঁর এক লক্ষ সহীহ হাদীস মুখস্থ ছিল। তন্মধ্যে বুখারী শরীফে তাকরার ছাড়া প্রায় ৪ হাজার হাদীস লিপিবদ্ধ হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন হলো, বাকী ৯৬ হাজার সহীহ হাদীস কেবল বুখারী শরীফে সংকলিত না হওয়ায় কি আমলের অযোগ্য হয়ে গেল? ঐ হাদীসসমূহ অন্য কিতাবে সংকলিত হলে কি তার উপর আমল করা যাবে না?
বাস্তব কথা হলো, আহলে হাদীস নামধারী লা-মাযহাবী ঐ সকল লোকদের নিজেদেরই বুখারী শরীফের উপর আমল নেই। আমলতো দূরের কথা, তাদের ইমাম বুখারী (র.)-এর উপর পুরোপুরি আস্থাও নেই। ইমাম বুখারী (র.) সংকলিত অনেক হাদীস, তাঁর অনেক ইজতিহাদ ও আমলের উপর তাদের আমল নেই। প্রমাণস্বরূপ আলোচ্য পুস্তকে অনেকগুলো মাসআলা দেখানো হয়েছে যাতে প্রমাণ হয় যে গায়র মুকাল্লিদগণ ইমাম বুখারী (র.)-এর আকীদা, আমল ও ইজতিহাদের সাথে একমত নয়।
‘সহীহ হাদীসই আমার মাযহাব’ উক্তির সঠিক ব্যাখ্যা
ইমাম আবূ হানীফা (র.) সহ কোনো কোনো ইমামের একটি প্রসিদ্ধ উক্তি-
إذا صح الحديث فهو مذهبي অর্থাৎ সহীহ হাদীসই আমার মাযহাব।
আহলে হাদীস, লামাযহাবী, সালাফীগণ উক্ত ‘সহীহ হাদীসই আমার মাযহাব’ কথাটি দ্বারা বুঝাতে চান মাযহাবের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোন সহীহ হাদীস পাওয়া গেলে সহীহ হাদীসের উপর আমল করে মাযহাব ত্যাগ করাই একান্ত কর্তব্য। এটি তাদের অপব্যাখ্যা ছাড়া আর কিছু নয়।
সহীহ হওয়া সত্ত্বেও সব আয়াত ও হাদীসের উপর আমল করা যায় না
ত্রিশ পারা কুরআন শরীফ সন্দেহাতীতভাবে মুতাওয়াতির বর্ণনা দ্বারা লিপিবদ্ধ। এতে কোন ঈমানদারের সন্দেহ করার উপায় নেই। এখন প্রশ্ন হলো, লা-মাযহাবীরা কুরআন শরীফের প্রত্যেক আয়াতের উপর আমল করতে পারবেন কি?
নমুনাস্বরূপ কুরআন শরীফের কয়েকটি আয়াত নি¤েœ পেশ করা হলো-
১. এবং খর্জুর বৃক্ষের ফল ও আঙ্গুর হতে তোমরা মাদক ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাক। (সূরা নাহল, আয়াত-৬৭)
২. লোকে তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, বল উভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ এবং মানুষের জন্য উপকারও; কিন্তু এদের পাপ উপকার অপেক্ষা অধিক। (সূরা বাকারা, আয়াত-২১৯)
৩. হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মুর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক সব ঘৃণ্য বস্তু শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা মায়িদা, আয়াত-৯০)
