Showing posts with label ইসলামিক বিশ্ব. Show all posts
Showing posts with label ইসলামিক বিশ্ব. Show all posts

Tuesday, 20 October 2020

রাসূল (সা.) এর শুভ জন্মের তারিখ--আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী

বিশ্বের ধর্মপ্রাণ অগণিত মুসলমান রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখকে রাসূল (সা.) এর বরকতময় শুভ জন্মের দিন বলে বিশ্বাস করেন। গুরুত্ব সহকারে গরীব মিসকিনদেরকে সাদকা করেন। বিবিধ সাওয়াবের কাজ করেন, মাহফিলে মিলাদ ও আলোচনা সভা করেন।
গোপন কৌশলে যারা মুসলমানের অন্তর থেকে ইশকে রাসূল (সা.) বিদূরিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত তারা রবিউল আউয়াল মাসের ঐ দিনের গুরুত্ব হ্রাস করার কাজে বড় ব্যতিব্যস্ত থাকেন। তাদের অপ্রয়োজনীয় কষ্ট দূর করার মতো কোনো ঔষধ আমাদের কাছে নেই। তবে তাদের আরও বিচলিত করার মতো কাজে আশিকানে মুস্তফা যে সাধ্যমতো চেষ্টা করেন এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
গোপন কৌশল অবলম্বনে লিপ্ত ব্যক্তিদের প্রচেষ্টার মধ্যে একটি হলো, শুভ জন্মের তারিখ সম্পর্কে জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি করে মুবারক দিনের গুরুত্ব হ্রাস করার চেষ্টা করা। তাই এ বিষয়ে কিছু তথ্য পেশ করা জরুরী মনে করছি। রাহমাতুল্লিল আলামীন হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.) এর শুভ জন্মের তারিখ যে সোমবার এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। এ বিষয়েও উলামায়ে কিরাম প্রায় একমত যে, যে মাসে রাসূল (সা.) জন্মগ্রহণ করেন, সে মাসের নাম রবিউল আউয়াল।
ইসলামের সঠিক ইতিহাস যে সকল নির্ভরযোগ্য মুসলিম ঐতিহাসিকগণের মাধ্যমে সংরক্ষিত আছে, তাদের মধ্য থেকে অন্যতম কয়েকজনের উক্তি নিম্নে উদ্ধৃত হলো,
১) ইবনে জারীর যিনি প্রথম শ্রেণির মুফাসসীর বলে নিরীক্ষকগণের নিকট স্বীকৃত, তিনি তারীখে তাবারী ২য় খণ্ডে এ বিষয়ে সুচিন্তিত নিম্নরূপ অভিমত পেশ করেছেন, রাসূল (সা.) (আমুল ফিলে, অর্থাৎ যে বছর আবরাহা কা’বা শরীফ ধ্বংস করার জন্য এসেছিল) রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ জন্মগ্রহণ করেন।
২) আল্লামা ইবনে খালদুন যিনি ইতিহাস ও দর্শন বিষয়ের ইমাম বলে সুপরিচিত। তিনি তারিখে ইবনে খালদুন ২য় খ-ে এ বিষয়ে লিখেছেন, আমুল ফিলে রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ রাসূল (সা.) জন্মগ্রহণ করেন। পারস্যের সম্রাট নওশেরওয়ার রাজত্বকালের চল্লিশতম বৎসর ছিল।
৩) ইমাম মুহাম্মদ বিন ইসহাকের এ বিষয়ে উক্তি নি¤œরূপ,
রাসূল (সা.) ১২ রবিউল আউয়াল মাসে আমুল ফিলে সোমবার দিনে জন্মগ্রহণ করেন। কুরআন, সুন্নাহ এবং সীরাত বিষয়ে মুসলিম জাতির দিকদর্শক গুণি-জ্ঞানীগণের উক্তি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার হলো রাসূল (সা.) এর শুভ জন্ম তারিখ। তাই তারা অন্য কোনো অভিমতের উল্লেখও করেননি।
প্রখ্যাত মুফাসসীর আল্লামা ইবনে কাছীর তৎপ্রণীত সীরাত গ্রন্থে লিখেছেন, রাসূল (সা.) সোমবার দিন জন্মগ্রহণ করেন। ইমাম মুসলিম (র.) সহীহ মুসলিম শরীফে হাদীস উদ্ধৃত করেছেন যে, এক বেদুঈন নিবেদন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সোমবারের রোযা সম্পর্কে আপনি কি মন্তব্য করেন? হুযূর (সা.) উত্তরে বললেন, এই দিন ঐ দিন যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনে আমার উপর ওহী অবতীর্ণ হয়।
তারপর আল্লামা ইবনে কাছীর লিখেছেন, হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, রাসূল (সা.) এর জন্ম হয় সোমবার দিন। মক্কা শরীফ থেকে সোমবার দিনে হিজরত করেন। মদীনা মুনাওয়্যারায় সোমবার দিনে পৌঁছেন। ইন্তিকাল করেন সোমবার দিন। যে দিনটিতে হাজরে আসওয়াদ পবিত্র হাতে যথাস্থানে স্থাপন করেন সে দিনটিও ছিল সোমবার। তারপর ইবনে কাছীর বলেন, জমহুরের মত হলো রাসূল (সা.) ১২ রবিউল আউয়াল তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। 
ভারত উপমহাদেশের অন্যতম শায়খুল হাদীস হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (র.) মাদারিজুন্নুবুওয়াত কিতাবে উল্লেখ করেন, “সঠিকভাবে অবগত হও জমহুর সীরাতবেত্তাগণ ও ঐতিহাসিকগণের মতে রাসূল (সা.) ‘আমুল ফিলের’ (আবরাহার ধ্বংসের) চল্লিশ দিন বা ৫৫ দিন পর জন্মগ্রহণ করেন।” উল্লেখিত মত সবচেয়ে বিশুদ্ধ।
সুখ্যাত সুপরিচিত মত হলো মাস ছিল রবিউল আউয়াল এবং তারিখ ছিল ১২। শায়খুল হাদীস আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (র.) তারপর কয়েক ছত্র ফার্সি কবিতা লিখেছেন। নিম্নে তিন ছত্র কবিতার ভাবার্থ উদ্ধৃত হলো,
১) “রাসূল (সা.) এর জন্মের রাত কত রৌশন রাত ছিল। মক্কা শরীফের দরজা থেকে শামের এলাকা পর্যন্ত রৌশন হয়েছিল।
২) যে কোনো ধরনের লু-হাওয়া সে ঘাসকে শুস্ক করতে পারেনা, যে ঘাসকে সতেজ রেখেছে রাসূল (সা.) এর কৃপাদৃষ্টি।
৩) আল্লাহতাআলার শোকর দুনিয়া ও দ্বীনের সব নিআমত আমি (হক্কি) লাভ করেছি। ঐ বাদশাহ অর্থাৎ রাসূল (সা.) এর দৌলতখানা থেকে।”
শুনা যায় কেউ কেউ জনৈক মাহমুদ পাশা জ্যোতির্বিদের মত ব্যক্ত করেছেন যে, শুভ জন্মের তারিখ ছিল রবিউল আউয়াল মাসের ৯ তারিখ। মুসলিম সমাজের দিকদর্শক গুণি-জ্ঞাণীগণের অভিমতের বিরুদ্ধে জনৈক ব্যক্তির জ্যোতির্বিদ্যা নির্ভর উক্তির মূল্য কতটুকু বিজ্ঞ পাঠক সহজেই অনুমান করতে পারেন। জাস্টিজ পীর করমশাহ আল আযহারী (র.) দ্বিয়াউন্নবী কিতাবে মাহমুদ পাশার উক্তি উদ্ধৃত করেছেন। তারা মাহমুদ পাশাকে এবং তার দেশ কোথায় এ সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
অনেকের মতে মাহমুদ পাশা ছিলেন মিশরের অধিবাসী, আবার অনেকের মতে মক্কাবাসী, আবার অনেকের মতে তুরস্কবাসী। যদি ধারণা করা হয় যে, মাহমুদ পাশা জ্যোতির্বিদ্যার আলোকে এ বিষয়ে কিছুটা নিরীক্ষণ করে একটি অভিমত পেশ করেছেন। তবে সাহাবায়ে কিরাম তাবেঈন ও সুখ্যাত মুসলিম মনীষীগণের মতামতের বিপরীত ঐ ব্যক্তির নিরীক্ষণকে সঠিক বলা যায় না।
অবশেষে বলা যায় জ্যোতির্বিদগণ রাসূল (সা.) এর শুভ জন্মের তারিখ সম্পর্কে নিরীক্ষণ করে যদিও বিবিধ মত প্রকাশ করেছেন, কিন্তু এতো বড় গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন ঠিক করার দায়িত্ব কেবলমাত্র জ্যোতির্বিদদের হাতে ন্যস্ত করা যায় না। মুসলমানগণ গুরুত্ব সহকারে পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখের দিন ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) হিসেবে পালন করে আসছেন এবং কিআমত পর্যন্ত এ আমল জারি থাকবে ইনশাআল্লাহ।

ইয়াকুবিয়া হিফজুল ক্বুরআন বোর্ডের আত্মপ্রকাশ


RTN tv Live, বড়খলা, ২০ অক্টোবরঃ-  হাফিজিয়া মাদ্রাসা গুলোকে    নিয়ে একটি বোর্ড গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে  আসছিলেন একাংশ   আলীম-উলামা ও হাফিজিয়া মাদ্রাসার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকরা। আর এই প্রয়োজনের তাগিদে রবিবার  আত্মপ্রকাশ করলো "ইয়াকুবিয়া হিফজুল ক্বুরআন বোর্ড"। এ উপলক্ষে  রবিবার বাবুর বাজার হাফিজিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এক সাধারণ আয়োজন করা হয়। 

পালংঘাট হাইয়ার সেকেণ্ডারী স্কুলের প্রিন্সিপাল হজরত মাও আনোয়ার উদ্দিন তালুকদারের পৌরহিত্যে আয়োজিত সভায় হাফিজিয়া মাদ্রাসার বোর্ড গঠনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বক্তব্য রাখেন, বড়যাত্রাপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসার প্রধান হাফিজ মাও একরাম আলী, বড়হাইলাকান্দি সিনিওর মাদ্রাসার শিক্ষক হজরত মাও  তাজিম উদ্দিন তালুকদার, আল হিলাল ইসলামিক একাডেমির প্রিন্সিপাল মাওলানা মুজাহিরুল হক চৌধুরী, তারিনীপুর মোহাম্মদিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক, হাফিজ আতিকুল হক, দুধপুর নুরানিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক হাফিজ রুহুল আমীন প্রমুখ।  তারা প্রত্যেকেই হাফিজিয়া মাদ্রাসার শৈক্ষিক পরিবেশ আরও উন্নতি করতে এবং যুগের চাহিদা অনুযায়ী  বোর্ড গঠনের উপর সম্মতি প্রদান করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে " ইয়াকুবিয়া হিফজুল ক্বুরআন বোর্ড" নামে   হাফিজিয়া মাদ্রাসাগুলো কে নিয়ে একটি নতুন  বোর্ডের আত্মপ্রকাশ হয়। প্রাথমিক ভাবে সাতটি হাফিজিয়া মাদ্রাসা এই বোর্ডের অধিনে চলে এসেছে। এরা হলো, বাবুর বাজার হাফিজিয়া মাদ্রাসা, তারিনীপুর মোহাম্মদিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা, দুধপুর নুরানিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা, কান্দিগ্রাম হাফিজিয়া মাদ্রাসা, বড়যাত্রাপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসা, সোনাপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসা এবং সরিষাকুড়ি হাফিজিয়া মাদ্রাসা। এছাড়াও গাইডলাইন মেনে যেকোনো হাফিজিয়া মাদ্রাসা বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে।  নবগঠিত হিফজুল ক্বুরআন বোর্ডের সভাপতি ও সহ সভাপতি  নির্বাচিত হয়েছেন হাফিজ একরাম আলী ও হাফিজ সেলিম উদ্দিন।  ক্বারি মাও কিরামত আলী কে সাধারণ সম্পাদক ও হাফিজ রুহুল আমীন কে সহ সম্পাদক মনোনীত করা হয়।  বোর্ডের অন্যান্য সদস্যরা হলেন, হাফিজ নজমুল হুসেন (সোনাপুর), হাফিজ আতিকুল হক (কাটিগড়া), হাফিজ এনামুল ইসলাম (সরিষাকুড়ি), হাফিজ ছালাম উদ্দিন (কান্দিগ্রাম) এবং জানাব ইসলাম উদ্দিন। এছাড়াও উপদেষ্টা মণ্ডলী গঠন করা হয়। উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্যরা হলেন, হজরত মাও আনোয়ার উদ্দিন তালুকদার, হযরত মাও রফিকুল ইসলাম,  ক্বারি তাজিম উদ্দিন তালুকদার ও হযরত মাও মুজাহিরুল হক।

Thursday, 27 August 2020

আহলে বায়তের প্রতি মুহাব্বাত ঈমানের বহিঃপ্রকাশ'--হযরত আল্লামা নজমুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী

'আহলে বায়তের প্রতি মুহাব্বাত ঈমানের বহিঃপ্রকাশ'
--হযরত আল্লামা নজমুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী

বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদরাসার  অধ্যক্ষ (অব.) হযরত আল্লামা নজমুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী বলেছেন মহাপাপী এজিদের প্রতি লানত এবং আহলে বায়তের প্রতি মুহাব্বাত প্রদর্শন ঈমানের বহি:প্রকাশ। প্রকৃত মুমিন ব্যক্তি কখনো এজিদকে সমর্থন করতে পারেনা। কেননা সে আহলে বায়তের প্রতি ইতিহাসের জঘন্যতম নৃশংস কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আহলে বায়তের প্রতি চরম বিদ্বেষের পরিচয় দিয়েছে,কাবা শরীফে আগুন জ্বালিয়েছে,পবিত্র মদীনা শরীফে তিন দিন পর্যন্ত লুণ্ঠন,সাহাবিদের উপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ এমনকি ঈমানদার নারীদের ইজ্জত হরণ করিয়েছে।এজন্য সে আল্লাহ,রাসুল এবং মুমিনের লানতযোগ্য, নিষ্টুর, মহাপাপী হিসেবে ধিকৃত হয়ে থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত।

তিনি আরো বলেন-এজিদের প্রেতাত্নাদের খপ্পর থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। নচেৎ নরকের পথিক হওয়ার আশংকা থাকবে। 
 
২০১৬ সালের ১০ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত আনজুমানে তালামিযে ইসলামিয়া কাজলসার ইউপি শাখার উদ্দোগে আটগ্রামে 'আশূরার তাৎপর্য শীর্ষক' সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।

Tuesday, 25 August 2020

দলীল গ্রহণে সহীহ হাদীস : একটি পর্যালোচনা -আল্লামা মুফতী গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী

দলীল গ্রহণে সহীহ হাদীস : একটি পর্যালোচনা 
-আল্লামা মুফতী গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী

সহীহ শব্দের শাব্দিক অর্থ শুদ্ধ বা সুস্থ, যার বিপরীত ‘সাকীম’ বা অসুস্থ। কিন্তু মুহাদ্দিসীনগণের নিকট সহীহ একটি পরিভাষা। এটি হাদীসের সর্বোচ্চ স্তর। এছাড়াও হাদীসের বিভিন্ন পরিভাষা রয়েছে। যেমন হাসান, গরীব, যঈফ ইত্যাদি। কোন মুহাদ্দিসই সহীহ ছাড়া অন্যান্য স্তরকে বাতিল বলেননি। বিভিন্ন মুহাদ্দিসীনের নিকট হাদীস সহীহ হওয়ার জন্য বিভিন্ন মাপকাঠি রয়েছে। তাই একজন মুহাদ্দিসের মাপকাঠিতে কোন হাদীস সহীহ না হলেও অন্য মুহাদ্দিসের শর্তে তা সহীহ হতে পারে এবং উসুলে হাদীসের পরিভাষায় সহীহ নয় এমন সকল হাদীসই প্রত্যাখ্যানযোগ্য নয়। যেমন সহীহ এর সকল শর্ত পূরণ না করলে কোন হাদীস হাসান হতে পারে। এটিও বিশুদ্ধ হাদীসের একটি প্রকার। তাই কেবল সহীহ হাদীস দিয়ে দলীল তলব করাও এক প্রকার ভুল। সিহাহ সিত্তার কোনো সংকলক কোনো হাদীসকে সহীহ বলেছেন। কিন্তু ইমাম বুখারী (র.)-এর মাপকাঠিতে তা সহীহ এর পর্যায়ে পড়েনি বলে তিনি তাঁর কিতাবে তা সংকলন করেননি। তাই বলে এরূপ হাদীস আমলযোগ্য নয় বা দলীল হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না- এমন মন্তব্য করা উসূলে হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক। বর্তমানে গায়র মুকল্লিদগণ একটি বিষয় বেশি বেশি বলে থাকেন যে, দলীল গ্রহণের জন্য চাই সহীহ হাদীস। কোন গায়র সহীহ (হাসান, যঈফ স্তরের) হাদীস দিয়ে দলীল প্রদান করা যাবে না। কারণ তা গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদেও বক্তব্য হলো, যদি সর্বক্ষেত্রে সহীহ হাদীস দিয়ে দলীল প্রদান করতে হয় তাহলে হাদীস সহীহ কিংবা দুর্বল হওয়ার বিষয়টিও মারফূ হাদীস দিয়ে প্রমাণ করতে হবে। লা-মাযহাবীদের কাছে প্রশ্ন, তারা কি সারা জীবন চেষ্টা করে কোন হাদীস অর্থাৎ রাসূলে পাক (সা. )-এর উক্তি কিংবা সাহাবায়ে কিরামের উক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে পারবেন যে, কোন হাদীসটি সহীহ, আর কোনটি সহীহ নয়? নিশ্চয় তারা পারবেন না।
কোন হাদীস তো এমনি এমনি সহীহ বা যঈফ হয় না। হাদীসের মান নির্ধারিত হয় বর্ণনাকারীর অবস্থার দ্বারা। রাবী বা বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য হলে হাদীস সহীহ, বর্ণনাকারীর মধ্যে ত্রুটি থাকলে হাদীস যঈফ ইত্যাদি হয়ে থাকে। আর রাবীদের বর্ণনা হাদীসে নেই। এটি উসুলে হাদীসের আওতাধীন আলাদা একটি বিষয়। যার নাম হচ্ছে اسماء الرجال, এটি শুরু হয়েছে হাদীস সংকলনের সময় থেকে। তাবিঈগণের শেষ যুগে তথা ১৫০ হিজরীর দিকে এসে আইম্মায়ে হাদীস রাবীগণের তা’দীল ও তাজরীহ সম্পর্কে পর্যালোচনা করেন। এদের মধ্যে রয়েছেন- আল-আ’মাশ (র.), শু’বা (র.) মা’মার (র.), হিশাম আদ-দাস্তাওয়াঈ (র.), আওযাঈ (র.) প্রমূখ। এরা সকলেই ১৫০ হিজরীর পরের লোক। তাঁদের লিখিত অমর গ্রন্থসমূহের উপর ভিত্তি করেই হাদীসের মানদ- নিরূপন করা হয় বা হয়েছে। সহীহ, হাসান, গরীব, যঈফ, মুতাওয়াতির, মাশহুর ইত্যকার পরিভাষাও তাঁদের উদ্ভাবিত। লা-মাযহাবী আহলে হাদীস নামধারীগণ সহীহ হাদীস ছাড়া অন্য কোনো হাদীস মানেন না। অথচ হাদীস অবতরণের পথ রুদ্ধ হওয়ার পর অর্থাৎ সায়্যিদুল মুরসালীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তিকালের প্রায় দুই শত বছর পর যে পরিভাষা উদ্ভাবিত হয়েছে তা মানেন এবং তা দিয়ে মুহাদ্দিসীনে কিরাম হাদীসের যে মানদ- বিচার করেন তাও মানেন। এটা কি তাকলীদ নয়? নাকি ১২শ বছর আগের হাদীস বর্ণনাকারীগণের সাথে তাদের চলাফেরা, উঠাবসা হয়েছে যার ফলে তারা রাবীগণের নির্ভরযোগ্যতা নিজে যাচাই করেছেন? পাঠকগণ তাদের আত্মপ্রবঞ্চনার বিচার করবেন।
প্রথমেই আমাদের জেনে রাখা অত্যাবশ্যক যে হাদীস বিশারদগণ হাদীসকে প্রধানত চারটি ভাগে বিভক্ত করেছেন। আর তা হলো সহীহ, হাসান, যঈফ ও মাওযূ।
লা-মাযহাবীদের কেউ কেউ যঈফ ও মাওযূকে একত্রিত করে ফেলেন। অথচ মুহাদ্দিসীনে কিরামের অভিমত অনুযায়ী যে সকল হাদীসে সহীহ ও হাসান হওয়ার কোন একটি শর্তও পাওয়া যায় না তাকে যঈফ হাদীস বলা হয়। কিন্তু কোন হাদীসকে মাওযু বলা যাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তাতে বর্ণনাকারীর মিথ্যা বলা প্রমাণিত না হবে। সুতরাং যঈফ হাদীসকে মাওযূ বলা হাদীস বিশারদদের পরিভাষা সম্পর্কে অজ্ঞতারই পরিচায়ক। আর যঈফ হাদীসকে মিথ্যা, অনর্থক ইত্যাদি বলে তার উপর আমলকে হারাম মনে করা ইলমে হাদীসের সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞতারই পরিচয় বহন করে।
বুখারী শরীফ দিয়ে দলীল গ্রহণ
মুকাল্লিদীন হানাফীগণ যখন নিজেদের অবস্থানের পক্ষে কোন হাদীস প্রদর্শন করেন তখন গায়র মুকাল্লিদীনগণ প্রশ্ন করেন যে, ঐ হাদীস কি বুখারী শরীফে আছে? অথচ তাদেরও একথা জানা আছে যে, সকল মাসআলার হাদীস বুখারী শরীফে নেই। এমতাবস্থায় বুখারী শরীফের হাদীস দেখানোর যিম্মা না নিয়ে আমাদের প্রশ্ন, লা-মাযহাবীগণ এরূপ কোনো আয়াত বা হাদীস কি দেখাতে পারবেন, যাতে লেখা আছে যে, হাদীস দ্বারা দলীল দিতে হলে তা কেবল বুখারী শরীফে থাকতে হবে?
দ্বিতীয়ত: তাদের নিজেদের আমলকৃত সকল মাসআলার দলীল তারা বুখারী শরীফে দেখাতে পারবেন কি? যদি পারেন তাহলে আমাদের কাছে হাদীস তলব করুন।
অবশ্য এক্ষেত্রে বাস্তবতা হলো, তাদের আমলকৃত অনেক মাসআলার দলীল বুখারী শরীফে নেই। উপরন্তু তারা অনেক ক্ষেত্রে বুখারী শরীফে বর্ণিত অনেক হাদীসের উপর আমলই করে না। যার আলোচনা সামনে রয়েছে।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا.
‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ কর। আর তিনি যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাক।’’ কিন্তু কুরআন হাদীসের কোথাও কি একথা লিখিত আছে যে,وَمَا آتَاكُمُ البخاري فَخُذُوهُ ‘‘বুখারী যা নিয়ে এসেছেন তোমরা কেবল তা-ই মেনে চল।’’ যদি কুরআন হাদীসে এরূপ কোন কথা না থাকে তাহলে দলীল গ্রহণে শুধু বুখারী কিংবা বুখারী-মুসলিমের শর্তারোপ করা কিভাবে শুদ্ধ হয়?
তাছাড়া اصح الكتب بعد كتاب الله الصحيح البخاري এ কথা গায়র মুকাল্লিদগণও বিশ্বাস করেন। তাদের কাছে প্রশ্ন, কুরআন হাদীসে এরূপ কোন বর্ণনা কি আছে? তাহলে কিসের ভিত্তিতে তারা এটা মানেন? উপরোক্ত মন্তব্যের উপর ইজমা তো পরবর্তী ইমামগণের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে।
লক্ষ্যণীয় যে, ইমাম বুখারী (র.)-এর জন্ম ১৯৪ হিজরীতে এবং বুখারী শরীফ সংকলন সমাপ্ত হয় ২৩৩ হিজরীতে এবং পরবর্তীতে চার মাযহাবের উপর ইজমাও সংঘটিত হয়। তাহলে প্রশ্ন হল সকল আমল যদি বুখারী শরীফ দেখেই করতে হয় তা হলে বুখারী সংকলনের পূর্ববর্তী প্রায় সোয়া ২০০ বছর ইসলামী শরীআতের উপর কিভাবে আমল করা হলো? আর তখন বুখারী শরীফ না থাকায় এর উপর যারা আমল করে যেতে পারেননি তাদের অবস্থা কি হবে?
প্রকাশ থাকে যে, ইমাম বুখারী (র.)-এর নিজের উক্তি অনুযায়ী তাঁর এক লক্ষ সহীহ হাদীস মুখস্থ ছিল। তন্মধ্যে বুখারী শরীফে তাকরার ছাড়া প্রায় ৪ হাজার হাদীস লিপিবদ্ধ হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন হলো, বাকী ৯৬ হাজার সহীহ হাদীস কেবল বুখারী শরীফে সংকলিত না হওয়ায় কি আমলের অযোগ্য হয়ে গেল? ঐ হাদীসসমূহ অন্য কিতাবে সংকলিত হলে কি তার উপর আমল করা যাবে না?
বাস্তব কথা হলো, আহলে হাদীস নামধারী লা-মাযহাবী ঐ সকল লোকদের নিজেদেরই বুখারী শরীফের উপর আমল নেই। আমলতো দূরের কথা, তাদের ইমাম বুখারী (র.)-এর উপর পুরোপুরি আস্থাও নেই। ইমাম বুখারী (র.) সংকলিত অনেক হাদীস, তাঁর অনেক ইজতিহাদ ও আমলের উপর তাদের আমল নেই। প্রমাণস্বরূপ আলোচ্য পুস্তকে অনেকগুলো মাসআলা দেখানো হয়েছে যাতে প্রমাণ হয় যে গায়র মুকাল্লিদগণ ইমাম বুখারী (র.)-এর আকীদা, আমল ও ইজতিহাদের সাথে একমত নয়।
‘সহীহ হাদীসই আমার মাযহাব’ উক্তির সঠিক ব্যাখ্যা
ইমাম আবূ হানীফা (র.) সহ কোনো কোনো ইমামের একটি প্রসিদ্ধ উক্তি-
إذا صح الحديث فهو مذهبي অর্থাৎ সহীহ হাদীসই আমার মাযহাব।
আহলে হাদীস, লামাযহাবী, সালাফীগণ উক্ত ‘সহীহ হাদীসই আমার মাযহাব’ কথাটি দ্বারা বুঝাতে চান মাযহাবের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোন সহীহ হাদীস পাওয়া গেলে সহীহ হাদীসের উপর আমল করে মাযহাব ত্যাগ করাই একান্ত কর্তব্য। এটি তাদের অপব্যাখ্যা ছাড়া আর কিছু নয়।
সহীহ হওয়া সত্ত্বেও সব আয়াত ও হাদীসের উপর আমল করা যায় না
ত্রিশ পারা কুরআন শরীফ সন্দেহাতীতভাবে মুতাওয়াতির বর্ণনা দ্বারা লিপিবদ্ধ। এতে কোন ঈমানদারের সন্দেহ করার উপায় নেই। এখন প্রশ্ন হলো, লা-মাযহাবীরা কুরআন শরীফের প্রত্যেক আয়াতের উপর আমল করতে পারবেন কি?
নমুনাস্বরূপ কুরআন শরীফের কয়েকটি আয়াত নি¤েœ পেশ করা হলো-
১. এবং খর্জুর বৃক্ষের ফল ও আঙ্গুর হতে তোমরা মাদক ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাক। (সূরা নাহল, আয়াত-৬৭)
২. লোকে তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, বল উভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ এবং মানুষের জন্য উপকারও; কিন্তু এদের পাপ উপকার অপেক্ষা অধিক। (সূরা বাকারা, আয়াত-২১৯)
৩. হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মুর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক সব ঘৃণ্য বস্তু শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা মায়িদা, আয়াত-৯০)
উপরে উল্লেখিত তিনটি আয়াতই সন্দেহাতীতভাবে মুতাওয়াতির বর্ণনা দ্বারা লিপিবদ্ধ। অথচ কেউ যদি উপরের প্রথমোক্ত দুটি আয়াতের উপর আমল করে তবে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। আমল করতে হবে তৃতীয় আয়াতের উপর। কুরআনে করীমে এরকম আরো অনেক আয়াত রয়েছে যা কুরআনের আয়াত হওয়া সত্ত্বেও আমল করা যায় না। কারণ এগুলো রহিত হয়ে গেছে। এতে প্রমাণিত হলো যে কুরআন শরীফে অনেক আয়াত ও অনুরূপভাবে অসংখ্য হাদীস সহীহ হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন কারণে এর উপর আমল করা যায় না।
ইবনে তাইমিয়ার বক্তব্য
শায়খ ইবনে তাইমিয়া যাকে লা-মাযহাবীরা ইমাম মনে করে এ প্রসঙ্গে তার একটি বক্তব্য শায়খুল হাদীস মাওলানা যাকারিয়া ছাহেব তার রচিত “শরীআত ও ত্বরীকত কা তালাযুম” গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, “আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (র.) “রফউল মালাম” নামক কিতাবে লিখেছেন যে, দশ কারণে ইমামগণ কোন হাদীস ছেড়ে দিতে পারেন। ১. ইমামের কাছে হাদীস পৌঁছেছে তবে তা প্রমাণিত হয়নি। ২. খবরে ওয়াহিদ গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য কিছু পূর্বশর্ত ছিল যা তিনি এ হাদীসে পাননি। ৩. ঐ হাদীসের প্রতিদ্বন্দ্বী হাদীসও তার কাছে পৌঁছেছিল যার কারণে বাধ্য হয়ে তিনি ঐ হাদীসের ভিন্ন কোন ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
এভাবে দশটি কারণ উল্লেখ করার পর তিনি বলেন, এগুলো তো খুব স্পষ্ট কারণ। অনেক হাদীসের ক্ষেত্রে এটাও সম্ভব যে, ইমামের কাছে তা গ্রহণ না করার এমন কোন কারণ রয়েছে যে সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণাই নেই। কারণ ইলমের ময়দান অনেক বিস্তৃত। আলিমদের সিনার মধ্যে এমন অনেক রহস্য লুকিয়ে রয়েছে যে সম্পর্কে আমাদের কোন অবগতি নেই। আলিমগণ কখনও তার দাবির সপক্ষে দলীল পেশ করেন আবার কখনো করেন না। যদি করেন তাহলে তা আবার কখনো আমাদের কাছে পৌঁছে আবার কখনো পৌঁছে না। আর পৌঁছলেও তা কখনো আমাদের বুঝে আসে আবার কখনো বুঝে আসে না। হাদীস সম্পর্কে যাদের ধারণা রয়েছে তারা সবাই জানেন যে, চার ইমামের নিকট অনেক সঠিক ও স্পষ্ট অর্থবহ হাদীস পৌঁছেছিল। কিন্তু অন্য কোন শক্তিশালী দলীলের কারণে তারা সেগুলোকে গ্রহণ করেননি।” (শরীআত ও ত্বরীকত কা তালাযুম, পৃষ্ঠা ৯৭)
উক্ত কিতাবে (শরীআত ও তরীকত কা তালাযুম) তিনি আরো লিখেছেন- বজলুল মজহুদের ৫খ-, ১৩৭ পৃষ্ঠায় باب السارق يسرق مرارا -এর মধ্যে একাধিক বার চুরি করলে চোরকে হত্যা করা হবে এ মর্মের অনেকগুলো হাদীস আনা হয়েছে। পরে হযরত শায়খ ইবনুল কাইউম (র.) থেকে এ কথা বর্ণনা করা হয়েছে যে, হযরত ইমাম আহমদ (র.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনি এসব হাদীস গ্রহণ করেননি কেন? তিনি উত্তর দিলেন, হযরত উসমান (রা.)-এর এক হাদীসের উপর ভিত্তি করে, যার মধ্যে বলা হয়েছে, কোন মুসলমানকে শুধু তিন অবস্থায় কতল করা জায়িয আছে, আর তার মধ্যে চুরি করার কথা নেই। বজলুল মজহুদের মধ্যে এ ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনা করা হয়েছে। আমার তো এখানে এটা বলা উদ্দেশ্য যে, চোরকে হত্যা করা সংক্রান্ত হাদীস হযরত ইমাম আহমদ (র.)-এর কাছে পৌঁছেছে কিন্তু তিনি এর উপর আমল করেননি। পানি সংক্রান্ত ব্যাপারে হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র.)-এর মাযহাব দুই কুল্লা ওয়ালা। অথচ বি’রে বুদাআ’র হাদীসকে তিনি সঠিক বলেছেন। যেমন মুগনী কিতাবের ১ম খ-, ২৫ পৃষ্ঠায় রয়েছে। (শরীআত ও ত্বরীকত কা তালাযুম, পৃষ্ঠা ৯৬)
আল্লামা শায়খ হাবীব আহমদ আল-কায়রাওয়ানী (র.) বলেন- সহীহ হাদীসই আমার মাযহাব এ বক্তব্যের বাস্তবতা বা মূল অর্থ হল- (ইমামগণ বলেন, আমাদের প্রদত্ত প্রতিটি (ফিকহী সমাধান বা মাসআলার) দলীল আমাদের কথা নয়, বরং হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণীই মূল দলীল।
অতএব, তোমরা এ কথা ধারণা কর না যে, আমাদের কথা স্বতন্ত্র দলীল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথার বিপরীত আমাদের কোন কথা হলে আমরা আল্লাহ তাআলার দরবারে দায়মুক্তি ঘোষনা করছি। তবে এ বাস্তবতা এটি আবশ্যক করে না যে, কোন ব্যক্তি যে কোন হাদীসকে সহীহ বলবে আর সেটিই ইমাম শাফিঈ (র.)-এর মাযহাব হয়ে যাবে। (ইলাউস সুনান, আল্লামা শায়খ হাবীব আহমদ আল-কায়রাওয়ানী, দ্বিতীয় মুকাদ্দামাহ, পৃষ্ঠা-৬৪)
ইবনে আবিদীন শামী (র.) তাঁর রদ্দুল মুহতার কিতাবে ইমাম শা’রানী (র.) থেকে ইমামগণের উক্ত বাক্য (সহীহ হাদীসই আমার মাযহাব) উল্লেখ করে বলেন- এটি কোন আলিমের কাছে অপ্রকাশ্য নয় যে, ইমামগণের এ নসীহত ঐ সকল ব্যক্তিদের জন্য যারা এ নসীহতের যোগ্য। অর্থাৎ যারা নুসুস তথা কুরআন ও হাদীসভা-ারের উপর ব্যাপক গবেষণার সামর্থ রাখেন। মানসূখ বা রহিত হয়ে যাওয়া হাদীসগুলো সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন এবং যে হাদীসগুলো আমলযোগ্য তাও তাদের নখদর্পনে থাকে। (রদ্দুল মুহতার, ১ম খ-, ৬৭ পৃষ্ঠা)
ইবনে হাজার আসকালানী (র.) বলেন- এমন বহু হাদীস রয়েছে যা উলূমে হাদীসের শর্তানুযায়ী সহীহ; কিন্তু সে হাদীস রহিত হয়ে গেছে। (ফতহুল বারী, ১ম খ-, ৪১৩ পৃষ্ঠা)
কেবল সহীহ নয় বরং আমলযোগ্য হাদীসই গ্রহণীয়
ফাকীহুল ইরাক ইমাম ইবরাহীম নাখাঈ (র.) বলেন, আমি হাদীস শ্রবণ করি অতঃপর দেখি কোন হাদীস আমলযোগ্য আর কোন হাদীস আমলযোগ্য নয়। যেগুলো আমলযোগ্য সেগুলো আমি গ্রহণ করি। আর বাকীগুলো ছেড়ে দেই। (শরহু ইলালিত তিরমিযী , ১ম খ-, ৪১৩ পৃষ্ঠা)
ইমামুল মুজতাহিদীন ইবনে আবী লায়লা (র.) বলেন, কোন ব্যক্তি ফিকহুল হাদীস বা হাদীসের ফিকহ অর্জন করতে পারে না, যতক্ষণ না সে হাদীসভা-ারের কিছু গ্রহণ করে ও কিছু ছেড়ে দেয়। অর্থাৎ আমলযোগ্য হাদীসগুলো গ্রহণ করে ও যেগুলো আমলযোগ্য নয় সেগুলো ছেড়ে দেয়।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওহাব (র.) বলেন, যদি মালিক ইবনে আনাস ও লাইস ইবনে সা’আদ (রা.) না থাকত তাহলে আমি হালাক বা ধংস হয়ে যেতাম। কারণ আমি ধারণা করতাম হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যে সব হাদীস বর্ণিত হয়েছে সবই আমলযোগ্য। অপর বণর্নায় এসেছে, হাদীসের ইখতিলাফের কারণে আমি পথভ্রষ্ট হয়ে যেতাম। (ইবনে রজব হাম্বলী, শরহু ইলালিত তিরমিযী, ১ম খ-, ৪১৩ পৃষ্ঠা; ইবনে আবি হাতিম, মুকাদ্দামাতুল জারহি ওয়াত তা’দীল, পৃষ্ঠা- ২২)
কাযী ইয়ায (র.) আব্দুল্লাহ ইবনে ওহাব (র.)-এর কথাটি এভাবে বর্ণনা করেছেন: আব্দুল্লাহ ইবনে ওহাব (র.) বলেন, যদি মালিক ইবনে আনাস ও লাইস ইবনে সা‘আদ না থাকত তাহলে আমি পথভ্রষ্ট হয়ে যেতাম। আব্দুল্লাহ ইবনে ওহাব (র.) এ কথা বললে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো আপনি পথভ্রষ্ট হয়ে যেতেন কেন?
তিনি উত্তরে বলেন, আমি প্রচুর হাদীস সংকলন করেছিলাম। হাদীসের আধিক্য আমাকে দিশেহারা করে তোলে, তখন আমি উক্ত হাদীসগুলো ইমাম মালিক ও ইমাম লাইস (র.)-এর নিকট পেশ করি। তারা আমাকে বলেন তুমি এই এই হাদীস গ্রহণ কর এবং এই হাদীস ত্যাগ কর (তারতীবুল মাদারিক, খ–২, পৃষ্ঠা-৪১৭)
লা-মাযহাবীদের জন্য ইমাম মালিক (র.)-এর একটি উপযুক্ত জবাব
ইমাম শাফিঈ (র.) বলেন, ইমাম মালিক (র.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো ইবনে উয়াইনার নিকট যুহুরী (র.) থেকে অনেক হাদীস রয়েছে সে হাদীসগুলো তো আপনার নিকট দেখি না।
উত্তরে ইমাম মালিক (র.) বলেন, যে সকল হাদীস আমি সংকলন করেছি তার সবই যদি আমি বর্ণনা করি তাহলে আমি মানুষদের পথভ্রষ্ট করে দিব। (খতীব বাগদাদী (র.) ‘আল জামি’উ লি আখলাকির রাবি ওয়া আদাবিস সামি’ খ–২, পৃষ্ঠা-১০৯)
যে হাদীসের উপর ইমামদের আমল নেই তার হুকুম
ইমাম যাহাবী (র.) তাঁর ‘সিয়ারু আলামিন নুবালা’ কিতাবে বলেন, যে হাদীস গ্রহন করা থেকে ইমামগণ বিরত থেকেছেন উক্ত হাদীস অনুযায়ী আমল করা জায়িয নেই, যদিও হাদীসটি সহীহ হয় না কেন। (ইমাম যাহাবী (র.), সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, খ–১৬, পৃষ্ঠা-৪০৪)
ইবনে রজব হাম্বলী (র.)-এর দৃষ্টিভঙ্গি
হাফিয ইবনে রজব হাম্বলী (র.) বলেন, হাদীসের ইমামগণ ঐ সকল সহীহ্ হাদীসের অনুসরণ করেছেন, যে হাদীসগুলো সাহাবাগণের নিকট ও পরবর্তী ইমামগণের নিকট আমলযোগ্য ছিল, অথবা তাদের কোন এক দলের নিকট আমলযোগ্য ছিল। এজন্যে ইমামগণ কোন হাদীসকে বর্জন করলে উক্ত হাদীসের উপর আমল করা জায়িয নেই। কেননা তারা উক্ত হাদীসকে এ কথা জেনেই বর্জন করেছেন যে, উক্ত হাদীসের উপর আমল করা হবে না। (فضل علم السلف علي الخلف পৃষ্ঠা-৯, সূত্র: আসারুল হাদীস, পৃষ্ঠা-৭৮)
হাদীসের উপর আমল করতে হলে কি জানতে হয়
হাদীসের উপর আমল করতে হলে কি জানতে হয় এ প্রসঙ্গে শায়খুল হাদীস আল্লামা যাকারিয়া সাহেব তদীয় ‘শরীআত ও ত্বরীকত কা তালাযুম’’ পুস্তকে একটি সুন্দর আলোচনা করেছেন। তিনি লিখেছেন- হাদীসের উপর আমল করার জন্য উসূলে হাদীস জানা থাকা জরুরী। নমুনাস্বরূপ কিছু উল্লেখ করা হল। এগুলো ছাড়াও হাফিয ইবনে হাজার (র.) যে কয়েকটি প্রকার জানা জরুরী বলেছেন তা হলো: ১. হাদীসে মাকলূব ২. হাদীসে মদ্বতারাব ৩. হাদীসে মুস্হাফ ৪. হাদীসে মুহাররাফ ৫. হাদীসে মারফু ৬. হাদীসে মাকতু ৭. হাদীসে মুসনাদ ৮. হাদীস আল উলূউল মুতলাক ৯. হাদীসে আল উলূউন নাসাবী ১০. হাদীস আল মুয়াফাকা ১১. হাদীসে বদলে মুসাওয়াত ১২. হাদীসে মুসাফাহা ১৩. হাদীসে নুযুলে আকরান ১৪. হাদীসে মুদাব্বাজ ১৫. হাদীসে রিওয়ায়াতুল আকাবির আনিল আসাগির ১৬. হাদীসে আস’সাবিক ১৭. হাদীসে আল’লাহিক ১৮. হাদীসে মুসালসাল ১৯. হাদীসে মুত্তাফাক ২০. হাদীসে মুফতারাক ২১. হাদীসে মুতালাফ ২২. হাদীসে মুখতালাফ ২৩. হাদীসে মুতাশাবিহ।
হাদীস বুঝার জন্য এতটুকই যথেষ্ট নয় যে, হাদীসের অনুবাদ পড়ে মুহাদ্দিস হয়ে যাবে এবং হাদীস দ্বারা মাসআলা বের করা শুরু করে দিবে। হাফিয ইবনে হাজার (র.) তার “নুখবাতুল ফিক্র” নামক কিতাবে একথাও লিখেছেন যে, এই সংক্ষিপ্ত কিতাবে এ বিষয়ের আলোচনা সম্ভব নয়। এর জন্য অনেক বড় কিতাবের প্রয়োজন। সুতরাং কোন হাদীসের কিতাবের অনুবাদ পড়ে নেয়া কিংবা কোন ফাযায়িলের কিতাব দেখে নেয়াই যথেষ্ট নয়। মুহাদ্দিস হওয়া অনেক কঠিন কাজ। তেমনিভাবে কুরআন পাকের অনুবাদ পড়ে নিজেকে কুরআন পাকের প-িত মনে করাও আহাম্মকী ও বোকামী। কুরআন বুঝার জন্য শুধু অনুবাদ পড়াই যথেষ্ট নয়। কুরআন বিষয়ক বিশদ ইল্ম হাসিল করার পূর্বে নিজেকে কুরআনের গবেষক মনে করলে মারাত্মক ভুলের মধ্যে পড়ে যেতে হয়।
আহলে হাদীসের জনৈক ব্যক্তির আমল ছিল, সে ইস্তিঞ্জা করার পর বিতির নামায পড়ত। কেউ তাকে প্রশ্ন করল, তুমি এটা কিসের নামায পড়? সে উত্তর দিল, হাদীসে আছে- من استجمر فليوتر অর্থাৎ ‘যে ব্যক্তি ইস্তিঞ্জা করবে তার বিতির পড়া উচিত।’ অথচ হাদীসের অর্থ হল, যে ব্যক্তি ইস্তিঞ্জা করবে তার জন্য বে-জোড় সংখ্যক ঢিলা ব্যবহার করা উচিত। এখানে সে বেজোড় সংখ্যা ঢিলার কথা বুঝতে না পেরে বে-জোড় রাকাত নামাযের কথা বুঝতে পেরেছে, তথা বিতিরের নামাযের অর্থ বুঝেছে।
তেমনিভাবে এক লোক তার কূপের পানি অন্য লোকের ক্ষেতের জন্য দিত না, কঠোরভাবে সে এতে বাঁধা দিতো। সে এর কারণ বলত হাদীসে আছে,لايسقى احدكم مائه زرع غيره! অর্থ : “কেউ যেন তার পানি অন্যের ক্ষেতে সেচন না করে”। অথচ হাদীসের উদ্দেশ্য হল, অন্তঃসত্ত্বা দাসী খরিদ করার পর যেন তার সাথে সহবাস না করে। হাদীসে পানি দ্বারা বীর্য বুঝানো হয়েছে, আর ক্ষেত দ্বারা মহিলার লজ্জাস্থানকে বুঝানো হয়েছে। এ ধরনের আরো অনেক উপমা রয়েছে যা আল্লামা ইবনে জাওযী ‘তালবীসে ইবলীস’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
আবূ দাউদ শরীফে আছে, জনৈক ব্যক্তি হযরত ইমরান বিন হুসাইন (রা.) কে বলল, আপনি এমন অনেক হাদীস বর্ণনা করেন যার কোন ভিত্তি কুরআনে নেই। একথা শুনে তিনি রাগান্বিত হয়ে বললেন, তুমি কুরআনে কোথাও কি একথা পেয়েছো যে, প্রতি চল্লিশ দিরহামে এক দিরহাম যাকাত দিতে হবে। এতগুলো ছাগল হলে এত যাকাত দিতে হবে, এতগুলো উট হলে এত যাকাত দিতে হবে? এসব কথা কুরআন পাকের কোথাও পেয়েছ? সে বলল, না। তখন তিনি বললেন, কুরআনে নেই তো এগুলো পেলে কিভাবে বা এর উপর আমল কর কিভাবে? তুমি এগুলো আমার থেকে শিখেছ আর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শিখেছি। এমনিভাবে তিনি আরো মাসআলার কথা বললেন যেগুলোর বর্ণনা কুরআনে নেই। এ দ্বারা বুঝা গেল যে, কুরআন পাকের উপর আমল করার জন্য হাদীসের জ্ঞান থাকা অতীব জরুরী। আর কুরআন ও হাদীস বুঝার জন্য আবার ঐসব বিষয় জানা জরুরী যার বর্ণনা ইতোপূর্বে করা হয়েছে। (শরীআত ও ত্বরীকত কা তালাযুম, শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা যাকারিয়া, পৃষ্ঠা-৫৯-৬০)।
সর্বক্ষেত্রে সহীহ হাদীস দিয়ে দলীল গ্রহণের ভ্রান্ত দাবি
লা-মাযহাবী আহলে হাদীস নামধারীরা সর্বক্ষেত্রে সহীহ হাদীস দিয়ে দলীল গ্রহণের দাবি করে থাকে। অথচ এ দাবিটি ভ্রান্ত। মুহাদ্দিসীনে কিরাম ফযীলতের ক্ষেত্রে যঈফ হাদীসকেও দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে হাদীসের ইমামগণের কয়েকটি সিদ্ধান্ত উল্লেখ করা হলো।
আল্লামা আব্দুল হাই লাখনভী (র.) তাঁর الاجوبة الفاصلة কিতাবের ৩৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-
و قد قال الامام احمد و غيره من الائمة: اذا روينا في الحلال والحرام شددنا واذا روينا في الفضائل و نحوها تساهلنا. (كذا في الكفاية للخطيب البغدادي)
অনুবাদ : ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ও অপর অনেকে বলেন, যখন আমরা হালাল ও হারাম বিষয়ে কোন বর্ণনা পেশ করি তখন (সনদের ক্ষেত্রে) কঠোরতা অবলম্বন করি। আর যখন ফযীলতের ক্ষেত্রে কোন বর্ণনা পেশ করি তখন উদারতা অবলম্বন করি। (এরূপই বর্ণিত হয়েছে খতীবে বাগদাদীর ‘কিফায়াহ’ গ্রন্থে)
একই দিনে জুম’আ ও আরাফা অনুষ্ঠিত হওয়ার ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস
افضل الأيام يوم عرفة إذا وافق يوم الجمعة فهو أفضل من سبعين حجة.
অনুবাদ : উত্তম দিন হচ্ছে আরাফার দিন এবং যদি সেদিনের সাথে জুম’আর দিন একত্রিত হয় তবে তা সত্তরটি হজ্জের চেয়েও উত্তম।
হাদীসখানাকে কেউ কেউ যঈফ বলে থাকেন। মোল্লা আলী কারী (মৃত্যু-১০১৪হি.) রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাদের জবাবে বলেন,
فإن الحديث الضعيف معتبر في فضائل الأعمال عند جميع العلماء من ارباب الكمال. (الحظ الاوفر في الحج الاكبر)
অনুবাদ: সকল শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কিরামের নিকট ফাযায়েলে আমলের ক্ষেত্রে যঈফ হাদীস গ্রহণযোগ্য। (আল হায্যুল আউফার)
মোল্লা আলী কারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ওযূতে ঘাঢ় মাসেহ করা সম্পর্কে তার ‘আল-মাওদুআত’ কিতাবে লিখেন-
وَالضَّعِيفُ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ اتفَاقًا وَلِذَا قَالَ أَئِمَّتنَا إِنَّ مَسْحَ الرَّقَبَةِ مُسْتحَبٌّ أَوْ سُنَّةٌ.
অনুবাদ: উলামায়ে কিরামের সর্বসম্মত মত হল, ফাযায়িলে আমালের ক্ষেত্রে যঈফ হাদীসের উপর আমল করা যাবে। এ কারণে আমাদের আলিমগণ বলেন, ঘাঢ় মাসেহ করা মুস্তাহাব বা সুন্নত।
ইমাম মুহিউদ্দীন আবূ যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবনে শরফ নববী (র.) (৬৩১-৬৭৬ হি.) তাঁর ‘তাকরীব’ কিতাবে লেখেন-
ويجوز عند أهل الحديث وغيرهم التساهل في الأسانيد ورواية ما سوى الموضوع من الضعيف والعمل به من غير بيان ضعفه في غير صفات الله تعالى والأحكام (التقريب والتيسير للنووي)
অনুবাদ: হাদীস বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্য উলামায়ে কিরামের নিকট সনদের ক্ষেত্রে উদারতা অবলম্বন ও মাওযু ব্যতীত যঈফ হাদীস রেওয়ায়েত করা এবং এর উপর আমল করা জায়িয। হাদীসের দুর্বলতা উল্লেখ না করেও জায়িয। তবে তা অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার সিফাত ও বিধান বর্ণনার ক্ষেত্রে নয়। (আততাকরীব ওয়াত্তাইসীর লিন নববী)
মুহাদ্দিসগণের নিকট শরীআতের আহকাম ও আকাইদ ব্যতিত সকল ক্ষেত্রে যঈফ হাদীসও বর্ণনাও জায়িয। এমনকি যঈফ হাদীসের দুর্বলতার উপর তাম্বীহ করাও আবশ্যক নয়। মোট কথা উপদেশ, আমলের ফযীলত, তারগীব ও তারহীবের ক্ষেত্রে যঈফ হাদীস বর্ণনা জায়িয। এ প্রসঙ্গে হাফিয ইবনুস সালাহ তার مقدمة গ্রন্থে লেখেন-
يجوز عند أهل الحديث وغيرهم التساهل في الأسانيد ورواية ما سوى الموضوع من أنواع الأحاديث الضعيفة من غير اهتمام ببيان ضعفها فيما سوى صفات الله تعالى وأحكام الشريعة من الحلال والحرام وغيرهما . وذلك كالمو

