নিজস্ব প্রতিবেদন, শিলচর, ০৪ ডিসেম্বরঃঃ-
আজ শিলচরে প্রদীপ দত্ত রায়ের বিনাশর্তে মুক্তির দাবিতে নাগরিকদের পক্ষ থেকে মিছিল ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়।
দুপুর ১২ টায় শিলচরের নরসিংটোলা ময়দান থেকে বিভিন্ন সংগঠনের শতাধিক জনগণ ভাষিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, ১৯৬১ সালের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের চাপে তৎকালীন কেন্দ্র সরকারের নির্দেশে আসাম সরকারের ভাষা আইনে আনা সংশোধনী মতে বরাক উপত্যকার তিন জেলার সরকারি কাজে বাংলা ভাষা প্রয়োগের দাবিতে ও ভাষিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলনকারী প্রদীপ দত্ত রায়কে ব্রিটিশ সরকারের সময়ে তৈরি হওয়া দেশদ্রোহীতা আইনে মিথ্যা মামলা রুজু করে গ্রেফতার করে জেলে বন্দি করার প্রতিবাদে ও তাঁর মুক্তির দাবিতে মিছিল করে জেলাশাসকের কার্যালয়ের সামনে পৌঁছে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভ চলাকালে সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের সহ - সভাপতি বিশিষ্ট আইনজীবী ইমাদ উদ্দিন বুলবুল বলেন একাদশ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আইন মোতাবেক জেলা প্রশাসনকে কাজ করার দাবি কোনো ভাবেই দেশদ্রোহীতা হতে পারে না। তিনি এও বলেন যে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ইতিমধ্যেই আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন যে এই আইনের যথেচ্ছ অপপ্রয়োগ হচ্ছে। প্রদীপ দত্ত রায়ের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। সেখানে উপস্থিত আমরা বাঙালি দলের নেতা ও সি আর পি সি সি, আসাম এর কো-চেয়ারম্যান সাধন পুরকায়স্হ বলেন যে বর্তমান বিজেপি নেতৃত্বাধীন আসাম সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদী শক্তির মদতে পরিচালিত হচ্ছে। রাজ্যের ভাষিক সংখ্যালঘুদের মাতৃভাষা আজ বিপন্ন। ১৯৬১, ১৯৭২ ও ১৯৮৬ সালে আত্মবলিদানের মধ্য দিয়ে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছিলেন বরাক উপত্যকার জনগণ কিন্তু বর্তমান সরকার উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদী শক্তিগুলোর মদতে সেই অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে। বরাক উপত্যকার মাতৃভাষা প্রেমী জনগণের এখন ঘরে বসে থাকার সময় নয়। তিনি সবাইকে আহবান জানিয়ে বলেন সরকারের ফ্যাসীবাদী চরিত্রকে ঘরে বসে নিন্দা জানালে চলবে না, ভাষা আন্দোলনের শহিদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অধিকার রক্ষার আন্দোলনে যোগ দিতে হবে। ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনি'র পক্ষে অরিন্দম দেব বলেন যে এই আন্দোলন কোনো ভাষার বিরুদ্ধে নয়, এই আন্দোলন মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন। প্রদীপ দত্ত রায়কে তিনি নিঃশর্তে মুক্তি দেওয়ার দাবিতে আগামীতে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলার দাবি জানান। বিক্ষোভ শেষে একটি স্মারকপত্র আসামের রাজ্যপালের উদ্দেশ্যে জেলাশাসক মারফত প্রদান করা হয়। সাধন পুরকায়স্হ, বিশ্বজিত দাস, ইমাম উদ্দিন বুলবুল, হিল্লোল ভট্টাচার্য, অরিন্দম দেব, জয়দীপ ভট্টাচার্য, তানিয়া লস্কর প্রমুখ স্মারকপত্রটি জেলাশাসকের অনুপস্থিতিতে অতিরিক্ত উপায়ুক্ত দীপক জিডুং এর হাতে তুলে ধরে দাবি জানান যে প্রদীপ দত্ত রায়কে বিনাশর্তে মুক্তি দিতে হবে, শিলচরের উদিয়মান সাংবাদিক অনির্বাণ রায় চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১২৪ ( এ) ধারায় দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদী শক্তির মদতে পরিচালিত আসাম সরকারের ভাষিক আগ্রাসন রুখতে হবে। রাজ্যপালের উদ্দেশ্যে প্রদান করা স্মারকপত্রে স্বাক্ষর করেন প্রাক্তন উপাচার্য এবং সি আর পি সি সি, আসাম এর সভাপতি ড. তপোধীর ভট্টাচার্য, চেতনা সাংস্কৃতিক সংস্থার পক্ষে বিশিষ্ট নাট্যকার আশীষ ভৌমিক, অগ্রণী ক্লাবের পক্ষে ভোলা চক্রবর্তী, রূপম সাংস্কৃতিক সংস্থার পক্ষে সুভাষ বর্মন, এ আই ডি এস ও'র আসাম রাজ্য কমিটির সহ-সভাপতি হিল্লোল ভট্টাচার্য, ভাষা শহীদ স্টেশন দাবি কমিটির পক্ষে রাজীব কর, শ্রমিক সংগঠন সিটু'র জেলা সভাপতি সমীরণ আচার্য, আমরা বাঙালির পক্ষে সাধন পুরকায়স্হ, কোরাস সাংস্কৃতিক সংস্থার পক্ষে বিশ্বজিত দাস, ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনি'র পক্ষে অরুপ বৈশ্য, মার্চ ফর সায়েন্স এর পক্ষ থেকে কমল চক্রবর্তী, অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন এর পক্ষে মানস দাস, বিপিএফ এর পক্ষে ঋষিকেশ দে, উজ্জ্বল পান্ডুলিপির পক্ষে তমোজিৎ সাহা, সারা বাঙালি যুব ছাত্র সংস্থার পক্ষে প্রবীর পাল, নারী মুক্তি সংস্থার পক্ষে স্নিগ্ধা নাথ, এ আই ডি ওয়াই ও এর পক্ষে প্রেমানন্দ দাস, ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ওর্গেনাইজেশনের পক্ষে আফজাল হোসেন চৌধুরী, এন আই এস এ এর প্রজ্ঞা অন্বেষা, সারওয়ার জাহান, এ আই ডি এস ও'র পক্ষে গৌর চন্দ্র দাস, পল্লব ভট্টাচার্য, ১৯ শে মে উদযাপন কমিটির পক্ষে সুব্রত কর, বরাক ফোরামের দেবরাজ দাস, ইয়াসির পক্ষে দিলীপ কুমার সিংহ সহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তারা।
সংবাদদাতা
আপন লাল দাস ।
No comments:
Post a Comment
Thanks for your Valuable comment