উপরে উল্লেখিত তিনটি আয়াতই সন্দেহাতীতভাবে মুতাওয়াতির বর্ণনা দ্বারা লিপিবদ্ধ। অথচ কেউ যদি উপরের প্রথমোক্ত দুটি আয়াতের উপর আমল করে তবে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। আমল করতে হবে তৃতীয় আয়াতের উপর। কুরআনে করীমে এরকম আরো অনেক আয়াত রয়েছে যা কুরআনের আয়াত হওয়া সত্ত্বেও আমল করা যায় না। কারণ এগুলো রহিত হয়ে গেছে। এতে প্রমাণিত হলো যে কুরআন শরীফে অনেক আয়াত ও অনুরূপভাবে অসংখ্য হাদীস সহীহ হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন কারণে এর উপর আমল করা যায় না।
ইবনে তাইমিয়ার বক্তব্য
শায়খ ইবনে তাইমিয়া যাকে লা-মাযহাবীরা ইমাম মনে করে এ প্রসঙ্গে তার একটি বক্তব্য শায়খুল হাদীস মাওলানা যাকারিয়া ছাহেব তার রচিত “শরীআত ও ত্বরীকত কা তালাযুম” গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, “আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (র.) “রফউল মালাম” নামক কিতাবে লিখেছেন যে, দশ কারণে ইমামগণ কোন হাদীস ছেড়ে দিতে পারেন। ১. ইমামের কাছে হাদীস পৌঁছেছে তবে তা প্রমাণিত হয়নি। ২. খবরে ওয়াহিদ গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য কিছু পূর্বশর্ত ছিল যা তিনি এ হাদীসে পাননি। ৩. ঐ হাদীসের প্রতিদ্বন্দ্বী হাদীসও তার কাছে পৌঁছেছিল যার কারণে বাধ্য হয়ে তিনি ঐ হাদীসের ভিন্ন কোন ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
এভাবে দশটি কারণ উল্লেখ করার পর তিনি বলেন, এগুলো তো খুব স্পষ্ট কারণ। অনেক হাদীসের ক্ষেত্রে এটাও সম্ভব যে, ইমামের কাছে তা গ্রহণ না করার এমন কোন কারণ রয়েছে যে সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণাই নেই। কারণ ইলমের ময়দান অনেক বিস্তৃত। আলিমদের সিনার মধ্যে এমন অনেক রহস্য লুকিয়ে রয়েছে যে সম্পর্কে আমাদের কোন অবগতি নেই। আলিমগণ কখনও তার দাবির সপক্ষে দলীল পেশ করেন আবার কখনো করেন না। যদি করেন তাহলে তা আবার কখনো আমাদের কাছে পৌঁছে আবার কখনো পৌঁছে না। আর পৌঁছলেও তা কখনো আমাদের বুঝে আসে আবার কখনো বুঝে আসে না। হাদীস সম্পর্কে যাদের ধারণা রয়েছে তারা সবাই জানেন যে, চার ইমামের নিকট অনেক সঠিক ও স্পষ্ট অর্থবহ হাদীস পৌঁছেছিল। কিন্তু অন্য কোন শক্তিশালী দলীলের কারণে তারা সেগুলোকে গ্রহণ করেননি।” (শরীআত ও ত্বরীকত কা তালাযুম, পৃষ্ঠা ৯৭)
উক্ত কিতাবে (শরীআত ও তরীকত কা তালাযুম) তিনি আরো লিখেছেন- বজলুল মজহুদের ৫খ-, ১৩৭ পৃষ্ঠায় باب السارق يسرق مرارا -এর মধ্যে একাধিক বার চুরি করলে চোরকে হত্যা করা হবে এ মর্মের অনেকগুলো হাদীস আনা হয়েছে। পরে হযরত শায়খ ইবনুল কাইউম (র.) থেকে এ কথা বর্ণনা করা হয়েছে যে, হযরত ইমাম আহমদ (র.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনি এসব হাদীস গ্রহণ করেননি কেন? তিনি উত্তর দিলেন, হযরত উসমান (রা.)