Saturday, 22 August 2020

রাসূলুল্লাহ ‎ﷺ-এর ৫ দফা নির্দেশনা ‎: ‏জীবন চলার পাথেয়


লেখকঃ- মারজান আহমদ চৌধুরী ফুলতলী

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ
الْمُؤْمِنُ الْقَوِيُّ خَيْرٌ وَأَحَبُّ إِلَى اللَّهِ مِنَ الْمُؤْمِنِ الضَّعِيفِ وَفِي كُلٍّ خَيْرٌ احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ وَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَلاَ تَعْجِزْ فَإِنْ أَصَابَكَ شَىْءٌ فَلاَ تَقُلْ لَوْ أَنِّي فَعَلْتُ كَذَا وَكَذَا وَلَكِنْ قُلْ قَدَّرَ اللَّهُ وَمَا شَاءَ فَعَلَ فَإِنَّ ‏لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيْطَان
"সবল মুমিন আল্লাহর কাছে দুর্বল মুমিন থেকে উত্তম ও প্রিয়, যদিও উভয়ের মাঝে কল্যাণ রয়েছে। চেষ্টা করে যাও সে বিষয়ের জন্য, যা তোমাকে কল্যাণ দেবে এবং আল্লাহর সাহায্য কামনা করো। হাল ছেড়ে দিওনা। যদি কোনো সমস্যা/বিপদ-আপদ আসে, তাহলে এটি বলো না যে, যদি আমি এরূপ এরূপ করতাম (তাহলে এরকম না হয়ে ওরকম হতো)। বরং বলো, এসব আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, তিনি যা চান তা-ই করেন। কেননা "যদি" শব্দটি শয়তানি কাজের দরজা খুলে দেয়।" [সহীহ মুসলিম; কিতাবুল ক্বাদর, সুনান ইবনে মাজাহ, কিতাবুস সুন্নাহ]

উপরিউক্ত হাদিসে আল্লাহর নবী ﷺ উম্মতের জন্য ৫ দফা নির্দেশনা প্রদান করেছেন, যা অনুসরণ করে আমরা জীবন চলার পথে প্রয়োজনীয় সব সিদ্ধান্ত (Decision) এবং ব্যবস্থাপনা (Management) গ্রহণ করতে পারি। অমূল্য এ হাদিসটি একটু ব্যাখ্যা করা যাক। 

হাদিসের প্রথম নির্দেশনা হচ্ছে, "সবল মুমিন আল্লাহর কাছে দুর্বল মুমিন থেকে উত্তম ও প্রিয়, যদিও উভয়ের মাঝেই কল্যাণ রয়েছে।" এখানে সবল বলতে কেবল দৈহিকভাবে বলশালী হওয়া উদ্দেশ্য নয়। হতে পারে কেউ শারীরিকভাবে শক্তিশালী, কেউ মানসিকভাবে দৃঢ়, আবার কেউ জ্ঞান-বুদ্ধির দিক থেকে অধিক বিচক্ষণ। আল্লাহ একেকজনকে একেক ধরণের নিয়ামত দেন। প্রয়োজন কেবল নিজের Strong point তথা শক্তিশালী দিকটি যথাযথভাবে শনাক্ত করা এবং এটি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। উদাহরণস্বরূপ, সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ রা. শারীরিকভাবে শক্তিশালী এবং সামরিক দিক থেকে সুকৌশলী ছিলেন। অপরদিকে হাসসান ইবনু সাবিত রা. ছিলেন কাব্য-সাহিত্যে পারদর্শী। তাঁরা উভয়েই নিজ নিজ সক্ষমতাকে শনাক্ত করতে পেরেছিলেন। তাই খালিদ মাঠ কাঁপিয়েছেন তরবারি হাতে, হাসসান কাঁপিয়েছেন কলম হাতে। 
আমাদেরকে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে ভেবে দেখা উচিৎ যে, আমি কি সত্যিই এ পথে যেতে চাই? এ পথে যাওয়ার ইচ্ছা এবং সামর্থ কি আমার মধ্যে আছে? নইলে ভূতের বেগারখেটে কোনো লাভ নেই। হ্যাঁ, কিছু মানুষ আছেন, যারা অনেক ক্ষেত্রে দুর্বল। তবে কল্যাণ তাঁদের মধ্যেও রয়েছে। এ কল্যাণটি ঈমানের কল্যাণ। 

দ্বিতীয় নির্দেশনা হচ্ছে, "চেষ্টা করে যাও সে বিষয়ের জন্য, যা তোমাকে কল্যাণ দেবে।" এখানে কল্যাণ দ্বারা দুনিয়া আখেরাত উভয়ের কল্যাণ উদ্দেশ্য। 
যখনই আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারব যে, আমার মধ্যে এই নির্দিষ্ট গুণ রয়েছে বা এই কাজে আমার জন্য কল্যাণ রয়েছে, আমার উচিৎ তখন থেকেই সে কাজে নিজেকে সমর্পিত করা। আন্তরিক ইচ্ছা এবং অবিরাম চেষ্টা ব্যতীত দুনিয়াতেও কিছু হাসিল হয় না, আখেরাতের জন্যও কিছু প্রস্তুত করা যায় না। আল্লাহ বলেছেনঃ 
وَأَن لَّيْسَ لِلْإِنسَانِ إِلَّا مَا سَعَىٰ
"এবং মানুষ কেবল তা-ই পায়, যার জন্য সে চেষ্টা করে।" [সুরা নাজম : ৩৯]
হ্যাঁ, মাঝেমধ্যে আল্লাহর দয়ায় চেষ্টা না করেই সফলতা ধরা দিয়ে দেয়। তবে সেটি সাধারণ নিয়ম নয়। 

তৃতীয় নির্দেশনা হচ্ছে, "আল্লাহর সাহায্য কামনা করো।" আমি নির্দিষ্ট কাজে যতই সক্ষম হই না কেন, যত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম-ই করি না কেন, শেষপর্যন্ত আল্লাহর সাহায্যই আমাকে আমার কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাইয়ে দেয়। সুতরাং আমি পরিশ্রম করব, কিন্তু ভরসা আমার পরিশ্রমের ওপর নয়; ভরসা আল্লাহর ওপর। 

চতুর্থ নির্দেশনা হচ্ছে, "হাল ছেড়ে দিওনা।" সবল এবং দুর্বলের মধ্যে পার্থক্য এই জায়গায়। সবল হতাশ হলেও হাল ছাড়ে না, দুর্বল সামান্য দুশ্চিন্তায় মাঠ ছেড়ে পলায়ন করে। এ নির্দেশনা শুধু আমাদের জন্য নয়; বরং নবী-রাসূলদের জন্যও প্রযোজ্য ছিল। খোদ সায়্যিদুল মুরসালিন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে জীবনে বহুবার শূন্যহাতে ঘরে ফিরতে হয়েছে, বহু বিরোধিতা বহু আঘাত সহ্য করতে হয়েছে, বহু বাধাবিপত্তি পেরুতে হয়েছে- কিন্তু ইসলামের নবী এক মূহুর্তের জন্যও হাল ছাড়েননি। ছেড়ে দিলে আজ পৃথিবীতে ইসলাম বলে কিছু থাকত না। 
মোটকথা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পর "একবার আগে-একবার পিছে" করা দুর্বল ঈমানের লক্ষণ। 

পঞ্চম নির্দেশনা হচ্ছে, ব্যর্থতায় নিজের ওপর যদি-কিন্তুর বোঝা না চাপিয়ে তাকদীরের ওপর আস্থা রাখা। 
আমি আমার পছন্দ ও সামর্থ অনুযায়ী একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম, এটি হাসিল করার জন্য খুব চেষ্টা করলাম, আল্লাহর সাহায্য কামনা করলাম, সব বাধাবিপত্তির মাঝেও নিজেকে অবিচল রাখলাম- তবুও সফলতার নিশ্চয়তা আমি দিতে পারি না। তাই আন্তরিক ইচ্ছা, অবিরাম প্রচেষ্টার পরও যদি ব্যর্থতা আসে, তাহলে এর জন্য অতীতের কবর খুঁড়ে নিজেকে দোষারোপ করার কোনো মানে নেই। অতীত থেকে শিক্ষা নেয়া উচিৎ, কিন্তু অতীতকে নিয়ে বসে থাকা বা হাহাকার করা বোকামি। "যদি এটি না করে ওটি করতাম, যদি এমন না হয়ে তেমন হতো"- এ ধরণের কথা মূলত ঈমানের দৈন্যতা এবং শয়তানের চোর-দরজা। বস্তুত, আল্লাহ আমার ভাগ্য নির্ধারণ করেন এবং তিনি যা ভালো মনে করেন, সেটিই বাস্তবায়িত হয়। 

মুমিনের উচিৎ, এই ৫ দফা নির্দেশনা (নিজের সবলতাকে শনাক্ত করা, অবিরাম চেষ্টা করা, আল্লাহর সাহায্য চাওয়া, হাল না ছাড়া এবং ব্যর্থতাকে মেনে নেয়া) অনুসরণ করে জীবনে সিদ্ধান্ত এবং ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা। ইনশাআল্লাহ এতে আমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে।

Friday, 21 August 2020

মহররম ও আশুরার কয়েকখানা দালিলিক হাদিস


সর্বোত্তম রোযা মুহররমের রোযা
⦾عن أبي هريرة  قال : سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : أفضل الصلاة بعد الفريضة صلاة جوف الليل ، وأفضل الصيام بعد شهر رمضان شهر الله الذي تدعونه المحرم.
হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা কে বলতে শুনেছি ফরয নামাযের পর সর্বোত্তম নামায হচ্ছে মধ্যরাতের নামাজ আর রামাদ্বান মাসের রোযার পরে সর্বোত্তম রোযা হচ্ছে আল্লাহর মাসের রোযা যাকে তোমরা মুহাররম বলে থাক।[মুসলিম, আহমদ, হাকিম]
⦾عن ابن سعد ، قال : أتى عليا رجل فقال : يا أمير المؤمنين ، أخبرني شهرا أصومه بعد رمضان قال : لقد سألت عن شيء ما سمعت أحدا يسأل عنه بعد رجل سأل عنه رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال : إن كنت صائما شهرا بعد رمضان فصم المحرم ؛ فإنه شهر الله ، وفيه يوم تاب قوم ويتاب على آخرين .