-এর এক হাদীসের উপর ভিত্তি করে, যার মধ্যে বলা হয়েছে, কোন মুসলমানকে শুধু তিন অবস্থায় কতল করা জায়িয আছে, আর তার মধ্যে চুরি করার কথা নেই। বজলুল মজহুদের মধ্যে এ ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনা করা হয়েছে। আমার তো এখানে এটা বলা উদ্দেশ্য যে, চোরকে হত্যা করা সংক্রান্ত হাদীস হযরত ইমাম আহমদ (র.)-এর কাছে পৌঁছেছে কিন্তু তিনি এর উপর আমল করেননি। পানি সংক্রান্ত ব্যাপারে হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র.)-এর মাযহাব দুই কুল্লা ওয়ালা। অথচ বি’রে বুদাআ’র হাদীসকে তিনি সঠিক বলেছেন। যেমন মুগনী কিতাবের ১ম খ-, ২৫ পৃষ্ঠায় রয়েছে। (শরীআত ও ত্বরীকত কা তালাযুম, পৃষ্ঠা ৯৬)
আল্লামা শায়খ হাবীব আহমদ আল-কায়রাওয়ানী (র.) বলেন- সহীহ হাদীসই আমার মাযহাব এ বক্তব্যের বাস্তবতা বা মূল অর্থ হল- (ইমামগণ বলেন, আমাদের প্রদত্ত প্রতিটি (ফিকহী সমাধান বা মাসআলার) দলীল আমাদের কথা নয়, বরং হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণীই মূল দলীল।
অতএব, তোমরা এ কথা ধারণা কর না যে, আমাদের কথা স্বতন্ত্র দলীল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথার বিপরীত আমাদের কোন কথা হলে আমরা আল্লাহ তাআলার দরবারে দায়মুক্তি ঘোষনা করছি। তবে এ বাস্তবতা এটি আবশ্যক করে না যে, কোন ব্যক্তি যে কোন হাদীসকে সহীহ বলবে আর সেটিই ইমাম শাফিঈ (র.)-এর মাযহাব হয়ে যাবে। (ইলাউস সুনান, আল্লামা শায়খ হাবীব আহমদ আল-কায়রাওয়ানী, দ্বিতীয় মুকাদ্দামাহ, পৃষ্ঠা-৬৪)
ইবনে আবিদীন শামী (র.) তাঁর রদ্দুল মুহতার কিতাবে ইমাম শা’রানী (র.) থেকে ইমামগণের উক্ত বাক্য (সহীহ হাদীসই আমার মাযহাব) উল্লেখ করে বলেন- এটি কোন আলিমের কাছে অপ্রকাশ্য নয় যে, ইমামগণের এ নসীহত ঐ সকল ব্যক্তিদের জন্য যারা এ নসীহতের যোগ্য। অর্থাৎ যারা নুসুস তথা কুরআন ও হাদীসভা-ারের উপর ব্যাপক গবেষণার সামর্থ রাখেন। মানসূখ বা রহিত হয়ে যাওয়া হাদীসগুলো সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন এবং যে হাদীসগুলো আমলযোগ্য তাও তাদের নখদর্পনে থাকে। (রদ্দুল মুহতার, ১ম খ-, ৬৭ পৃষ্ঠা)
ইবনে হাজার আসকালানী (র.) বলেন- এমন বহু হাদীস রয়েছে যা উলূমে হাদীসের শর্তানুযায়ী সহীহ; কিন্তু সে হাদীস রহিত হয়ে গেছে। (ফতহুল বারী, ১ম খ-, ৪১৩ পৃষ্ঠা)
কেবল সহীহ নয় বরং আমলযোগ্য হাদীসই গ্রহণীয়
ফাকীহুল ইরাক ইমাম ইবরাহীম নাখাঈ (র.) বলেন, আমি হাদীস শ্রবণ করি অতঃপর দেখি কোন হাদীস আমলযোগ্য আর কোন হাদীস আমলযোগ্য নয়। যেগুলো আমলযোগ্য সেগুলো আমি গ্রহণ করি। আর বাকীগুলো ছেড়ে দেই। (শরহু ইলালিত তিরমিযী , ১ম খ-, ৪১৩ পৃষ্ঠা)
ইমামুল মুজতাহিদীন ইবনে আবী লায়লা (র.) বলেন, কোন ব্যক্তি ফিকহুল হাদীস বা হাদীসের ফিকহ অর্জন করতে পারে না, যতক্ষণ না সে হাদীসভা-ারের কিছু গ্রহণ করে ও কিছু ছেড়ে দেয়। অর্থাৎ আমলযোগ্য হাদীসগুলো গ্রহণ করে ও যেগুলো আমলযোগ্য নয় সেগুলো ছেড়ে দেয়।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওহাব (র.) বলেন, যদি মালিক ইবনে আনাস ও লাইস ইবনে সা’আদ (রা.) না থাকত তাহলে আমি হালাক বা ধংস হয়ে যেতাম। কারণ আমি ধারণা করতাম হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যে সব হাদীস বর্ণিত হয়েছে সবই আমলযোগ্য। অপর বণর্নায় এসেছে, হাদীসের ইখতিলাফের কারণে আমি পথভ্রষ্ট হয়ে যেতাম। (ইবনে রজব হাম্বলী, শরহু ইলালিত তিরমিযী, ১ম খ-, ৪১৩ পৃষ্ঠা; ইবনে আবি হাতিম, মুকাদ্দামাতুল জারহি ওয়াত তা’দীল, পৃষ্ঠা- ২২)
কাযী ইয়ায (র.) আব্দুল্লাহ ইবনে ওহাব (র.)-এর কথাটি এভাবে বর্ণনা করেছেন: আব্দুল্লাহ ইবনে ওহাব (র.) বলেন, যদি মালিক ইবনে আনাস ও লাইস ইবনে সা‘আদ না থাকত তাহলে আমি পথভ্রষ্ট হয়ে যেতাম। আব্দুল্লাহ ইবনে ওহাব (র.) এ কথা বললে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো আপনি পথভ্রষ্ট হয়ে যেতেন কেন?
তিনি উত্তরে বলেন, আমি প্রচুর হাদীস সংকলন করেছিলাম। হাদীসের আধিক্য আমাকে দিশেহারা করে তোলে, তখন আমি উক্ত হাদীসগুলো ইমাম মালিক ও ইমাম লাইস (র.)-এর নিকট পেশ করি। তারা আমাকে বলেন তুমি এই এই হাদীস গ্রহণ কর এবং এই হাদীস ত্যাগ কর (তারতীবুল মাদারিক, খ–২, পৃষ্ঠা-৪১৭)
লা-মাযহাবীদের জন্য ইমাম মালিক (র.)-এর একটি উপযুক্ত জবাব
ইমাম শাফিঈ (র.) বলেন, ইমাম মালিক (র.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো ইবনে উয়াইনার নিকট যুহুরী (র.) থেকে অনেক হাদীস রয়েছে সে হাদীসগুলো তো আপনার নিকট দেখি না।
উত্তরে ইমাম মালিক (র.) বলেন, যে সকল হাদীস আমি সংকলন করেছি তার সবই যদি আমি বর্ণনা করি তাহলে আমি মানুষদের পথভ্রষ্ট করে দিব। (খতীব বাগদাদী (র.) ‘আল জামি’উ লি আখলাকির রাবি ওয়া আদাবিস সামি’ খ–২, পৃষ্ঠা-১০৯)
যে হাদীসের উপর ইমামদের আমল নেই তার হুকুম
ইমাম যাহাবী (র.) তাঁর ‘সিয়ারু আলামিন নুবালা’ কিতাবে বলেন, যে হাদীস গ্রহন করা থেকে ইমামগণ বিরত থেকেছেন উক্ত হাদীস অনুযায়ী আমল করা জায়িয নেই, যদিও হাদীসটি সহীহ হয় না কেন। (ইমাম যাহাবী (র.), সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, খ–১৬, পৃষ্ঠা-৪০৪)
ইবনে রজব হাম্বলী (র.)-এর দৃষ্টিভঙ্গি
হাফিয ইবনে রজব হাম্বলী (র.) বলেন, হাদীসের ইমামগণ ঐ সকল সহীহ্ হাদীসের অনুসরণ করেছেন, যে হাদীসগুলো সাহাবাগণের নিকট ও পরবর্তী ইমামগণের নিকট আমলযোগ্য ছিল, অথবা তাদের কোন এক দলের নিকট আমলযোগ্য ছিল। এজন্যে ইমামগণ কোন হাদীসকে বর্জন করলে উক্ত হাদীসের উপর আমল করা জায়িয নেই। কেননা তারা উক্ত হাদীসকে এ কথা জেনেই বর্জন করেছেন যে, উক্ত হাদীসের উপর আমল করা হবে না। (فضل علم السلف علي الخلف পৃষ্ঠা-৯, সূত্র: আসারুল হাদীস, পৃষ্ঠা-৭৮)