হযরত ইবনে সা’দ হতে বর্ণিত তিনি বলেন আলী (রা.) এর কাছে এক ব্যক্তি এসে বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন, রামাদ্বান মাস ছাড়া এমন একটি মাসের কথা বলুন যে মাসে আমি [নফল] রোযা রাখতে পারি। তিনি বলেন, তুমি এমন একটি বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করেছো যে বিষয়ে কেবল একজনকেই রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাসা করতে শুনেছি। অত:পর তিনি বললেন, তুমি যদি রামাদ্বান মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে রোযা রাখতে চাও তাহলে মুহাররম মাসে রাখবে। কেননা এটি আল্লাহর মাস।  [তিরমিযী , দারিমী]

মূসা (আ.)-এর মুক্তির খুশি প্রকাশ
⦾عن ابن عباس ، قال : قدم النبي صلى الله عليه وسلم المدينة واليهود تصوم يوم عاشوراء فقال : ما هذا اليوم الذي تصومونه قالوا : هذا يوم عظيم أنجى الله فيه موسى وأغرق آل فرعون فيه فصامه موسى شكرا ، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : فنحن أحق بموسى منكم  ، فصامه رسول الله صلى الله عليه وسلم وأمر بصيامه
হযরত ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত : তিনি বলেন, নবী (সা.) মদীনায় শুভাগমন করলেন, সে সময়ে ইহুদীরা আশুরার রোযা রাখত। তিনি (সা.) ফরমালেন এটা কোন দিন যে তোমরা রোযা রাখ? তারা বলল এটি একটি মহান দিন, এদিনে আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আ.)-কে [ফিরআওনের হাত থেকে]  মুক্তি দিয়েছেন এবং ফেরাউনকে দলবলসহ (নীল নদে) ডুবিয়েছিলেন। মূসা (আ.) এদিনে শুকরিয়াস্বরূপ রোযা রেখেছিলেন।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমালেন ‘আমরাতো তোমাদের চেয়ে মূসা (আ.)-এর উপর অধিক হকদার।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এদিনে নিজে  রোযা রাখলেন এবং রোযা রাখার জন্য আদেশ করলেন। (বুখারী, মুসলিম, আহমদ)

প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলায়হি ওয়াসাল্লাম বেশি গুরুত্ব দিতেন:
⦾عن عبيد الله بن أبي يزيد ، أنه سمع ابن عباس ، يقول : ما رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يتحرى صيام يوم يلتمس فضله على غيره إلا هذا اليوم يوم عاشوراء وشهر رمضان
হযরত ওবায়দুল্লাহ ইবনে আবী ইয়াযীদ (রা.) হতে বর্ণিত তিনি হযরত ইবনে আব্বাস (রা.)-কে বলতে শুনেছেন, আমি রাসূল (সা.)-কে আশুরার দিন ও রামাদ্বান মাসের রোযা ছাড়া অন্য কোনো রোযাকে এত গুরুত্ব দিতে দেখিনি। (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ)

আশুরার রোযা এক বছরের গুনাহের কাফ্ফারা:
عن أبي قتادة ، قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : صوم عاشوراء كفارة سنة -وصوم عرفة كفارة سنتين سنة قبله وسنة بعده .
-হযরত আবূ কাতাদাহ (রা.) হতে বর্ণিত : তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ফরমান আশুরার রোযা এক বছরের (গুণাহের) কাফ্ফারা এবং আরাফার দিনের রোযা পূর্ববর্তী এক বছর  ও পরবর্তী এক বছর এই দুই বছরের (গুণাহের) কাফ্ফারা।  (মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে খুযায়মা)

রামাদ্বান মাসের রোযা ফরয হওয়ার পূর্বে আশুরার রোযা বাধ্যতামুলক ছিল:
⦾أخبرنا عروة بن الزبير ، أن عائشة ، رضي الله عنه قالت : كان رسول الله صلى الله عليه وسلم أمر بصيام يوم عاشوراء قبل أن يفرض رمضان فلما فرض صيام شهر رمضان كان من شاء صام عاشوراء ومن شاء أفطر
-হযরত উরওয়াহ ইবনে যুবায়র (রা.) হতে বর্ণিত, হযরত আয়িশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স) রামাদ্বানের রোযা ফরয হওয়ার পূর্বে আশুরার রোযা রাখার জন্য আদেশ দিয়েছিলেন। যখন রামাদ্বান মাসের রোযা ফরয হল যার ইচ্ছা এ দিনের রোযা রাখত যার ইচ্ছা ছেড়ে দিত।
(বুখারী, মুসলিম, তিরমীযি, আবু দাউদ)

আশুরার রোযা দুই দিন  রাখার বিধান:
⦾عبد الله بن عباس ، يقول : حين صام رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم عاشوراء وأمر بصيامه قالوا : يا رسول الله ، إنه يوم تعظمه اليهود والنصارى فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : فإذا كان العام المقبل صمنا يوم التاسع إن شاء الله تعالى  قال : فلم يأت العام المقبل حتى توفي رسول الله صلى الله عليه وسلم 
-আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল (সা.) যখন আশুরার দিনে নিজে রোযা রাখলেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন তখন সাহাবায়ে কিরাম বললেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.)! এটাতো এমন এক দিন যাকে ইয়াহুদী ও খৃষ্টানরা বিশেষ সম্মান  দিয়ে থাকে । তখন রাসূল (সা.) ফরমালেন, আগামী বছর আমরা  নয় তারিখেও রোযা রাখব ইনশা আল্লাহ! বর্ণনাকারী বলেন, পরবর্তী বছর [আশুরা] আসার আগেই রাসূল (সা.) ইন্তিকাল ফরমান। (মুসলিম, আবু দাউদ )

⦾عن داود بن علي ، عن أبيه ، عن جده ابن عباس ، قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : صوموا يوم عاشوراء وخالفوا فيه اليهود وصوموا قبله يوما أو بعده يوما
-হযরত দাঊদ বিন আলী (রা.) তাঁর বাবা থেকে তাঁর বাবা তার দাদা ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ফরমান- তোমরা আশুরার দিনে রোযা রাখ। আর এ ব্যাপারে  ইহুদীদের সাথে বিরোধিতা/ব্যতিক্রম কর। আশুরার আগে বা পরের দিন রোযা রাখ। (আহমদ, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক )

আশুরায় পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করার ফদ্বীলত:
⦾عن أبي سعيد الخدري ، قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : من وسع على أهله يوم عاشوراء وسع الله عليه سائر سنته
-হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ফরমান- যে ব্যক্তি আশুরার দিনে তার পরিবার-পরিজনের জন্য (খরচের ব্যাপারে) উদার হবে; আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ব্যাপারে সারা বছর উদার থাকবেন। (তাবারানী, মাজমাউয যাওয়াইদ লিল হায়ছামী)।
লেখকঃ- হযরত মাও আহমদ হাসান চৌধুরী ফুলতলী    

একনজরে হযরত মাও আহমদ হাসান চৌধুরী ফুলতলী।

তিনি কে?
তিনি ফেসবুকে নাই। তিনি ইউটিউবেও নাই। তিনি নাই ইন্টারনেটে। তিনি মানুষের জটলায় থাকেন না। তিনি প্রচলিত মাহফিলের পোস্টারে থাকেন না। তিনি সভাপতি হতে চান না। প্রধান অতিথির চেয়ারের প্রতিও তিনি দেখান না আগ্রহ। তিনি কারো বাড়িতে সহসাই যেতে চান না। তিনি কারো কষ্টের কারণ হতে চান না। তিনি অযাচিত কোনো ধনীর করিডোরে রাখেন না কদম।
ছবিঃ- হযরত মাও আহমদ হাসান চৌধুরী শাহান ফুলতলী।    

তিনি যিকরুল্লাহর মজলিসে যান। তিনি এতিমের মাহফিলে যান। তিনি দুঃস্থ মানুষের কাছে বসেন। তিনি রিকশা বিতরণে আছেন। তিনি এতিমের নৌকায় উঠে বসেন। তিনি এতিমদের গোসল করান সস্নেহে। তিনি মেডিকেলে রোগীর খোঁজ রাখেন। তিনি বিধবার ঘর বানান। মসজিদ করে দেন। লঙ্গরখানা করে দেন। তিনি ব্রিজ করে দেন মানুষের পারাপারের জন্য। তিনি চাল, ডাল, কেরোসিন বিতরণ করেন। তিনি বন্যা, খরা, জলোচ্ছাসে ভেসে যাওয়া মানুষের সাথী। তিনি বৃদ্ধ—বৃদ্ধার ঘরের বাতি। তিনি সবহারাদের বন্ধু-স্বজন।
তিনি শিশুদের বড় ভালোবাসেন। তিনি সবার সুখে হাসেন। তিনি উদার মনের মানুষ। তিনি দরসে বুখারীর শায়খ। তিনি দুরুদের মজলিসে বসেন। তিনি ইলমে কিরাতের ইমাম শ্রেণীর খাদেম। তিনি জ্ঞানের উপমা। তিনি প্রজ্ঞার দ্যুতনা। তিনি সব কল্যাণের সাথে চলেন। তিনি এ যুগের আলোর নকীব।
তিনি সাধারণ তবে ব্যতিক্রম। তিনি সবার থেকে আলাদা। তিনি আরাম—আয়েশের প্রতি ঝুঁকেন না। তাঁর কাঠের চেয়ারটির পেছনের হেলান দেওয়ার অংশটি নেই। এটা কত বড় শরাফতী ভাবা যায়?
তিনি কাউকে কাফির কাফির বলেন না। তিনি মুনাফিকদের দলেও চলেন না। তিনি ঘৃণার চাষ করেন না। তিনি জৌলুশ নিয়েও চলেন না। তিনি সাদাসিধে। সবার। সকলের। মানুষের। মানবতার। তিনি গর্বের ধার—ধারেন না। মাওলানা, আল্লামা লিখেন না। তিনি চলমান স্রোতের বিপরীত। যিকির, ফিকির, দুআ, তসবিহ, শোকর, তাকওয়া, তাওয়াক্কুল এসবের নূরে নূরানী। তিনি এ সময়ের, এই উম্মাহর কাঙ্ক্ষিত মানুষ। তিনি নবীজি (সা)—এর প্রকৃত অনুসারী।
তিনি কারো মুরশিদ। কারো কাছে বড় ছাব। কারো পিতা। কারো উস্তাদ। কারো অভিভাবক। কারো শিক্ষক। কারো কাছে নেতা। কারো কাছে দরবেশ। আসলে তিনি সময়ের প্রেক্ষিতে তুলনাহীন। সবচেয়ে ভালো। সবচেয়ে উন্নত। সবচেয়ে বেহতর। মানবিক উপমা। রূহের চিকিৎসক।
তিনি মানুষের মনে। তিনি মাবুদের ধ্যানে। তিনি সৃষ্টির সেবায়। তিনি আল্লাহর রেদ্বায়। তিনি আছেন। তিনি থাকবেন তার মহান মাওলার ইচ্ছায়। তিনি কে? তিনি আমাদের বড় ছাহেব কিবলা, শ্রদ্ধেয় আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী।
আল্লাহ তাঁর ছায়া, তাঁর দুআ আমাদের উপর দীর্ঘায়িত করুন।