হাদীসের উপর আমল করতে হলে কি জানতে হয়
হাদীসের উপর আমল করতে হলে কি জানতে হয় এ প্রসঙ্গে শায়খুল হাদীস আল্লামা যাকারিয়া সাহেব তদীয় ‘শরীআত ও ত্বরীকত কা তালাযুম’’ পুস্তকে একটি সুন্দর আলোচনা করেছেন। তিনি লিখেছেন- হাদীসের উপর আমল করার জন্য উসূলে হাদীস জানা থাকা জরুরী। নমুনাস্বরূপ কিছু উল্লেখ করা হল। এগুলো ছাড়াও হাফিয ইবনে হাজার (র.) যে কয়েকটি প্রকার জানা জরুরী বলেছেন তা হলো: ১. হাদীসে মাকলূব ২. হাদীসে মদ্বতারাব ৩. হাদীসে মুস্হাফ ৪. হাদীসে মুহাররাফ ৫. হাদীসে মারফু ৬. হাদীসে মাকতু ৭. হাদীসে মুসনাদ ৮. হাদীস আল উলূউল মুতলাক ৯. হাদীসে আল উলূউন নাসাবী ১০. হাদীস আল মুয়াফাকা ১১. হাদীসে বদলে মুসাওয়াত ১২. হাদীসে মুসাফাহা ১৩. হাদীসে নুযুলে আকরান ১৪. হাদীসে মুদাব্বাজ ১৫. হাদীসে রিওয়ায়াতুল আকাবির আনিল আসাগির ১৬. হাদীসে আস’সাবিক ১৭. হাদীসে আল’লাহিক ১৮. হাদীসে মুসালসাল ১৯. হাদীসে মুত্তাফাক ২০. হাদীসে মুফতারাক ২১. হাদীসে মুতালাফ ২২. হাদীসে মুখতালাফ ২৩. হাদীসে মুতাশাবিহ।
হাদীস বুঝার জন্য এতটুকই যথেষ্ট নয় যে, হাদীসের অনুবাদ পড়ে মুহাদ্দিস হয়ে যাবে এবং হাদীস দ্বারা মাসআলা বের করা শুরু করে দিবে। হাফিয ইবনে হাজার (র.) তার “নুখবাতুল ফিক্র” নামক কিতাবে একথাও লিখেছেন যে, এই সংক্ষিপ্ত কিতাবে এ বিষয়ের আলোচনা সম্ভব নয়। এর জন্য অনেক বড় কিতাবের প্রয়োজন। সুতরাং কোন হাদীসের কিতাবের অনুবাদ পড়ে নেয়া কিংবা কোন ফাযায়িলের কিতাব দেখে নেয়াই যথেষ্ট নয়। মুহাদ্দিস হওয়া অনেক কঠিন কাজ। তেমনিভাবে কুরআন পাকের অনুবাদ পড়ে নিজেকে কুরআন পাকের প-িত মনে করাও আহাম্মকী ও বোকামী। কুরআন বুঝার জন্য শুধু অনুবাদ পড়াই যথেষ্ট নয়। কুরআন বিষয়ক বিশদ ইল্ম হাসিল করার পূর্বে নিজেকে কুরআনের গবেষক মনে করলে মারাত্মক ভুলের মধ্যে পড়ে যেতে হয়।
আহলে হাদীসের জনৈক ব্যক্তির আমল ছিল, সে ইস্তিঞ্জা করার পর বিতির নামায পড়ত। কেউ তাকে প্রশ্ন করল, তুমি এটা কিসের নামায পড়? সে উত্তর দিল, হাদীসে আছে- من استجمر فليوتر অর্থাৎ ‘যে ব্যক্তি ইস্তিঞ্জা করবে তার বিতির পড়া উচিত।’ অথচ হাদীসের অর্থ হল, যে ব্যক্তি ইস্তিঞ্জা করবে তার জন্য বে-জোড় সংখ্যক ঢিলা ব্যবহার করা উচিত। এখানে সে বেজোড় সংখ্যা ঢিলার কথা বুঝতে না পেরে বে-জোড় রাকাত নামাযের কথা বুঝতে পেরেছে, তথা বিতিরের নামাযের অর্থ বুঝেছে।
তেমনিভাবে এক লোক তার কূপের পানি অন্য লোকের ক্ষেতের জন্য দিত না, কঠোরভাবে সে এতে বাঁধা দিতো। সে এর কারণ বলত হাদীসে আছে,لايسقى احدكم مائه زرع غيره! অর্থ : “কেউ যেন তার পানি অন্যের ক্ষেতে সেচন না করে”। অথচ হাদীসের উদ্দেশ্য হল, অন্তঃসত্ত্বা দাসী খরিদ করার পর যেন তার সাথে সহবাস না করে। হাদীসে পানি দ্বারা বীর্য বুঝানো হয়েছে, আর ক্ষেত দ্বারা মহিলার লজ্জাস্থানকে বুঝানো হয়েছে। এ ধরনের আরো অনেক উপমা রয়েছে যা আল্লামা ইবনে জাওযী ‘তালবীসে ইবলীস’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
আবূ দাউদ শরীফে আছে, জনৈক ব্যক্তি হযরত ইমরান বিন হুসাইন (রা.) কে বলল, আপনি এমন অনেক হাদীস বর্ণনা করেন যার কোন ভিত্তি কুরআনে নেই। একথা শুনে তিনি রাগান্বিত হয়ে বললেন, তুমি কুরআনে কোথাও কি একথা পেয়েছো যে, প্রতি চল্লিশ দিরহামে এক দিরহাম যাকাত দিতে হবে। এতগুলো ছাগল হলে এত যাকাত দিতে হবে, এতগুলো উট হলে এত যাকাত দিতে হবে? এসব কথা কুরআন পাকের কোথাও পেয়েছ? সে বলল, না। তখন তিনি বললেন, কুরআনে নেই তো এগুলো পেলে কিভাবে বা এর উপর আমল কর কিভাবে? তুমি এগুলো আমার থেকে শিখেছ আর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শিখেছি। এমনিভাবে তিনি আরো মাসআলার কথা বললেন যেগুলোর বর্ণনা কুরআনে নেই। এ দ্বারা বুঝা গেল যে, কুরআন পাকের উপর আমল করার জন্য হাদীসের জ্ঞান থাকা অতীব জরুরী। আর কুরআন ও হাদীস বুঝার জন্য আবার ঐসব বিষয় জানা জরুরী যার বর্ণনা ইতোপূর্বে করা হয়েছে। (শরীআত ও ত্বরীকত কা তালাযুম, শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা যাকারিয়া, পৃষ্ঠা-৫৯-৬০)।
সর্বক্ষেত্রে সহীহ হাদীস দিয়ে দলীল গ্রহণের ভ্রান্ত দাবি
লা-মাযহাবী আহলে হাদীস নামধারীরা সর্বক্ষেত্রে সহীহ হাদীস দিয়ে দলীল গ্রহণের দাবি করে থাকে। অথচ এ দাবিটি ভ্রান্ত। মুহাদ্দিসীনে কিরাম ফযীলতের ক্ষেত্রে যঈফ হাদীসকেও দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে হাদীসের ইমামগণের কয়েকটি সিদ্ধান্ত উল্লেখ করা হলো।
আল্লামা আব্দুল হাই লাখনভী (র.) তাঁর الاجوبة الفاصلة কিতাবের ৩৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-
و قد قال الامام احمد و غيره من الائمة: اذا روينا في الحلال والحرام شددنا واذا روينا في الفضائل و نحوها تساهلنا. (كذا في الكفاية للخطيب البغدادي)
অনুবাদ : ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ও অপর অনেকে বলেন, যখন আমরা হালাল ও হারাম বিষয়ে কোন বর্ণনা পেশ করি তখন (সনদের ক্ষেত্রে) কঠোরতা অবলম্বন করি। আর যখন ফযীলতের ক্ষেত্রে কোন বর্ণনা পেশ করি তখন উদারতা অবলম্বন করি। (এরূপই বর্ণিত হয়েছে খতীবে বাগদাদীর ‘কিফায়াহ’ গ্রন্থে)
একই দিনে জুম’আ ও আরাফা অনুষ্ঠিত হওয়ার ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস
افضل الأيام يوم عرفة إذا وافق يوم الجمعة فهو أفضل من سبعين حجة.