Thursday, 6 August 2020

আপনার উপর যাকাত ফরয, একটু হিসাব মিলিয়ে দেখবেন কি ?


~~~~~~~~~
বর্তমানে ৫২.৫ তোলা রুপার মূল্য ৪২০০০ টাকা।সে হিসাবে যাদের কাছে ৪২০০০ টাকা বা এর চেয়ে বেশি টাকা অথবা সমপরিমাণ অস্থাবর সম্পদ (নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বাদে) একবছর যাবত ছিল,তাদের উপর ২.৫% হারে যাকাত ফরয। বছরের শুরু ও শেষে নিসাব পূর্ণ থাকলে যাকাত আদায় করতে হবে। মাঝে নিসাব কমে যাওয়া ধর্তব্য নয়। 

নামাযের পরেই যাকাতের গুরুত্ব বেশি।আল-কুরআনে "যাকাত" শব্দের উল্লেখ এসেছে ৩২ বার। বার বার নামাযের পরেই যাকাতের উল্লেখ করা হয়েছে। তাই যাকাত প্রদানে টালবাহানা করবেন না। যাকাত প্রদান না করলে হালাল উপার্জনের সম্পদ অপবিত্র থাকে। তাই যাকাত দিন, সম্পদ পবিত্র করুন।

সুরা বাকারায়, হেদায়াতপ্রাপ্ত মুত্তাকিদের পরিচয় দিতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “…আমার দেয়া রিযক হতে যাকাত প্রদান করে”। এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর ভয় অন্তরে লালন করা ও হেদায়াতের পূর্ণতায় পৌঁছুতে যাকাত প্রদানের কোনো বিকল্প নেই। যে ব্যক্তি যাকাত ফরয হওয়ার পরও তা আদায় করে না, তার পক্ষে পূর্ণ হেদায়াত লাভ করা কখনো সম্ভব নয়।

বর্তমান যুগে কিছু মুসলিম আছেন, যারা নামায পড়েন কিন্তু যাকাত দিতে কলিজা কাঁপে; সম্পদ বুঝি এই শেষ হয়ে গেল। অথচ যাকাত দিলে সম্পদ বৃদ্ধি পায়। তারা ভাবেন, আতর লাগিয়ে শুক্রবার নামাযে যাচ্ছি; সেজেগুজে ঈদের নামাযে হাজিরা দিচ্ছি; ব্যাস.. মুসলমানের দায়িত্ব তো পালন হলোই; বেহেশত তো পাচ্ছিই; হুর-গেলমান তো থাকবেই; ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু না… যাকাত প্রদান করলে যেমন পাচ্ছেন হেদায়াত ও আল্লাহ তাআলার নৈকট্য, ঠিক তেমনি যাকাত না আদায় করলেও প্রস্তুত থাকছে ভয়ানক শাস্তি।

আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ – يَوْمَ يُحْمَىٰ عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَىٰ بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ ۖ هَٰذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ

আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না , তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে। (সেদিন বলা হবে), এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা রেখেছিলে, সুতরাং এক্ষণে আস্বাদ গ্রহণ কর জমা করে রাখার। [৯:৩৪-৩৫]

সুরা হুমাযা পুরোটাই যাকাত প্রদান না করার শাস্তির আলোচনা করছে। দেখুন,

وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ – الَّذِي جَمَعَ مَالًا وَعَدَّدَهُ – يَحْسَبُ أَنَّ مَالَهُ أَخْلَدَهُ – كَلَّا ۖ لَيُنْبَذَنَّ فِي الْحُطَمَةِ – وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْحُطَمَةُ – نَارُ اللَّهِ الْمُوقَدَةُ – الَّتِي تَطَّلِعُ عَلَى الْأَفْئِدَةِ – إِنَّهَا عَلَيْهِمْ مُؤْصَدَةٌ – فِي عَمَدٍ مُمَدَّدَةٍ

প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ,যে অর্থ সঞ্চিত করে ও গণনা করে। সে মনে করে যে,তার অর্থ চিরকাল তার সাথে থাকবে। কখনও না,সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে পিষ্টকারীর মধ্যে। আপনি কি জানেন,পিষ্টকারী কি ? এটা আল্লাহর প্রজ্বলিত অগ্নি,যা হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছবে। এতে তাদেরকে বেঁধে দেয়া হবে,লম্বালম্বি খুঁটিতে। [১০৪:১-৯]

Tuesday, 4 August 2020

ধারাবাহিক দরসে বোখারী শরীফ

ধারাবাহিক দরসে বোখারী শরীফ। লিংকে ক্লিক করে পর্বগুলো দেখে নিতে পারেন

করুণামুক্ত হাজিরা, সৌদির প্রশংসায় হু । করুণা কালে নির্বিঘ্নে শেষ হলো ইতিহাসের স্মরণীয় সীমিত হজ্ব ২০২০

হাজিদের কেউ করুণায় আক্রান্ত হন নি, সৌদির প্রশংসায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

মূল্যবান সুগন্ধি দিয়ে হাজিদের বিদায়ী সম্ভাষণ হারামাইনের

রশিদ আহমদ তাপাদার   
পবিত্র হজ পালনের সর্বশেষ কাজ " বিদায়ী তাওয়াফ" আদায়ের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের ব্যতিক্রমী হজ্ব পর্ব শেষ হলো রবিবার। লাগাতার তিনদিন তাবু নগরী মিনায় অবস্থান করে  হাজিরা জামারায় পাথর নিক্ষেপ করেন। জামারা কমপ্লেক্সে দাড়িয়ে করুণা বিধি  পালন করে  এক সঙ্গে পঞ্চাশ জন হাজি পাথর নিক্ষেপ করার ব্যবস্থা করে দেয় স্বাস্থ্য দফতর। মোড়ানো ব্যাগে আগে থেকেই হাজিদের কাছে পাথর সরবরাহ করা হয় সরকারি ভাবে। নির্ধারিত স্থানে পাথর নিক্ষেপ করার   রবিবার ছিল শেষ দিন। এদিন তারা শেষ দিনের  পাথর নিক্ষেপ করে পবিত্র মক্কানগরীতে উপস্থিত হন "তাওয়াফুল বিদা" আদায় করার জন্য। 

বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, তাওয়াফুল বিদা আদায় না করে কেউ যেন চলে না যায়। হাজিরা এই শেষ তাওয়াফ আদায় করতে মক্কাশরীফে উপস্থিত হলে   হারামাইন শরীফের প্রেসিডেন্সি বিভাগ হাজিদের মুল্যবান সুগন্ধি আর বিভিন্ন সামগ্রী উপহার দিয়ে সম্ভাষণ জানায়।  আল আরাবিয়ার সুত্রে জানাগেছে, বিদায়ী তাওয়াফ সেরে হাজিরা মক্কা ত্যাগ করতে শুরু করেন।  আর এভাবেই  করুণা মহামারি রোধে সীমিত হজ্ব ২০২০ সালের আসর শেষ হলো ইতিহাসের স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে।  
তবে সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো, হাজিদের কেউ করুণা বা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত হন নি। এখবর নিশ্চিত করেছে আরব নিউজ। সৌদি সরকারের  স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র মুহাম্মদ আব্দুল আলী এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সর্বশেষ রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত করুণা ভাইরাস হাজিদের মধ্যে তাবা বসাতে পারে নি। তিনি বলেন, হাজিদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল সৌদি সরকার। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রায় দেড় হাজার বিছানা যুক্ত হাসপাতাল গড়ে তুলা হয়। দুই শ ৭২ টি আইসিউ, তিন শ ৩১ টি আইসোলেশন কেন্দ্র ও দুই শতাধিক জরুরি সেবা কেন্দ্র প্রস্তুত ছিল হাজিদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য।  বিশেষ ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে কাবা ঘর, মসজিদে হারাম, সাফা মারওয়া,  আরফা ময়দান ইত্যাদি বিভিন্ন স্থান জীবাণুনাশক পদার্থ দিয়ে লাগাতার জীবাণু মুক্ত করা হয়। শুধুমাত্র পবিত্র কাবা ঘর ও মসজিদে হারাম প্রতিদিন দশবার সেনিটাইজ করা হয়েছে বলে সুত্রের খবর।


 এদিকে  করুণা মুক্ত হজ্ব আয়োজন করায় সৌদি সরকারের প্রশংসা করলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বৈশ্বিক মহামারি করুনারোধে এবারের হজে সৌদির ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্য বিভাগ ছিল খুবই তৎপর।  সীমিত হজ আসরে হাজিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সর্বোত্তম ব্যবস্থা গ্রহণ করে সৌদির স্বাস্থ্য বিভাগ। কঠোর স্বাস্থ্য বিধি মেনে যাতায়াতের ব্যবস্থা, নিরাপদ দুরত্ব, মাস্ক ব্যবহার, নির্দিষ্ট লাইনে চলাচল এই সমূহ করুণা বিধি নিশ্চিত করা হয়েছে এবারের হজ্বে। ছিল নানা রকম বিধি-নিষেধ। হাজিদের স্বাস্থ্যবিধি পালন ও সামজিক দুরত্ব পর্যবেক্ষণে বেশ সচেতন ছিলেন কর্তৃপক্ষ।  যারফলে  করুণামুক্ত হজ আয়োজন করতে পেরেছে সৌদি সরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা  জানায়, সৌদি আরবের গৃহীত পদক্ষেপ করুণা ভাইরাস রোধে সর্বোত্তম ভুমিকা পালন করেছে।

Tuesday, 26 November 2019

কাফন পরানোর সহজ সরল নিয়মাবলি

মৃত ব্যক্তিকে কাফন পড়ানো ফরজে কিফায়া। অনেক মানুষ আছে যে, মৃত ব্যক্তিকে কিভাবে কাফন পড়াতে হবে তা জানে না। অথচ কাফন পড়ানোর নিয়ম জানা থাকা জরুরি। এখানে কাফন পড়ানোর পদ্ধতি তুলে ধরা হলো-
পুরুষের কাফন পড়ানোর পদ্ধতি-
ক. প্রথমেই কাফনের চাদর চৌকি বা খাটিয়ার উপরে বিছানো।
খ. তারপর চাদরের উপর ইজার (তাহবন্দ) বিছানো।
গ. কাপড়গুলোর মধ্যে খোশবু লাগানো।
ঘ. মৃত ব্যক্তিকে জামা পরিয়ে ইজারের উপর শোয়াতে হবে।
ঙ. তিনবার চন্দন কাঠের ধোঁয়া বা সুগন্ধি দেয়া সুন্নাত।
চ. তারপর তুলার মধ্যে খোশবু বা সুগন্ধি লাগিয়ে দুই নিতম্বের মাঝে রেখে দেয়া। যাতে মৃত ব্যক্তির সমস্ত শরীরের জন্য সুগন্ধি ছড়ায়।
ছ. তারপর ইজার এমনভাবে জড়াতে হবে যেন, মৃতের ডান পাশ বাম পাশের উপর থাকে। চাদরও এভাবেই পড়ানো।
মহিলার কাফন পড়ানোর পদ্ধতি-
জ. প্রথমে চাদর বিছাতে হবে। তারপর সিনা বরাবর সিনাবন্দ বিছাতে হবে তারপর ইজার বিছাতে হবে।
ঝ. তার পর জামা পরিয়ে মৃতের চুল দু’ভাগ করে বা বেনি করে ডানে ও বাঁমে জামার উপর অর্থাৎ বক্ষের উপর রেখে দিবে।
ঞ. মাথাবন্ধ দিয়ে মাথা পেচিয়ে মুখের উপর রাখবে
ট. তারপর মৃত ব্যক্তিকে ইজারের উপর শোয়াতে হবে
ঠ. ইজার এমনভাবে জড়াতে হবে যেন, ডান পাশ বাম পাশের উপর পড়ে। অনুরূপভাবে সিনাবন্ধ এবং সর্বশেষ চাদর জড়াতে হবে। মহিলাদের বেলায়ও সুগন্ধি ব্যবহার করবে।
সর্বশেষ মাথা ও পায়ের দিকে অতিরিক্ত কাপড়ের মাথায় এবং কোমর বরাবর ফিতা দিয়ে বাঁধতে হবে। দাফনের সময় যেন তা খুলে না যায়। মৃত ব্যক্তিকে কবরে শোয়ানোর পর বাঁধন খুলে দিতে হবে।
সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচিত উপরোক্ত নিয়মে মৃত ব্যক্তিকে কাফন পড়ানো। আল্লাহ তাআলা মৃত ব্যক্তির পাশে উপস্থিত ব্যক্তিদেরকে সুন্দরভাবে কাফন পড়ানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।

Thursday, 14 November 2019

ক্বুরবানির শিক্ষা ও মাসাঈলঃঃ সংক্ষিপ্ত আলোকপাত

কুরবানীর_শিক্ষা_ও_মাসাঈল : সংক্ষিপ্ত  আলোকপাত 



   
আল্লাহর নবী হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর পবিত্র ত্যাগের স্মৃতির অনুসরণে আমরা প্রত্যেক বছর কুরবানী করি। যাদের কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে তাদের কুরবানী করা ওয়াজিব। 

#কুরবানীর_ইতিহাস
কুরবানীর ইতিহাস সম্পর্কে কুরআন শরীফে এসেছে হযরত ইবরাহীম (আ.) আল্লাহর কাছে নেক সন্তানের জন্য এই বলে দুআ করলেন-
ﺭَﺏِّ ﻫَﺐ ﻟﻰ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼّـٰﻠِﺤﻴﻦَ .
হে আমার পরওয়ারদেগার! আমাকে এক সৎপুত্র দান কর। ।
(আল-কুরআন, সূরা-আস্সাফ্ফাত, আয়াত নং-১০০ )
এই আয়াত থেকে আমরা শিক্ষা পাই আমরা যখন
আল্লাহর কাছে সন্তান কামনা করব তখন নেক সন্তান
কামনা করব। যেভাব ইবরাহীম (আ.) চেয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা তাঁর দুআ কবূল করলেন, কুরআনে এসেছে-
ﻓَﺒَﺸَّﺮْﻧَـٰﻪُ ﺑِﻐُﻠَـٰﻢٍ ﺣَﻠِﻴﻢٍ .
সুতরাং আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দান
করলাম (আল-কুরআন, প্রাগুক্ত )
আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম (আ.) কে নেক সন্তান দান
করলেন হযরত ইসমাঈল (আ.)। তিনি যখন বাবার সাথে চলা ফেরার উপযুক্ত হলেন তখন ইবরাহীম (আ.) বললেন -
يا ﺑُﻨَﻰَّ ﺇِﻧّﻰ ﺃَﺭﻯٰ ﻓِﻰ ﺍﻟﻤَﻨﺎﻡِ ﺃَﻧّﻰ ﺃَﺫﺑَﺤُﻚَ . ﻓَﺎﻧﻈُﺮ ﻣﺎﺫﺍ ﺗَﺮﻯٰ ۚ
ইব্রাহীম তাকে বললেনঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে,
তোমাকে যবেহ করছি। দেখ, এখন তোমার অভিমত কি? (আল-কুরআন, সূরা-আস্সাফ্ফাত, আয়াত নং-১০২)
তাফসীরের কিতাবে এসেছে হয়েছে ইবরাহীম (আ.) যখন তার পুত্র ইসমাঈল (আ.) কে স্বপ্নের কথা বলেন তখন ইসমাঈল (আ.)-এর বয়স ছিল তের বৎসর। ইবরাহীম (আ.) পরপর তিন দিন এই স্বপ্ন দেখেন।

#ইয়াওমুত_তারবীয়াহ_আরাফাহ_ও_নহর_নামকরণের_কারণ
প্রথম দিন স্বপ্ন দেখে তিনি সারাদিন চিন্তা-ভাবনায়
কাটিয়ে দেন এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে না শয়তানের
পক্ষ থেকে। তাই এটাকে বলা হয় ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺘﺮﻭﻳﺔ (দেখা ও
চিন্তাভাবনার দিন)।
এর পরের রাতেও তিনি একই স্বপ্ন দেখে নিশ্চিত হন যে
এটা আল্লাহর পক্ষ হতে। এ দিনকে আমরা আরফার ﻋﺮﻓﺔ (পরিচয়ের) দিন বলি।
তৃতীয় দিন স্বপ্ন দেখে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন এবং
কুরবানী ( ﻧﺤﺮ ) করেন। এদিনকে আমরা ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻨﺤﺮ বলি।
অবশ্য প্রথম দু‘টির নামকরণের ক্ষেত্রে ভিন্ন ব্যাখ্যাও
বিদ্যমান।

#স্বপ্ন_অর্থহীন_নয়
ইবরাহীম (আ.) স্বপ্নে আদিষ্ঠ হয়ে সন্তানকে কুরবানী
দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেন। কারণ নবীগণের স্বপ্ন
ওহী। রাসূল (সা.)-এর কাছে কখনো কখনো স্বপ্নযুগে ওহী নাযিল হতো। রাসূল (সা.) বলেন -
 ﺇِﻧَّﺎ ﻣَﻌْﺸَﺮَ ﺍﻷَﻧْﺒِﻴَﺎﺀِ ﺗَﻨَﺎﻡُ ﺃَﻋْﻴُﻨُﻨَﺎ ، ﻭَﻻ ﺗَﻨَﺎﻡُ ﻗُﻠُﻮﺑُﻨَﺎ ( ﺍﻟﻄﺒﻘﺎﺕ ﺍﻟﻜﺒﺮﻯ ﻻﺑﻦ ﺳﻌﺪ )
অর্থাৎ: আমরা নবীগণ; আমাদের চোখ ঘুমায় কিন্তু অন্তর ঘুমায় না।
ইসলামে স্বপ্নের গুরুত্ব রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন
স্বপ্ন মূল্যহীন। কিন্তু না, মুমিনের স্বপ্নের অর্থ আছে।
যদি দ্রষ্টা সত্যবাদী হয়, ওযূর সহিত ঘুমায় আর ভালো
সময়ে স্বপ্ন দেখে তাহলে সে স্বপ্নের মূল্য আছে। রাসূল
(সা.) ইরশাদ করেন- স্বপ্ন হলো নবুওয়াতের ছেচল্লিশ
ভাগের এক ভাগ। 
স্বপ্ন তিন প্রকার। একটা হলো শয়তানের পক্ষ থেকে, আরেকটা হলো নিজের খেয়াল থেকে আর আরেক প্রকার হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে।

#পরামর্শ_করা_নবীগণের_আদর্শ
উল্লেখিত আয়াত থেকে আমাদের শিক্ষা হলো আমাদের সন্তানদের উপর কোন কাজ চাপিয়ে না দিয়ে
তাদের মতামত গ্রহণ করা, তাদের সাথে পরামর্শ করা
উচিত। অনেক সময় দেখা যায় তাদের উপর জোর করে কোন কাজ চাপিয়ে দিলে তারা সেটা করতে চায় না। সে জন্যে ইসলামের আদর্শ হলো তাদের সাথে পরামর্শ করা যেমনটি ইবরাহীম (আ.) তাঁর পুত্রকে বললেন-‘দেখ, এখন তোমার অভিমত কি?'

#আল্লাহর_জন্য_সর্বস্ব_বিলিয়ে_দিতে_প্রস্তুত_থাকতে_হবে
আরেকটি শিক্ষা আমরা পাই, ইসলামের জন্য আমাদের কোন কিছু কুরবানী দিতে হলে আমাদেরকে সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। যেভাবে হযরত ইবরাহীম (আ.) আল্লাহর রাহে তার সন্তান কুরবানী করতে প্রস্তুত
হয়েছিলেন। তাঁর সুসন্তান হযরত ইসমাঈল (আ.)ও নিজেকে বিলিয়ে দিতে নিবেদিত ছিলেন। তিনি জবাব
দিয়েছেন
ﻳَـٰٓﺄَﺑَﺖِ ﭐﻓْﻌَﻞْ ﻣَﺎ ﺗُﺆْﻣَﺮُ ُ ۖ ﺳَﺘَﺠِﺪُﻧﻰ ﺇِﻥ ﺷﺎﺀَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼّـٰﺒِﺮﻳﻦَ .
পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন।
আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে
পাবেন।(আল-কুরআন, প্রাগুক্ত)

#আল্লাহর_জন্য_সব_দিতে_প্রস্তুত_হলে_কিছুই_হারাতে_হবে_না