অনুবাদ : উত্তম দিন হচ্ছে আরাফার দিন এবং যদি সেদিনের সাথে জুম’আর দিন একত্রিত হয় তবে তা সত্তরটি হজ্জের চেয়েও উত্তম।
হাদীসখানাকে কেউ কেউ যঈফ বলে থাকেন। মোল্লা আলী কারী (মৃত্যু-১০১৪হি.) রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাদের জবাবে বলেন,
فإن الحديث الضعيف معتبر في فضائل الأعمال عند جميع العلماء من ارباب الكمال. (الحظ الاوفر في الحج الاكبر)
অনুবাদ: সকল শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কিরামের নিকট ফাযায়েলে আমলের ক্ষেত্রে যঈফ হাদীস গ্রহণযোগ্য। (আল হায্যুল আউফার)
মোল্লা আলী কারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ওযূতে ঘাঢ় মাসেহ করা সম্পর্কে তার ‘আল-মাওদুআত’ কিতাবে লিখেন-
وَالضَّعِيفُ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ اتفَاقًا وَلِذَا قَالَ أَئِمَّتنَا إِنَّ مَسْحَ الرَّقَبَةِ مُسْتحَبٌّ أَوْ سُنَّةٌ.
অনুবাদ: উলামায়ে কিরামের সর্বসম্মত মত হল, ফাযায়িলে আমালের ক্ষেত্রে যঈফ হাদীসের উপর আমল করা যাবে। এ কারণে আমাদের আলিমগণ বলেন, ঘাঢ় মাসেহ করা মুস্তাহাব বা সুন্নত।
ইমাম মুহিউদ্দীন আবূ যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবনে শরফ নববী (র.) (৬৩১-৬৭৬ হি.) তাঁর ‘তাকরীব’ কিতাবে লেখেন-
ويجوز عند أهل الحديث وغيرهم التساهل في الأسانيد ورواية ما سوى الموضوع من الضعيف والعمل به من غير بيان ضعفه في غير صفات الله تعالى والأحكام (التقريب والتيسير للنووي)
অনুবাদ: হাদীস বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্য উলামায়ে কিরামের নিকট সনদের ক্ষেত্রে উদারতা অবলম্বন ও মাওযু ব্যতীত যঈফ হাদীস রেওয়ায়েত করা এবং এর উপর আমল করা জায়িয। হাদীসের দুর্বলতা উল্লেখ না করেও জায়িয। তবে তা অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার সিফাত ও বিধান বর্ণনার ক্ষেত্রে নয়। (আততাকরীব ওয়াত্তাইসীর লিন নববী)
মুহাদ্দিসগণের নিকট শরীআতের আহকাম ও আকাইদ ব্যতিত সকল ক্ষেত্রে যঈফ হাদীসও বর্ণনাও জায়িয। এমনকি যঈফ হাদীসের দুর্বলতার উপর তাম্বীহ করাও আবশ্যক নয়। মোট কথা উপদেশ, আমলের ফযীলত, তারগীব ও তারহীবের ক্ষেত্রে যঈফ হাদীস বর্ণনা জায়িয। এ প্রসঙ্গে হাফিয ইবনুস সালাহ তার مقدمة গ্রন্থে লেখেন-
يجوز عند أهل الحديث وغيرهم التساهل في الأسانيد ورواية ما سوى الموضوع من أنواع الأحاديث الضعيفة من غير اهتمام ببيان ضعفها فيما سوى صفات الله تعالى وأحكام الشريعة من الحلال والحرام وغيرهما . وذلك كالمو