তাফসীরের কিতাবসমূহে পাওয়া যায়, ইবরাহীম (আ.) তার পুত্রের গলায় ছুরি চালাচ্ছেন কিন্তু গলা কাটছিল না। সে জন্য ইসমাঈল (আ.) তার বাবাকে বলেছিলেন আপনি আমাকে উপুড়/ কাত করে শুইয়ে দিন। হয়তো আপনি ভালোবাসার কারণে ঠিকমতো ছুরি চালাতে পারছেন না। যখন ইবরহীম (আ.) সজোরে ছুরি চালাতে লাগলেন তখন আল্লাহ তাআলা ঈসামাইল (আ.)-এর পরিবর্তে বেহেশতী জন্তু পাঠিয়ে এই
বার্তা দিলেন, তোমরা আমার জন্য সব দিতে প্রস্তুত হলে
কিছুই হারাতে হবে না। প্রাণ না দিয়েও তা কুরবানীর
মর্যাদা লাভ করবে। যেমনটি কুরআনে এসেছে:
ﻓَﻠَﻤّﺎ ﺃَﺳﻠَﻤﺎ ﻭَﺗَﻠَّﻪُ ﻟِﻠﺠَﺒﻴﻦِ ﴿١٠٣﴾ ﻭَﻧـٰﺪَﻳﻨـٰﻪُ ﺃَﻥ ﻳـٰﺈِﺑﺮٰﻫﻴﻢُ ﴿١٠٤﴾ ﻗَﺪ
ﺻَﺪَّﻗﺖَ ﺍﻟﺮُّﺀﻳﺎ ۚ ﺇِﻧّﺎ ﻛَﺬٰﻟِﻚَ ﻧَﺠﺰِﻯ ﺍﻟﻤُﺤﺴِﻨﻴﻦَ ﴿١٠٥ ﴾
যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করলেন এবং
ইবরাহীম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করলেন। তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহীম! তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। (আল-কুরআন,সূরা-আসসাফ্ফাত, আয়াত নং-১০৩-১০৪)

#নরবলি_আল্লাহর_কাছে_অপছন্দনীয়
ইসমাইলের পরিবর্তে জন্তু পাঠিয়ে আল্লাহ এটাও
বুঝিয়ে দিলেন, নরবলি তিনি পছন্দ করেন না। পিতাকে
দিয়ে পুত্রের গলায় ছুরি চালানোও উদ্দেশ্য নয়। বরং এটা ছিল ইবরাহীম (আ.)-এর জন্য মহান পরীক্ষা। কুরআনে এসেছে-
ﺇِﻥَّ ﻫـٰﺬﺍ ﻟَﻬُﻮَ ﺍﻟﺒَﻠـٰﺆُﺍ۟ ﺍﻟﻤُﺒﻴﻦُ ﴿١٠٦﴾ ﻭَﻓَﺪَﻳﻨـٰﻪُ ﺑِﺬِﺑﺢٍ ﻋَﻈﻴﻢٍ ﴿١٠٧﴾ ﻭَﺗَﺮَﻛﻨﺎ ﻋَﻠَﻴﻪِ ﻓِﻰ ﺍلأﺍﺧِﺮﻳﻦَ ﴿١٠٨﴾ ﺳَﻠـٰﻢٌ ﻋَﻠﻰٰ ﺇِﺑﺮٰﻫﻴﻢَ ﴿١٠٩ ﴾
নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে
দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু। আমি তার
জন্যে এ বিষয়টি পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিয়েছি যে, ইব্রাহীমের প্রতি বর্ষিত হোক সালাম। (আল-কুরআন, সূরা-আস্সাফ্ফাত, আয়াত নং ১০৪-১০৯)
তাঁর এ কাজ আল্লাহর পছন্দ হয়ে যায়; তাই একাজকে
পরবর্তী উম্মতের জন্য স্মৃতিবাহী রীতি হিসাবে চালু
করে দেন।

#কুরবানীর_ইহ_ও_পরকালীন_উপকার
কুরবানীর মাধ্যমে আমরা নিজেকে আল্লাহর রাহে
কুরবান হওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করি। আমাদের কুপ্রবৃত্তি ও
নফসে আম্মারাহ দমনের শিক্ষা নেই। তথাকথিত
প্রগতিশীল চিন্তাধারার অনুসারী অনেকে প্রশ্ন করে
যে কুরবানীর মাধ্যমে তো কেবল পশুর প্রাণ যায়,
মানুষের তো কিছু হয় না। জবাবে বলা যায় কুরবানীর পশু ক্রয় করতে তো আমাদের টাকা খরচ করতে হয়েছে। জন্তু কুরবানীর মাধ্যমে এক বিবেচনায় আমাদের অর্থই কুরবানী হচ্ছে। কুরবানীর দ্বারা আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে লাভবান হই। আমরা আল্লাহর নির্দেশ পালন করি, ইবরাহীম ও আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণের
মর্যাদা লাভ করি। পশুর প্রতিটি পশমের পরিমাণ
সাওয়াব হাসিল করি।
অন্যদিকে কুরবানীর গোশত আমরা নিজেরা খেতে
পারি, আত্মীয়স্বজনকে উপহার দিতে পারি এবং অসহায় ও বঞ্চিতদের সাহায্য করতে পারি। কুরবানীর পশুর কেনা-বেচা ও এ সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা আমাদের
জাতীয় অর্থনীতিতে  সমৃদ্ধি এনে দেয়। আর
সর্বজনবিধিত অর্থকরি দ্রব্য চামড়া রপ্তানীর মাধ্যমে
আমাদের অর্থনীতিতে গতি আসে। 

#প্রাকৃতিক_ভারসাম্য_রক্ষা
অনেকে আবার পেরেশান হয়ে পড়েন এক সাথে এত পশু নিধনে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায়। আল্লাহর বিধান হলো মানুষ হালাল জন্তুর গোশত ভক্ষন করবে। আর সৃষ্টিকূলের মধ্যেও এ নিয়মই চালু আছে। বাঘ শিয়াল খায়, শিয়াল মোরগ খায়, মোরগ পোকা খায়, আবার পোকা গাছের পাতা খায়। এটাই নিয়ম। এভাবেই প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা হয়। 
কোন প্রাণীর খাদ্য কি হবে সেটা আল্লাহ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এখন আপনি পোকা কে নিষেধ করতে পারবেন না যে তুমি গাছের পাতা খেয়ো না। আল্লাহ আমাদের নির্দেশ করেছেন পশু কুরবানী করতে, তাই আমরা কুরবানী করি।

#প্রত্যেক_যুগে_কুরবানী_ছিল
আল্লাহ সকল যুগের কুরবাণীর বিধান দিয়েছেন -
ﻭَﻟِﻜُﻞِّ ﺃُﻣَّﺔٍ ﺟَﻌَﻠﻨﺎ ﻣَﻨﺴَﻜًﺎ ﻟِﻴَﺬﻛُﺮُﻭﺍ ﺍﺳﻢَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻠﻰٰ ﻣﺎ ﺭَﺯَﻗَﻬُﻢ ﻣِﻦ ﺑَﻬﻴﻤَﺔِ اﻷَﻧﻌـٰﻢِ ۗ
আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কোরবানী নির্ধারণ
করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ
কারার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। (আল কুরআন ২২:২৩)
কিন্তু মানুষ এটাকে বিকৃতভাবে পালন করতে শুরু করে। পশুকে জবাইর পরিবর্তে নরবলির মত কুপ্রথাও
সমাজে চালু হয়। ইসলাম এসব কুসংস্কার রহিত করে সুন্দর পথ উপস্থাপন করেছে। কিন্তু অন্য অনেক ধর্মে পশু বলি দেয়ার পর এটা খাওয়ার বিধান নেই। রক্ত বেদির উপর ছিটিয়ে দেওয়া হয়। জাহেলী যুগে কাবার দেয়ালেও ছিটিয়ে দেয়া হত। কিন্তু আল্লাহ ঘোষণা দেন পশুর গোশত বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না বরং
আল্লাহ আমাদের অন্তর দেখেন, আমাদের তাকওয়া তার কাছে পৌঁছায়।
ﻟَﻦ ﻳَﻨﺎﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟُﺤﻮﻣُﻬﺎ ﻭَﻻ ﺩِﻣﺎﺅُﻫﺎ ﻭَﻟـٰﻜِﻦ ﻳَﻨﺎﻟُﻪُ ﺍﻟﺘَّﻘﻮﻯٰ ﻣِﻨﻜُﻢ ۚ
এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। (আল কুরআন ২২:৩৭)
অন্য আয়াতে এসেছে -
ﺇِﻧَّﻤﺎ ﻳَﺘَﻘَﺒَّﻞُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻤُﺘَّﻘﻴﻦَ .
- আল্লাহ র্ধমভীরুদরে পক্ষ থকেইে তাে গ্রহণ করনে। (আল কুরআন ৫:২৭)

#কুরবানীর_ফদ্বীলত
কুরবানীর ফদ্বীলতে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। -
ﻗﺎﻝ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺎ ﻫﺬﻩ ﺍﻷﺿﺎﺣﻲ ﻗﺎﻝ ﺳﻨﺔ ﺃﺑﻴﻜﻢ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﻗﺎﻟﻮﺍ ﻓﻤﺎ ﻟﻨﺎ ﻓﻴﻬﺎ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ ﺑﻜﻞ ﺷﻌﺮﺓ ﺣﺴﻨﺔ ﻗﺎﻟﻮﺍ ﻓﺎﻟﺼﻮﻑ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ ﺑﻜﻞ ﺷﻌﺮﺓ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻮﻑ ﺣﺴﻨﺔ . (ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ , ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻷﺿﺎﺣﻲ : ﺑﺎﺏ ﺛﻮﺍﺏ ﺍﻷﺿﺤﻴﺔ)
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাগণ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ: এই কুরবানী কী? রাসূল (সা.) বললেন, এটা তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আ.)-এর সুন্নত। তাঁরা আবার জানতে চাইলেন, কুরবানীতে আমাদের জন্য কি রয়েছে?
রাসূল (সা.) বললেন, কুরবানীর পশুর প্রত্যেক লোম
পরিবর্তে সওয়ার রয়েছে...।
হাদীস শরীফে এসেছে -–
ﺍﺳﺘﻔﺮﻫﻮﺍ ﺿﺤﺎﻳﺎﻛﻢ، ﻓﺈﻧﻬﺎ ﻣﻄﺎﻳﺎﻛﻢ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺼﺮﺍﻁ .
- তোমাদের কুরবানীর পশুগুলোকে সুন্দর ও সাস্থ্যবান কর কেননা এগুলো পুলসিরতে তোমাদের বাহন হবে। (দায়লামী)

#কুরবানী_না_করার_ব্যাপারে_সতর্কবাণী
যারা নিসাবের মালিক হয়েও কুরবানী করবেন না তাদের ব্যপারে রাসূল (সা.) বলেন -
ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﺳﻌﺔ ﻭﻟﻢ ﻳﻀﺢ ﻓﻼ ﻳﻘﺮﺑﻦ ﻣﺼﻼﻧﺎ (ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ , ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻷﺿﺎﺣﻲ , ﺑﺎﺏ ﺍﻷﺿﺎﺣﻲ ﻭﺍﺟﺒﺔ ﻫﻲ ﺃﻡ ﻻ).
- যার সামর্থ্য আছে অথচ কুরবানী করল না সে যেন
আমাদের ঈদগাহে না আসে।

#কুরবানীর_গুরুত্বপূর্ণ_কিছু_মাসায়েল

#নেসাব_পরিমান_সম্পদের_মালিক_প্রত্যেকের_উপর_কুরবানী_ওয়াজিব
অনেকে মনে করেন গত বৎসর আমার পক্ষ থেকে কুরবানী দিয়েছি এ বৎসর আমার বাবার পক্ষ থেকে অথবা অন্য কারো পক্ষ থেকে দিয়ে দেই। যদি এরকম করেন তাহলে কুরবানী আদায় হবে না। কারণ কুরবানী যার উপর ওয়াজিব তার পক্ষ থেকেই প্রথমত: কুরবানী আদায় করতে হবে। 
কোন মহিলারও যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে তাহলে তাকেও কুরবানী করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যদি এই মহিলার স্বামী স্বতন্ত্রভাবে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন তাহলে তাকেও কুরবানী করতে হবে। এক কুরবানী দু’জনের পক্ষ থেকে আদায় হবে না। 

#অংশীদারিত্ব_ও_শর্ত
গরু, মহিষ এবং উট কুরবানীর ক্ষেত্রে এক পশুতে সাত জন অংশিদার হতে পারবেন। শর্ত হলো সাত জনের নিয়ত সহীহ হতে হবে। খালিসভাবে আল্লাহর জন্য কুরবানীর নিয়ত রাখতে হবে। যদি সাত জনের কোন একজনের নিয়তে ভিন্নতা থাকে তাহলে কারো কুরবানী আদায় হবে না।
আপনি খাসী, ভেড়া, দুম্বা দিয়েও কুরবানী করতে পারেন। তবে খাসী, ভেড়া, দুম্বা একজনের পক্ষ থেকেই আদায় করতে হবে। এতে অংশিদার হয়ে কুরবানী
করা জায়েয নয়।

#কুরবানী_এবং_যাকাতের_মধ্যে_পার্থক্য
কুরবানী এবং যাকাতের মধ্যে পার্থক্য হলো যাকাতের
ক্ষেত্রে নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকা আবশ্যক। কিন্তু কুরবানী জন্য এক বৎসর থাকা আবশ্যক নয়।
যদি কুরবানীর দিনগুলোতেও কেউ নিসাব পরিমাণ
সম্পদের মালিক হয় তাহলেও তাকে কুরবানী করতে হবে।

#কুরবানী_নিজ_হাতে_দেওয়া_উত্তম
আপনি যদি কুরবানী দিতে সক্ষম হন তাহলে নিজ হাতেই কুরবানী করবেন। আর যদি কুরবানী দিতে না পারেন, তাহলে কুরবানীর সময় কুরবানীর স্থানে উপস্থিত থাকবেন।
রাসূল (সা.) হযরত ফাতেমা (রা.) কে কুরবানীর সময় জন্তুর পাশে থাকতে বলেছেন।

#গোশত_বন্টন
কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে বন্টন করবেন। একভাগ নিজের জন্য রাখবেন, আরেকভাগ আত্মীয় স্বজনকে দিবেন আর আরেকভাগ গরীব-মিসকীনকে দিবেন।
আল্লাহ তাআলঅ ইরশাদ করেন
ﻓَﻜُﻠﻮﺍ ﻣِﻨﻬﺎ ﻭَﺃَﻃﻌِﻤُﻮﺍ ﺍﻟﺒﺎﺋِﺲَ ﺍﻟﻔَﻘﻴﺮَ ﴿٢٨ ﴾
... অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুঃস্থ-
অভাবগ্রস্থকে আহার করাও। (আল-কুরআন: ২২:২৮)
রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন - ﻛُﻠُﻮﺍ ﻭَﺗَﺼَﺪَّﻗُﻮﺍ ﻭَﺗَﺰَﻭَّﺩُﻭﺍ ﻭَﺍﺩَّﺧِﺮُﻭﺍ . (ﻣﻮﻃﺄ ﻣﺎﻟﻚ , ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻀﺤﺎﻳﺎ : ﺑﺎﺏ ﺍﺩﺧﺎﺭ ﻟﺤﻮﻡ ﺍﻷﺿﺎﺣي)

#চামড়ার_ব্যবহার
আরেকটি বিষয় হলো কুরবানীর চামড়া যদি নিজে
ব্যবহার করতে পারেন তাহলে করতে পারবেন। আর যদি বিক্রি করেন তাহলে সকল টাকা যাকাতের প্রাপ্য
যারা তাদেরকে দিয়ে দিতে হবে। মনে রাখবেন চামড়ার টাকা মসজিদ-মাদরাসা উন্নয়নের জন্য অথবা বেতনের জন্য দেওয়া জায়েয নয়। যদি মাদরাসায় গরীব
ফান্ড থাকে তাহলে সেখানে দিতে পারেন কিন্তু
আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে এই টাকা মাদরাসার
উন্নয়নে অথবা কারো বেতনে ব্যয় হচ্ছে না। অন্যথায়
আপনার সদকাহ আদায় হবে না।

#আইয়ামে_তাশরীক
৯ যিল-হজ্জ ফজরের নামাযের পর থেকে ১৩ যিল-হজ্জ আসরের নামাযের পর পর্যন্ত তাকবীর দেওয়া ওয়াজিব। পুরুষ এবং মহিলা সবাইকে তাকবীর দিতে হবে। জামাতে নামায হোক অথবা একাকী নামায হোক। তাকবীর একবার বলা ওয়াজিব, তিনবার বলা মুস্তাহাব। মহিলারা আস্তে আস্তে তাকবীর বলবেন। পুরুষের জন্য জোরে জোরে তাকবীর বলা মুস্তাহাব। তাকবীর হচ্ছে -
ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ , ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ , ﻻ ﺍﻟﻪ ﺍﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ , ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ , ﻭﻟﻠﻪ ﺍﻟﺤﻤﺪ.

(সুপ্রিমকোর্ট মাযার জামে মসজিদের সম্মানীত খতীব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক হযরত মাওলানা আহমাদ হাসান চৌধুরী ফুলতলী এর জুম'আ বয়ানের অনুলিখন)
সংগৃহীত।#কুরবানীর_শিক্ষা_ও_মাসাঈল : সংক্ষিপ্ত আলোকপাত
-হযরত মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী ফুলতলী

আল্লাহর নবী হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর পবিত্র ত্যাগের স্মৃতির অনুসরণে আমরা প্রত্যেক বছর কুরবানী করি। যাদের কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে তাদের কুরবানী করা ওয়াজিব। 

#কুরবানীর_ইতিহাস
কুরবানীর ইতিহাস সম্পর্কে কুরআন শরীফে এসেছে হযরত ইবরাহীম (আ.) আল্লাহর কাছে নেক সন্তানের জন্য এই বলে দুআ করলেন-
ﺭَﺏِّ ﻫَﺐ ﻟﻰ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼّـٰﻠِﺤﻴﻦَ .
হে আমার পরওয়ারদেগার! আমাকে এক সৎপুত্র দান কর। ।
(আল-কুরআন, সূরা-আস্সাফ্ফাত, আয়াত নং-১০০ )
এই আয়াত থেকে আমরা শিক্ষা পাই আমরা যখন
আল্লাহর কাছে সন্তান কামনা করব তখন নেক সন্তান
কামনা করব। যেভাব ইবরাহীম (আ.) চেয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা তাঁর দুআ কবূল করলেন, কুরআনে এসেছে-
ﻓَﺒَﺸَّﺮْﻧَـٰﻪُ ﺑِﻐُﻠَـٰﻢٍ ﺣَﻠِﻴﻢٍ .
সুতরাং আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দান
করলাম (আল-কুরআন, প্রাগুক্ত )
আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম (আ.) কে নেক সন্তান দান
করলেন হযরত ইসমাঈল (আ.)। তিনি যখন বাবার সাথে চলা ফেরার উপযুক্ত হলেন তখন ইবরাহীম (আ.) বললেন -
يا ﺑُﻨَﻰَّ ﺇِﻧّﻰ ﺃَﺭﻯٰ ﻓِﻰ ﺍﻟﻤَﻨﺎﻡِ ﺃَﻧّﻰ ﺃَﺫﺑَﺤُﻚَ . ﻓَﺎﻧﻈُﺮ ﻣﺎﺫﺍ ﺗَﺮﻯٰ ۚ
ইব্রাহীম তাকে বললেনঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে,
তোমাকে যবেহ করছি। দেখ, এখন তোমার অভিমত কি? (আল-কুরআন, সূরা-আস্সাফ্ফাত, আয়াত নং-১০২)
তাফসীরের কিতাবে এসেছে হয়েছে ইবরাহীম (আ.) যখন তার পুত্র ইসমাঈল (আ.) কে স্বপ্নের কথা বলেন তখন ইসমাঈল (আ.)-এর বয়স ছিল তের বৎসর। ইবরাহীম (আ.) পরপর তিন দিন এই স্বপ্ন দেখেন।

#ইয়াওমুত_তারবীয়াহ_আরাফাহ_ও_নহর_নামকরণের_কারণ
প্রথম দিন স্বপ্ন দেখে তিনি সারাদিন চিন্তা-ভাবনায়
কাটিয়ে দেন এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে না শয়তানের
পক্ষ থেকে। তাই এটাকে বলা হয় ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺘﺮﻭﻳﺔ (দেখা ও
চিন্তাভাবনার দিন)।
এর পরের রাতেও তিনি একই স্বপ্ন দেখে নিশ্চিত হন যে
এটা আল্লাহর পক্ষ হতে। এ দিনকে আমরা আরফার ﻋﺮﻓﺔ (পরিচয়ের) দিন বলি।
তৃতীয় দিন স্বপ্ন দেখে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন এবং
কুরবানী ( ﻧﺤﺮ ) করেন। এদিনকে আমরা ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻨﺤﺮ বলি।
অবশ্য প্রথম দু‘টির নামকরণের ক্ষেত্রে ভিন্ন ব্যাখ্যাও
বিদ্যমান।

#স্বপ্ন_অর্থহীন_নয়
ইবরাহীম (আ.) স্বপ্নে আদিষ্ঠ হয়ে সন্তানকে কুরবানী
দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেন। কারণ নবীগণের স্বপ্ন
ওহী। রাসূল (সা.)-এর কাছে কখনো কখনো স্বপ্নযুগে ওহী নাযিল হতো। রাসূল (সা.) বলেন -
 ﺇِﻧَّﺎ ﻣَﻌْﺸَﺮَ ﺍﻷَﻧْﺒِﻴَﺎﺀِ ﺗَﻨَﺎﻡُ ﺃَﻋْﻴُﻨُﻨَﺎ ، ﻭَﻻ ﺗَﻨَﺎﻡُ ﻗُﻠُﻮﺑُﻨَﺎ ( ﺍﻟﻄﺒﻘﺎﺕ ﺍﻟﻜﺒﺮﻯ ﻻﺑﻦ ﺳﻌﺪ )
অর্থাৎ: আমরা নবীগণ; আমাদের চোখ ঘুমায় কিন্তু অন্তর ঘুমায় না।
ইসলামে স্বপ্নের গুরুত্ব রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন
স্বপ্ন মূল্যহীন। কিন্তু না, মুমিনের স্বপ্নের অর্থ আছে।
যদি দ্রষ্টা সত্যবাদী হয়, ওযূর সহিত ঘুমায় আর ভালো
সময়ে স্বপ্ন দেখে তাহলে সে স্বপ্নের মূল্য আছে। রাসূল
(সা.) ইরশাদ করেন- স্বপ্ন হলো নবুওয়াতের ছেচল্লিশ
ভাগের এক ভাগ। 
স্বপ্ন তিন প্রকার। একটা হলো শয়তানের পক্ষ থেকে, আরেকটা হলো নিজের খেয়াল থেকে আর আরেক প্রকার হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে।

#পরামর্শ_করা_নবীগণের_আদর্শ
উল্লেখিত আয়াত থেকে আমাদের শিক্ষা হলো আমাদের সন্তানদের উপর কোন কাজ চাপিয়ে না দিয়ে
তাদের মতামত গ্রহণ করা, তাদের সাথে পরামর্শ করা
উচিত। অনেক সময় দেখা যায় তাদের উপর জোর করে কোন কাজ চাপিয়ে দিলে তারা সেটা করতে চায় না। সে জন্যে ইসলামের আদর্শ হলো তাদের সাথে পরামর্শ করা যেমনটি ইবরাহীম (আ.) তাঁর পুত্রকে বললেন-‘দেখ, এখন তোমার অভিমত কি?'

#আল্লাহর_জন্য_সর্বস্ব_বিলিয়ে_দিতে_প্রস্তুত_থাকতে_হবে
আরেকটি শিক্ষা আমরা পাই, ইসলামের জন্য আমাদের কোন কিছু কুরবানী দিতে হলে আমাদেরকে সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। যেভাবে হযরত ইবরাহীম (আ.) আল্লাহর রাহে তার সন্তান কুরবানী করতে প্রস্তুত
হয়েছিলেন। তাঁর সুসন্তান হযরত ইসমাঈল (আ.)ও নিজেকে বিলিয়ে দিতে নিবেদিত ছিলেন। তিনি জবাব
দিয়েছেন
ﻳَـٰٓﺄَﺑَﺖِ ﭐﻓْﻌَﻞْ ﻣَﺎ ﺗُﺆْﻣَﺮُ ُ ۖ ﺳَﺘَﺠِﺪُﻧﻰ ﺇِﻥ ﺷﺎﺀَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼّـٰﺒِﺮﻳﻦَ .
পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন।
আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে
পাবেন।(আল-কুরআন, প্রাগুক্ত)

#আল্লাহর_জন্য_সব_দিতে_প্রস্তুত_হলে_কিছুই_হারাতে_হবে_না
তাফসীরের কিতাবসমূহে পাওয়া যায়, ইবরাহীম (আ.) তার পুত্রের গলায় ছুরি চালাচ্ছেন কিন্তু গলা কাটছিল না। সে জন্য ইসমাঈল (আ.) তার বাবাকে বলেছিলেন আপনি আমাকে উপুড়/ কাত করে শুইয়ে দিন। হয়তো আপনি ভালোবাসার কারণে ঠিকমতো ছুরি চালাতে পারছেন না। যখন ইবরহীম (আ.) সজোরে ছুরি চালাতে লাগলেন তখন আল্লাহ তাআলা ঈসামাইল (আ.)-এর পরিবর্তে বেহেশতী জন্তু পাঠিয়ে এই
বার্তা দিলেন, তোমরা আমার জন্য সব দিতে প্রস্তুত হলে
কিছুই হারাতে হবে না। প্রাণ না দিয়েও তা কুরবানীর
মর্যাদা লাভ করবে। যেমনটি কুরআনে এসেছে:
ﻓَﻠَﻤّﺎ ﺃَﺳﻠَﻤﺎ ﻭَﺗَﻠَّﻪُ ﻟِﻠﺠَﺒﻴﻦِ ﴿١٠٣﴾ ﻭَﻧـٰﺪَﻳﻨـٰﻪُ ﺃَﻥ ﻳـٰﺈِﺑﺮٰﻫﻴﻢُ ﴿١٠٤﴾ ﻗَﺪ
ﺻَﺪَّﻗﺖَ ﺍﻟﺮُّﺀﻳﺎ ۚ ﺇِﻧّﺎ ﻛَﺬٰﻟِﻚَ ﻧَﺠﺰِﻯ ﺍﻟﻤُﺤﺴِﻨﻴﻦَ ﴿١٠٥ ﴾
যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করলেন এবং
ইবরাহীম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করলেন। তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহীম! তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। (আল-কুরআন,সূরা-আসসাফ্ফাত, আয়াত নং-১০৩-১০৪)

#নরবলি_আল্লাহর_কাছে_অপছন্দনীয়
ইসমাইলের পরিবর্তে জন্তু পাঠিয়ে আল্লাহ এটাও
বুঝিয়ে দিলেন, নরবলি তিনি পছন্দ করেন না। পিতাকে
দিয়ে পুত্রের গলায় ছুরি চালানোও উদ্দেশ্য নয়। বরং এটা ছিল ইবরাহীম (আ.)-এর জন্য মহান পরীক্ষা। কুরআনে এসেছে-
ﺇِﻥَّ ﻫـٰﺬﺍ ﻟَﻬُﻮَ ﺍﻟﺒَﻠـٰﺆُﺍ۟ ﺍﻟﻤُﺒﻴﻦُ ﴿١٠٦﴾ ﻭَﻓَﺪَﻳﻨـٰﻪُ ﺑِﺬِﺑﺢٍ ﻋَﻈﻴﻢٍ ﴿١٠٧﴾ ﻭَﺗَﺮَﻛﻨﺎ ﻋَﻠَﻴﻪِ ﻓِﻰ ﺍلأﺍﺧِﺮﻳﻦَ ﴿١٠٨﴾ ﺳَﻠـٰﻢٌ ﻋَﻠﻰٰ ﺇِﺑﺮٰﻫﻴﻢَ ﴿١٠٩ ﴾
নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে
দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু। আমি তার
জন্যে এ বিষয়টি পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিয়েছি যে, ইব্রাহীমের প্রতি বর্ষিত হোক সালাম। (আল-কুরআন, সূরা-আস্সাফ্ফাত, আয়াত নং ১০৪-১০৯)
তাঁর এ কাজ আল্লাহর পছন্দ হয়ে যায়; তাই একাজকে
পরবর্তী উম্মতের জন্য স্মৃতিবাহী রীতি হিসাবে চালু
করে দেন।

#কুরবানীর_ইহ_ও_পরকালীন_উপকার
কুরবানীর মাধ্যমে আমরা নিজেকে আল্লাহর রাহে
কুরবান হওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করি। আমাদের কুপ্রবৃত্তি ও
নফসে আম্মারাহ দমনের শিক্ষা নেই। তথাকথিত
প্রগতিশীল চিন্তাধারার অনুসারী অনেকে প্রশ্ন করে
যে কুরবানীর মাধ্যমে তো কেবল পশুর প্রাণ যায়,
মানুষের তো কিছু হয় না। জবাবে বলা যায় কুরবানীর পশু ক্রয় করতে তো আমাদের টাকা খরচ করতে হয়েছে। জন্তু কুরবানীর মাধ্যমে এক বিবেচনায় আমাদের অর্থই কুরবানী হচ্ছে। কুরবানীর দ্বারা আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে লাভবান হই। আমরা আল্লাহর নির্দেশ পালন করি, ইবরাহীম ও আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণের
মর্যাদা লাভ করি। পশুর প্রতিটি পশমের পরিমাণ
সাওয়াব হাসিল করি।
অন্যদিকে কুরবানীর গোশত আমরা নিজেরা খেতে
পারি, আত্মীয়স্বজনকে উপহার দিতে পারি এবং অসহায় ও বঞ্চিতদের সাহায্য করতে পারি। কুরবানীর পশুর কেনা-বেচা ও এ সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা আমাদের
জাতীয় অর্থনীতিতে  সমৃদ্ধি এনে দেয়। আর
সর্বজনবিধিত অর্থকরি দ্রব্য চামড়া রপ্তানীর মাধ্যমে
আমাদের অর্থনীতিতে গতি আসে। 

#প্রাকৃতিক_ভারসাম্য_রক্ষা
অনেকে আবার পেরেশান হয়ে পড়েন এক সাথে এত পশু নিধনে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায়। আল্লাহর বিধান হলো মানুষ হালাল জন্তুর গোশত ভক্ষন করবে। আর সৃষ্টিকূলের মধ্যেও এ নিয়মই চালু আছে। বাঘ শিয়াল খায়, শিয়াল মোরগ খায়, মোরগ পোকা খায়, আবার পোকা গাছের পাতা খায়। এটাই নিয়ম। এভাবেই প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা হয়। 
কোন প্রাণীর খাদ্য কি হবে সেটা আল্লাহ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এখন আপনি পোকা কে নিষেধ করতে পারবেন না যে তুমি গাছের পাতা খেয়ো না। আল্লাহ আমাদের নির্দেশ করেছেন পশু কুরবানী করতে, তাই আমরা কুরবানী করি।

#প্রত্যেক_যুগে_কুরবানী_ছিল
আল্লাহ সকল যুগের কুরবাণীর বিধান দিয়েছেন -
ﻭَﻟِﻜُﻞِّ ﺃُﻣَّﺔٍ ﺟَﻌَﻠﻨﺎ ﻣَﻨﺴَﻜًﺎ ﻟِﻴَﺬﻛُﺮُﻭﺍ ﺍﺳﻢَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻠﻰٰ ﻣﺎ ﺭَﺯَﻗَﻬُﻢ ﻣِﻦ ﺑَﻬﻴﻤَﺔِ اﻷَﻧﻌـٰﻢِ ۗ
আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কোরবানী নির্ধারণ
করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ
কারার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। (আল কুরআন ২২:২৩)
কিন্তু মানুষ এটাকে বিকৃতভাবে পালন করতে শুরু করে। পশুকে জবাইর পরিবর্তে নরবলির মত কুপ্রথাও
সমাজে চালু হয়। ইসলাম এসব কুসংস্কার রহিত করে সুন্দর পথ উপস্থাপন করেছে। কিন্তু অন্য অনেক ধর্মে পশু বলি দেয়ার পর এটা খাওয়ার বিধান নেই। রক্ত বেদির উপর ছিটিয়ে দেওয়া হয়। জাহেলী যুগে কাবার দেয়ালেও ছিটিয়ে দেয়া হত। কিন্তু আল্লাহ ঘোষণা দেন পশুর গোশত বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না বরং
আল্লাহ আমাদের অন্তর দেখেন, আমাদের তাকওয়া তার কাছে পৌঁছায়।
ﻟَﻦ ﻳَﻨﺎﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟُﺤﻮﻣُﻬﺎ ﻭَﻻ ﺩِﻣﺎﺅُﻫﺎ ﻭَﻟـٰﻜِﻦ ﻳَﻨﺎﻟُﻪُ ﺍﻟﺘَّﻘﻮﻯٰ ﻣِﻨﻜُﻢ ۚ
এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। (আল কুরআন ২২:৩৭)
অন্য আয়াতে এসেছে -
ﺇِﻧَّﻤﺎ ﻳَﺘَﻘَﺒَّﻞُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻤُﺘَّﻘﻴﻦَ .
- আল্লাহ র্ধমভীরুদরে পক্ষ থকেইে তাে গ্রহণ করনে। (আল কুরআন ৫:২৭)

#কুরবানীর_ফদ্বীলত
কুরবানীর ফদ্বীলতে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। -
ﻗﺎﻝ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺎ ﻫﺬﻩ ﺍﻷﺿﺎﺣﻲ ﻗﺎﻝ ﺳﻨﺔ ﺃﺑﻴﻜﻢ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﻗﺎﻟﻮﺍ ﻓﻤﺎ ﻟﻨﺎ ﻓﻴﻬﺎ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ ﺑﻜﻞ ﺷﻌﺮﺓ ﺣﺴﻨﺔ ﻗﺎﻟﻮﺍ ﻓﺎﻟﺼﻮﻑ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ ﺑﻜﻞ ﺷﻌﺮﺓ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻮﻑ ﺣﺴﻨﺔ . (ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ , ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻷﺿﺎﺣﻲ : ﺑﺎﺏ ﺛﻮﺍﺏ ﺍﻷﺿﺤﻴﺔ)
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাগণ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ: এই কুরবানী কী? রাসূল (সা.) বললেন, এটা তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আ.)-এর সুন্নত। তাঁরা আবার জানতে চাইলেন, কুরবানীতে আমাদের জন্য কি রয়েছে?
রাসূল (সা.) বললেন, কুরবানীর পশুর প্রত্যেক লোম
পরিবর্তে সওয়ার রয়েছে...।
হাদীস শরীফে এসেছে -–
ﺍﺳﺘﻔﺮﻫﻮﺍ ﺿﺤﺎﻳﺎﻛﻢ، ﻓﺈﻧﻬﺎ ﻣﻄﺎﻳﺎﻛﻢ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺼﺮﺍﻁ .
- তোমাদের কুরবানীর পশুগুলোকে সুন্দর ও সাস্থ্যবান কর কেননা এগুলো পুলসিরতে তোমাদের বাহন হবে। (দায়লামী)

#কুরবানী_না_করার_ব্যাপারে_সতর্কবাণী
যারা নিসাবের মালিক হয়েও কুরবানী করবেন না তাদের ব্যপারে রাসূল (সা.) বলেন -
ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﺳﻌﺔ ﻭﻟﻢ ﻳﻀﺢ ﻓﻼ ﻳﻘﺮﺑﻦ ﻣﺼﻼﻧﺎ (ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ , ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻷﺿﺎﺣﻲ , ﺑﺎﺏ ﺍﻷﺿﺎﺣﻲ ﻭﺍﺟﺒﺔ ﻫﻲ ﺃﻡ ﻻ).
- যার সামর্থ্য আছে অথচ কুরবানী করল না সে যেন
আমাদের ঈদগাহে না আসে।

#কুরবানীর_গুরুত্বপূর্ণ_কিছু_মাসায়েল

#নেসাব_পরিমান_সম্পদের_মালিক_প্রত্যেকের_উপর_কুরবানী_ওয়াজিব
অনেকে মনে করেন গত বৎসর আমার পক্ষ থেকে কুরবানী দিয়েছি এ বৎসর আমার বাবার পক্ষ থেকে অথবা অন্য কারো পক্ষ থেকে দিয়ে দেই। যদি এরকম করেন তাহলে কুরবানী আদায় হবে না। কারণ কুরবানী যার উপর ওয়াজিব তার পক্ষ থেকেই প্রথমত: কুরবানী আদায় করতে হবে। 
কোন মহিলারও যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে তাহলে তাকেও কুরবানী করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যদি এই মহিলার স্বামী স্বতন্ত্রভাবে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন তাহলে তাকেও কুরবানী করতে হবে। এক কুরবানী দু’জনের পক্ষ থেকে আদায় হবে না। 

#অংশীদারিত্ব_ও_শর্ত
গরু, মহিষ এবং উট কুরবানীর ক্ষেত্রে এক পশুতে সাত জন অংশিদার হতে পারবেন। শর্ত হলো সাত জনের নিয়ত সহীহ হতে হবে। খালিসভাবে আল্লাহর জন্য কুরবানীর নিয়ত রাখতে হবে। যদি সাত জনের কোন একজনের নিয়তে ভিন্নতা থাকে তাহলে কারো কুরবানী আদায় হবে না।
আপনি খাসী, ভেড়া, দুম্বা দিয়েও কুরবানী করতে পারেন। তবে খাসী, ভেড়া, দুম্বা একজনের পক্ষ থেকেই আদায় করতে হবে। এতে অংশিদার হয়ে কুরবানী
করা জায়েয নয়।

#কুরবানী_এবং_যাকাতের_মধ্যে_পার্থক্য
কুরবানী এবং যাকাতের মধ্যে পার্থক্য হলো যাকাতের
ক্ষেত্রে নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকা আবশ্যক। কিন্তু কুরবানী জন্য এক বৎসর থাকা আবশ্যক নয়।
যদি কুরবানীর দিনগুলোতেও কেউ নিসাব পরিমাণ
সম্পদের মালিক হয় তাহলেও তাকে কুরবানী করতে হবে।

#কুরবানী_নিজ_হাতে_দেওয়া_উত্তম
আপনি যদি কুরবানী দিতে সক্ষম হন তাহলে নিজ হাতেই কুরবানী করবেন। আর যদি কুরবানী দিতে না পারেন, তাহলে কুরবানীর সময় কুরবানীর স্থানে উপস্থিত থাকবেন।
রাসূল (সা.) হযরত ফাতেমা (রা.) কে কুরবানীর সময় জন্তুর পাশে থাকতে বলেছেন।

#গোশত_বন্টন
কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে বন্টন করবেন। একভাগ নিজের জন্য রাখবেন, আরেকভাগ আত্মীয় স্বজনকে দিবেন আর আরেকভাগ গরীব-মিসকীনকে দিবেন।
আল্লাহ তাআলঅ ইরশাদ করেন
ﻓَﻜُﻠﻮﺍ ﻣِﻨﻬﺎ ﻭَﺃَﻃﻌِﻤُﻮﺍ ﺍﻟﺒﺎﺋِﺲَ ﺍﻟﻔَﻘﻴﺮَ ﴿٢٨ ﴾
... অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুঃস্থ-
অভাবগ্রস্থকে আহার করাও। (আল-কুরআন: ২২:২৮)
রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন - ﻛُﻠُﻮﺍ ﻭَﺗَﺼَﺪَّﻗُﻮﺍ ﻭَﺗَﺰَﻭَّﺩُﻭﺍ ﻭَﺍﺩَّﺧِﺮُﻭﺍ . (ﻣﻮﻃﺄ ﻣﺎﻟﻚ , ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻀﺤﺎﻳﺎ : ﺑﺎﺏ ﺍﺩﺧﺎﺭ ﻟﺤﻮﻡ ﺍﻷﺿﺎﺣي)

#চামড়ার_ব্যবহার
আরেকটি বিষয় হলো কুরবানীর চামড়া যদি নিজে
ব্যবহার করতে পারেন তাহলে করতে পারবেন। আর যদি বিক্রি করেন তাহলে সকল টাকা যাকাতের প্রাপ্য
যারা তাদেরকে দিয়ে দিতে হবে। মনে রাখবেন চামড়ার টাকা মসজিদ-মাদরাসা উন্নয়নের জন্য অথবা বেতনের জন্য দেওয়া জায়েয নয়। যদি মাদরাসায় গরীব
ফান্ড থাকে তাহলে সেখানে দিতে পারেন কিন্তু
আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে এই টাকা মাদরাসার
উন্নয়নে অথবা কারো বেতনে ব্যয় হচ্ছে না। অন্যথায়
আপনার সদকাহ আদায় হবে না।

#আইয়ামে_তাশরীক
৯ যিল-হজ্জ ফজরের নামাযের পর থেকে ১৩ যিল-হজ্জ আসরের নামাযের পর পর্যন্ত তাকবীর দেওয়া ওয়াজিব। পুরুষ এবং মহিলা সবাইকে তাকবীর দিতে হবে। জামাতে নামায হোক অথবা একাকী নামায হোক। তাকবীর একবার বলা ওয়াজিব, তিনবার বলা মুস্তাহাব। মহিলারা আস্তে আস্তে তাকবীর বলবেন। পুরুষের জন্য জোরে জোরে তাকবীর বলা মুস্তাহাব। তাকবীর হচ্ছে -
ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ , ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ , ﻻ ﺍﻟﻪ ﺍﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ , ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ , ﻭﻟﻠﻪ ﺍﻟﺤﻤﺪ.

(সুপ্রিমকোর্ট মাযার জামে মসজিদের সম্মানীত খতীব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক হযরত মাওলানা আহমাদ হাসান চৌধুরী ফুলতলী এর জুম'আ বয়ানের অনুলিখন)
সংগৃহীত।#কুরবানীর_শিক্ষা_ও_মাসাঈল : সংক্ষিপ্ত আলোকপাত
-হযরত মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী ফুলতলী

আল্লাহর নবী হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর পবিত্র ত্যাগের স্মৃতির অনুসরণে আমরা প্রত্যেক বছর কুরবানী করি। যাদের কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে তাদের কুরবানী করা ওয়াজিব। 

#কুরবানীর_ইতিহাস
কুরবানীর ইতিহাস সম্পর্কে কুরআন শরীফে এসেছে হযরত ইবরাহীম (আ.) আল্লাহর কাছে নেক সন্তানের জন্য এই বলে দুআ করলেন-
ﺭَﺏِّ ﻫَﺐ ﻟﻰ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼّـٰﻠِﺤﻴﻦَ .
হে আমার পরওয়ারদেগার! আমাকে এক সৎপুত্র দান কর। ।
(আল-কুরআন, সূরা-আস্সাফ্ফাত, আয়াত নং-১০০ )
এই আয়াত থেকে আমরা শিক্ষা পাই আমরা যখন
আল্লাহর কাছে সন্তান কামনা করব তখন নেক সন্তান
কামনা করব। যেভাব ইবরাহীম (আ.) চেয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা তাঁর দুআ কবূল করলেন, কুরআনে এসেছে-
ﻓَﺒَﺸَّﺮْﻧَـٰﻪُ ﺑِﻐُﻠَـٰﻢٍ ﺣَﻠِﻴﻢٍ .
সুতরাং আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দান
করলাম (আল-কুরআন, প্রাগুক্ত )
আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম (আ.) কে নেক সন্তান দান
করলেন হযরত ইসমাঈল (আ.)। তিনি যখন বাবার সাথে চলা ফেরার উপযুক্ত হলেন তখন ইবরাহীম (আ.) বললেন -
يا ﺑُﻨَﻰَّ ﺇِﻧّﻰ ﺃَﺭﻯٰ ﻓِﻰ ﺍﻟﻤَﻨﺎﻡِ ﺃَﻧّﻰ ﺃَﺫﺑَﺤُﻚَ . ﻓَﺎﻧﻈُﺮ ﻣﺎﺫﺍ ﺗَﺮﻯٰ ۚ
ইব্রাহীম তাকে বললেনঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে,
তোমাকে যবেহ করছি। দেখ, এখন তোমার অভিমত কি? (আল-কুরআন, সূরা-আস্সাফ্ফাত, আয়াত নং-১০২)
তাফসীরের কিতাবে এসেছে হয়েছে ইবরাহীম (আ.) যখন তার পুত্র ইসমাঈল (আ.) কে স্বপ্নের কথা বলেন তখন ইসমাঈল (আ.)-এর বয়স ছিল তের বৎসর। ইবরাহীম (আ.) পরপর তিন দিন এই স্বপ্ন দেখেন।

#ইয়াওমুত_তারবীয়াহ_আরাফাহ_ও_নহর_নামকরণের_কারণ
প্রথম দিন স্বপ্ন দেখে তিনি সারাদিন চিন্তা-ভাবনায়
কাটিয়ে দেন এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে না শয়তানের
পক্ষ থেকে। তাই এটাকে বলা হয় ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺘﺮﻭﻳﺔ (দেখা ও
চিন্তাভাবনার দিন)।
এর পরের রাতেও তিনি একই স্বপ্ন দেখে নিশ্চিত হন যে
এটা আল্লাহর পক্ষ হতে। এ দিনকে আমরা আরফার ﻋﺮﻓﺔ (পরিচয়ের) দিন বলি।
তৃতীয় দিন স্বপ্ন দেখে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন এবং
কুরবানী ( ﻧﺤﺮ ) করেন। এদিনকে আমরা ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻨﺤﺮ বলি।
অবশ্য প্রথম দু‘টির নামকরণের ক্ষেত্রে ভিন্ন ব্যাখ্যাও
বিদ্যমান।

#স্বপ্ন_অর্থহীন_নয়
ইবরাহীম (আ.) স্বপ্নে আদিষ্ঠ হয়ে সন্তানকে কুরবানী
দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেন। কারণ নবীগণের স্বপ্ন
ওহী। রাসূল (সা.)-এর কাছে কখনো কখনো স্বপ্নযুগে ওহী নাযিল হতো। রাসূল (সা.) বলেন -
 ﺇِﻧَّﺎ ﻣَﻌْﺸَﺮَ ﺍﻷَﻧْﺒِﻴَﺎﺀِ ﺗَﻨَﺎﻡُ ﺃَﻋْﻴُﻨُﻨَﺎ ، ﻭَﻻ ﺗَﻨَﺎﻡُ ﻗُﻠُﻮﺑُﻨَﺎ ( ﺍﻟﻄﺒﻘﺎﺕ ﺍﻟﻜﺒﺮﻯ ﻻﺑﻦ ﺳﻌﺪ )
অর্থাৎ: আমরা নবীগণ; আমাদের চোখ ঘুমায় কিন্তু অন্তর ঘুমায় না।
ইসলামে স্বপ্নের গুরুত্ব রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন
স্বপ্ন মূল্যহীন। কিন্তু না, মুমিনের স্বপ্নের অর্থ আছে।
যদি দ্রষ্টা সত্যবাদী হয়, ওযূর সহিত ঘুমায় আর ভালো
সময়ে স্বপ্ন দেখে তাহলে সে স্বপ্নের মূল্য আছে। রাসূল
(সা.) ইরশাদ করেন- স্বপ্ন হলো নবুওয়াতের ছেচল্লিশ
ভাগের এক ভাগ। 
স্বপ্ন তিন প্রকার। একটা হলো শয়তানের পক্ষ থেকে, আরেকটা হলো নিজের খেয়াল থেকে আর আরেক প্রকার হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে।

#পরামর্শ_করা_নবীগণের_আদর্শ
উল্লেখিত আয়াত থেকে আমাদের শিক্ষা হলো আমাদের সন্তানদের উপর কোন কাজ চাপিয়ে না দিয়ে
তাদের মতামত গ্রহণ করা, তাদের সাথে পরামর্শ করা
উচিত। অনেক সময় দেখা যায় তাদের উপর জোর করে কোন কাজ চাপিয়ে দিলে তারা সেটা করতে চায় না। সে জন্যে ইসলামের আদর্শ হলো তাদের সাথে পরামর্শ করা যেমনটি ইবরাহীম (আ.) তাঁর পুত্রকে বললেন-‘দেখ, এখন তোমার অভিমত কি?'

#আল্লাহর_জন্য_সর্বস্ব_বিলিয়ে_দিতে_প্রস্তুত_থাকতে_হবে
আরেকটি শিক্ষা আমরা পাই, ইসলামের জন্য আমাদের কোন কিছু কুরবানী দিতে হলে আমাদেরকে সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। যেভাবে হযরত ইবরাহীম (আ.) আল্লাহর রাহে তার সন্তান কুরবানী করতে প্রস্তুত
হয়েছিলেন। তাঁর সুসন্তান হযরত ইসমাঈল (আ.)ও নিজেকে বিলিয়ে দিতে নিবেদিত ছিলেন। তিনি জবাব
দিয়েছেন
ﻳَـٰٓﺄَﺑَﺖِ ﭐﻓْﻌَﻞْ ﻣَﺎ ﺗُﺆْﻣَﺮُ ُ ۖ ﺳَﺘَﺠِﺪُﻧﻰ ﺇِﻥ ﺷﺎﺀَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼّـٰﺒِﺮﻳﻦَ .
পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন।
আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে
পাবেন।(আল-কুরআন, প্রাগুক্ত)

#আল্লাহর_জন্য_সব_দিতে_প্রস্তুত_হলে_কিছুই_হারাতে_হবে_না
তাফসীরের কিতাবসমূহে পাওয়া যায়, ইবরাহীম (আ.) তার পুত্রের গলায় ছুরি চালাচ্ছেন কিন্তু গলা কাটছিল না। সে জন্য ইসমাঈল (আ.) তার বাবাকে বলেছিলেন আপনি আমাকে উপুড়/ কাত করে শুইয়ে দিন। হয়তো আপনি ভালোবাসার কারণে ঠিকমতো ছুরি চালাতে পারছেন না। যখন ইবরহীম (আ.) সজোরে ছুরি চালাতে লাগলেন তখন আল্লাহ তাআলা ঈসামাইল (আ.)-এর পরিবর্তে বেহেশতী জন্তু পাঠিয়ে এই
বার্তা দিলেন, তোমরা আমার জন্য সব দিতে প্রস্তুত হলে
কিছুই হারাতে হবে না। প্রাণ না দিয়েও তা কুরবানীর
মর্যাদা লাভ করবে। যেমনটি কুরআনে এসেছে:
ﻓَﻠَﻤّﺎ ﺃَﺳﻠَﻤﺎ ﻭَﺗَﻠَّﻪُ ﻟِﻠﺠَﺒﻴﻦِ ﴿١٠٣﴾ ﻭَﻧـٰﺪَﻳﻨـٰﻪُ ﺃَﻥ ﻳـٰﺈِﺑﺮٰﻫﻴﻢُ ﴿١٠٤﴾ ﻗَﺪ
ﺻَﺪَّﻗﺖَ ﺍﻟﺮُّﺀﻳﺎ ۚ ﺇِﻧّﺎ ﻛَﺬٰﻟِﻚَ ﻧَﺠﺰِﻯ ﺍﻟﻤُﺤﺴِﻨﻴﻦَ ﴿١٠٥ ﴾
যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করলেন এবং
ইবরাহীম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করলেন। তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহীম! তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। (আল-কুরআন,সূরা-আসসাফ্ফাত, আয়াত নং-১০৩-১০৪)

#নরবলি_আল্লাহর_কাছে_অপছন্দনীয়
ইসমাইলের পরিবর্তে জন্তু পাঠিয়ে আল্লাহ এটাও
বুঝিয়ে দিলেন, নরবলি তিনি পছন্দ করেন না। পিতাকে
দিয়ে পুত্রের গলায় ছুরি চালানোও উদ্দেশ্য নয়। বরং এটা ছিল ইবরাহীম (আ.)-এর জন্য মহান পরীক্ষা। কুরআনে এসেছে-
ﺇِﻥَّ ﻫـٰﺬﺍ ﻟَﻬُﻮَ ﺍﻟﺒَﻠـٰﺆُﺍ۟ ﺍﻟﻤُﺒﻴﻦُ ﴿١٠٦﴾ ﻭَﻓَﺪَﻳﻨـٰﻪُ ﺑِﺬِﺑﺢٍ ﻋَﻈﻴﻢٍ ﴿١٠٧﴾ ﻭَﺗَﺮَﻛﻨﺎ ﻋَﻠَﻴﻪِ ﻓِﻰ ﺍلأﺍﺧِﺮﻳﻦَ ﴿١٠٨﴾ ﺳَﻠـٰﻢٌ ﻋَﻠﻰٰ ﺇِﺑﺮٰﻫﻴﻢَ ﴿١٠٩ ﴾
নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে
দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু। আমি তার
জন্যে এ বিষয়টি পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিয়েছি যে, ইব্রাহীমের প্রতি বর্ষিত হোক সালাম। (আল-কুরআন, সূরা-আস্সাফ্ফাত, আয়াত নং ১০৪-১০৯)
তাঁর এ কাজ আল্লাহর পছন্দ হয়ে যায়; তাই একাজকে
পরবর্তী উম্মতের জন্য স্মৃতিবাহী রীতি হিসাবে চালু
করে দেন।

#কুরবানীর_ইহ_ও_পরকালীন_উপকার
কুরবানীর মাধ্যমে আমরা নিজেকে আল্লাহর রাহে
কুরবান হওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করি। আমাদের কুপ্রবৃত্তি ও
নফসে আম্মারাহ দমনের শিক্ষা নেই। তথাকথিত
প্রগতিশীল চিন্তাধারার অনুসারী অনেকে প্রশ্ন করে
যে কুরবানীর মাধ্যমে তো কেবল পশুর প্রাণ যায়,
মানুষের তো কিছু হয় না। জবাবে বলা যায় কুরবানীর পশু ক্রয় করতে তো আমাদের টাকা খরচ করতে হয়েছে। জন্তু কুরবানীর মাধ্যমে এক বিবেচনায় আমাদের অর্থই কুরবানী হচ্ছে। কুরবানীর দ্বারা আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে লাভবান হই। আমরা আল্লাহর নির্দেশ পালন করি, ইবরাহীম ও আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণের
মর্যাদা লাভ করি। পশুর প্রতিটি পশমের পরিমাণ
সাওয়াব হাসিল করি।
অন্যদিকে কুরবানীর গোশত আমরা নিজেরা খেতে
পারি, আত্মীয়স্বজনকে উপহার দিতে পারি এবং অসহায় ও বঞ্চিতদের সাহায্য করতে পারি। কুরবানীর পশুর কেনা-বেচা ও এ সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা আমাদের
জাতীয় অর্থনীতিতে  সমৃদ্ধি এনে দেয়। আর
সর্বজনবিধিত অর্থকরি দ্রব্য চামড়া রপ্তানীর মাধ্যমে
আমাদের অর্থনীতিতে গতি আসে। 

#প্রাকৃতিক_ভারসাম্য_রক্ষা
অনেকে আবার পেরেশান হয়ে পড়েন এক সাথে এত পশু নিধনে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায়। আল্লাহর বিধান হলো মানুষ হালাল জন্তুর গোশত ভক্ষন করবে। আর সৃষ্টিকূলের মধ্যেও এ নিয়মই চালু আছে। বাঘ শিয়াল খায়, শিয়াল মোরগ খায়, মোরগ পোকা খায়, আবার পোকা গাছের পাতা খায়। এটাই নিয়ম। এভাবেই প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা হয়। 
কোন প্রাণীর খাদ্য কি হবে সেটা আল্লাহ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এখন আপনি পোকা কে নিষেধ করতে পারবেন না যে তুমি গাছের পাতা খেয়ো না। আল্লাহ আমাদের নির্দেশ করেছেন পশু কুরবানী করতে, তাই আমরা কুরবানী করি।

#প্রত্যেক_যুগে_কুরবানী_ছিল
আল্লাহ সকল যুগের কুরবাণীর বিধান দিয়েছেন -
ﻭَﻟِﻜُﻞِّ ﺃُﻣَّﺔٍ ﺟَﻌَﻠﻨﺎ ﻣَﻨﺴَﻜًﺎ ﻟِﻴَﺬﻛُﺮُﻭﺍ ﺍﺳﻢَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻠﻰٰ ﻣﺎ ﺭَﺯَﻗَﻬُﻢ ﻣِﻦ ﺑَﻬﻴﻤَﺔِ اﻷَﻧﻌـٰﻢِ ۗ
আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কোরবানী নির্ধারণ
করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ
কারার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। (আল কুরআন ২২:২৩)
কিন্তু মানুষ এটাকে বিকৃতভাবে পালন করতে শুরু করে। পশুকে জবাইর পরিবর্তে নরবলির মত কুপ্রথাও
সমাজে চালু হয়। ইসলাম এসব কুসংস্কার রহিত করে সুন্দর পথ উপস্থাপন করেছে। কিন্তু অন্য অনেক ধর্মে পশু বলি দেয়ার পর এটা খাওয়ার বিধান নেই। রক্ত বেদির উপর ছিটিয়ে দেওয়া হয়। জাহেলী যুগে কাবার দেয়ালেও ছিটিয়ে দেয়া হত। কিন্তু আল্লাহ ঘোষণা দেন পশুর গোশত বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না বরং
আল্লাহ আমাদের অন্তর দেখেন, আমাদের তাকওয়া তার কাছে পৌঁছায়।
ﻟَﻦ ﻳَﻨﺎﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟُﺤﻮﻣُﻬﺎ ﻭَﻻ ﺩِﻣﺎﺅُﻫﺎ ﻭَﻟـٰﻜِﻦ ﻳَﻨﺎﻟُﻪُ ﺍﻟﺘَّﻘﻮﻯٰ ﻣِﻨﻜُﻢ ۚ
এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। (আল কুরআন ২২:৩৭)
অন্য আয়াতে এসেছে -
ﺇِﻧَّﻤﺎ ﻳَﺘَﻘَﺒَّﻞُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻤُﺘَّﻘﻴﻦَ .
- আল্লাহ র্ধমভীরুদরে পক্ষ থকেইে তাে গ্রহণ করনে। (আল কুরআন ৫:২৭)

#কুরবানীর_ফদ্বীলত
কুরবানীর ফদ্বীলতে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। -
ﻗﺎﻝ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺎ ﻫﺬﻩ ﺍﻷﺿﺎﺣﻲ ﻗﺎﻝ ﺳﻨﺔ ﺃﺑﻴﻜﻢ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﻗﺎﻟﻮﺍ ﻓﻤﺎ ﻟﻨﺎ ﻓﻴﻬﺎ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ ﺑﻜﻞ ﺷﻌﺮﺓ ﺣﺴﻨﺔ ﻗﺎﻟﻮﺍ ﻓﺎﻟﺼﻮﻑ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ ﺑﻜﻞ ﺷﻌﺮﺓ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻮﻑ ﺣﺴﻨﺔ . (ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ , ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻷﺿﺎﺣﻲ : ﺑﺎﺏ ﺛﻮﺍﺏ ﺍﻷﺿﺤﻴﺔ)
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাগণ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ: এই কুরবানী কী? রাসূল (সা.) বললেন, এটা তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আ.)-এর সুন্নত। তাঁরা আবার জানতে চাইলেন, কুরবানীতে আমাদের জন্য কি রয়েছে?
রাসূল (সা.) বললেন, কুরবানীর পশুর প্রত্যেক লোম
পরিবর্তে সওয়ার রয়েছে...।
হাদীস শরীফে এসেছে -–
ﺍﺳﺘﻔﺮﻫﻮﺍ ﺿﺤﺎﻳﺎﻛﻢ، ﻓﺈﻧﻬﺎ ﻣﻄﺎﻳﺎﻛﻢ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺼﺮﺍﻁ .
- তোমাদের কুরবানীর পশুগুলোকে সুন্দর ও সাস্থ্যবান কর কেননা এগুলো পুলসিরতে তোমাদের বাহন হবে। (দায়লামী)

#কুরবানী_না_করার_ব্যাপারে_সতর্কবাণী
যারা নিসাবের মালিক হয়েও কুরবানী করবেন না তাদের ব্যপারে রাসূল (সা.) বলেন -
ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﺳﻌﺔ ﻭﻟﻢ ﻳﻀﺢ ﻓﻼ ﻳﻘﺮﺑﻦ ﻣﺼﻼﻧﺎ (ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ , ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻷﺿﺎﺣﻲ , ﺑﺎﺏ ﺍﻷﺿﺎﺣﻲ ﻭﺍﺟﺒﺔ ﻫﻲ ﺃﻡ ﻻ).
- যার সামর্থ্য আছে অথচ কুরবানী করল না সে যেন
আমাদের ঈদগাহে না আসে।

#কুরবানীর_গুরুত্বপূর্ণ_কিছু_মাসায়েল

#নেসাব_পরিমান_সম্পদের_মালিক_প্রত্যেকের_উপর_কুরবানী_ওয়াজিব
অনেকে মনে করেন গত বৎসর আমার পক্ষ থেকে কুরবানী দিয়েছি এ বৎসর আমার বাবার পক্ষ থেকে অথবা অন্য কারো পক্ষ থেকে দিয়ে দেই। যদি এরকম করেন তাহলে কুরবানী আদায় হবে না। কারণ কুরবানী যার উপর ওয়াজিব তার পক্ষ থেকেই প্রথমত: কুরবানী আদায় করতে হবে। 
কোন মহিলারও যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে তাহলে তাকেও কুরবানী করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যদি এই মহিলার স্বামী স্বতন্ত্রভাবে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন তাহলে তাকেও কুরবানী করতে হবে। এক কুরবানী দু’জনের পক্ষ থেকে আদায় হবে না। 

#অংশীদারিত্ব_ও_শর্ত
গরু, মহিষ এবং উট কুরবানীর ক্ষেত্রে এক পশুতে সাত জন অংশিদার হতে পারবেন। শর্ত হলো সাত জনের নিয়ত সহীহ হতে হবে। খালিসভাবে আল্লাহর জন্য কুরবানীর নিয়ত রাখতে হবে। যদি সাত জনের কোন একজনের নিয়তে ভিন্নতা থাকে তাহলে কারো কুরবানী আদায় হবে না।
আপনি খাসী, ভেড়া, দুম্বা দিয়েও কুরবানী করতে পারেন। তবে খাসী, ভেড়া, দুম্বা একজনের পক্ষ থেকেই আদায় করতে হবে। এতে অংশিদার হয়ে কুরবানী
করা জায়েয নয়।

#কুরবানী_এবং_যাকাতের_মধ্যে_পার্থক্য
কুরবানী এবং যাকাতের মধ্যে পার্থক্য হলো যাকাতের
ক্ষেত্রে নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকা আবশ্যক। কিন্তু কুরবানী জন্য এক বৎসর থাকা আবশ্যক নয়।
যদি কুরবানীর দিনগুলোতেও কেউ নিসাব পরিমাণ
সম্পদের মালিক হয় তাহলেও তাকে কুরবানী করতে হবে।

#কুরবানী_নিজ_হাতে_দেওয়া_উত্তম
আপনি যদি কুরবানী দিতে সক্ষম হন তাহলে নিজ হাতেই কুরবানী করবেন। আর যদি কুরবানী দিতে না পারেন, তাহলে কুরবানীর সময় কুরবানীর স্থানে উপস্থিত থাকবেন।
রাসূল (সা.) হযরত ফাতেমা (রা.) কে কুরবানীর সময় জন্তুর পাশে থাকতে বলেছেন।

#গোশত_বন্টন
কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে বন্টন করবেন। একভাগ নিজের জন্য রাখবেন, আরেকভাগ আত্মীয় স্বজনকে দিবেন আর আরেকভাগ গরীব-মিসকীনকে দিবেন।
আল্লাহ তাআলঅ ইরশাদ করেন
ﻓَﻜُﻠﻮﺍ ﻣِﻨﻬﺎ ﻭَﺃَﻃﻌِﻤُﻮﺍ ﺍﻟﺒﺎﺋِﺲَ ﺍﻟﻔَﻘﻴﺮَ ﴿٢٨ ﴾
... অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুঃস্থ-
অভাবগ্রস্থকে আহার করাও। (আল-কুরআন: ২২:২৮)
রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন - ﻛُﻠُﻮﺍ ﻭَﺗَﺼَﺪَّﻗُﻮﺍ ﻭَﺗَﺰَﻭَّﺩُﻭﺍ ﻭَﺍﺩَّﺧِﺮُﻭﺍ . (ﻣﻮﻃﺄ ﻣﺎﻟﻚ , ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻀﺤﺎﻳﺎ : ﺑﺎﺏ ﺍﺩﺧﺎﺭ ﻟﺤﻮﻡ ﺍﻷﺿﺎﺣي)

#চামড়ার_ব্যবহার
আরেকটি বিষয় হলো কুরবানীর চামড়া যদি নিজে
ব্যবহার করতে পারেন তাহলে করতে পারবেন। আর যদি বিক্রি করেন তাহলে সকল টাকা যাকাতের প্রাপ্য
যারা তাদেরকে দিয়ে দিতে হবে। মনে রাখবেন চামড়ার টাকা মসজিদ-মাদরাসা উন্নয়নের জন্য অথবা বেতনের জন্য দেওয়া জায়েয নয়। যদি মাদরাসায় গরীব
ফান্ড থাকে তাহলে সেখানে দিতে পারেন কিন্তু
আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে এই টাকা মাদরাসার
উন্নয়নে অথবা কারো বেতনে ব্যয় হচ্ছে না। অন্যথায়
আপনার সদকাহ আদায় হবে না।

#আইয়ামে_তাশরীক
৯ যিল-হজ্জ ফজরের নামাযের পর থেকে ১৩ যিল-হজ্জ আসরের নামাযের পর পর্যন্ত তাকবীর দেওয়া ওয়াজিব। পুরুষ এবং মহিলা সবাইকে তাকবীর দিতে হবে। জামাতে নামায হোক অথবা একাকী নামায হোক। তাকবীর একবার বলা ওয়াজিব, তিনবার বলা মুস্তাহাব। মহিলারা আস্তে আস্তে তাকবীর বলবেন। পুরুষের জন্য জোরে জোরে তাকবীর বলা মুস্তাহাব। তাকবীর হচ্ছে - আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর ওলিল্লাহিল হামদ।