নিরাপত্তার ঘেরাটোপে হজ্ব পরিক্রমা, প্রায় বিশ লক্ষ পূর্ণ্যার্থী মক্কা-মদিনায় উপনীত
পবিত্র হজ্ব ইসলামের মৌলিক পঞ্চম স্তম্ভের অন্যতম একটি স্তম্ভ। এতে আর্থিক, কায়িক ও আধ্যাত্মিক—শ্রমের মিশেল রয়েছে। মুসলিম বিশ্বের সর্ববৃহৎ পবিত্র সম্মিলন ও ঐক্যের আহুত সমাবেশ এটি। সামগ্রিক দিক থেকে শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রতিটি মুসলমানেরই জীবদ্দশায় একবার এই তীর্থযাত্রা করা অবশ্য কর্তব্য। এনিয়ে মুসলিম নামমাত্রে লালিত হতে থাকে কত যে স্বপ্ন। প্রাণের শহর মক্কা-মদিনায় অন্তত একবার উপনীত হওয়ার। তবে ইচ্ছে করেও সেই স্বপ্ন পূরণ হয় না অনেকের। এতে আল্লাহ পাকের রেজামন্দি ও নিমন্ত্রণই সেই স্বপ্ন পূরণের শেষ কথা, এমন বিশ্বাস উম্মাহর মধ্যে বিরাজমান সেই শুরু থেকেই। প্রতিবছর হজ্ব মৌসুমে আল্লাহ পাক তার একান্ত অনুগতদের নিমন্ত্রণ করে পবিত্র নগরী মক্কা-মদিনায় হজ্ব করার তাওফিক দেন। সব বাধা বিপত্তি কাটিয়ে তারা বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ ছঃ এর জিয়ারত করতে সক্ষম হয়। এবারের হজ্ব ২০১৯ মৌসুম আনুমানিক ০৯ আগস্ট থেকে থেকে ১৪ আগস্টের ভেতর হবে। এই মহাযঙ্গে লাখ লাখ মুসলমান সমবেত হবেন এখানে। এই পবিত্র হজ্ব নিয়ে প্রতিবারের মত এবারও বেশ তৎপর সৌদি সরকারের সব বিভাগ। সুত্রমতে, নিরাপত্তার ঘেরাটোপে নেওয়া হয়েছে মক্কা-মদিনার গুরুত্বপূর্ণ সব স্থানগুলি। বাড়তি এক লক্ষ নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে হজ্ব পরিক্রমা ২০১৯ সুষ্ঠু সুন্দর ও সুশৃঙ্খল ভাবে আঞ্জাম দেওয়ার জন্য। পাঁচ হাজারেরও অধিক গোপন ক্যামেরা বসানো হয়েছে। যেখানে প্রতিনিয়ত নজরদারী রাখছেন শান্তি শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মী আধিকারিকরা। মুল হজ্বপর্ব শুরু হতে আর হাতেগোণা কয়েক দিন বাকি রয়েছে। এরইমধ্যে সৌদি সরকার প্রায় শেষ করে ফেলেছে সব প্রস্তুতিও। অগ্নিনির্বাপক বাহিনী, মেডিকেল টিম, নিরাপত্তা কর্মী, পরিবহন সেবা সব কিছু ঢেলে সাজানো হয়েছে।
সৌদি প্রেস এজেন্সির (এসপিএ) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে, এ পর্যন্ত আকাশ, স্থল ও সমুদ্রপথ মিলিয়ে প্রায় বিশ লক্ষ হজযাত্রী ইসলামের পবিত্রতম শহর মক্কা ও মদিনায় এসে উপনীত হয়েছেন। গত বছরের তুলনায় ঠিক এই সময়ের মধ্যে সৌদিতে হজযাত্রী আগমনের সংখ্যা ১১% বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর মোট ২৩ লাখ ৭১ হাজার ৬৭৫ জন আল্লাহপ্রেমী মুসলিম হজ পালন করেছিলেন। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিবছর সেদেশের সরকার মক্কা-মদিনার ধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলেছে। যাতে করে আরও আল্লাহ-রছুল প্রেমিকদের হজ্বপর্ব পালনের সুযোগ দেওয়া যায়৷ হজ্ব ২০১৮ এর তুলনায় এবারেও পূর্ণ্যার্থী সংখ্যা আরও বাড়িয়ে তুলা হয়েছে। বিশ্বের কয়েক মিলিয়ন মুসলমান হজ ভিসার জন্য আবেদন করেন প্রতিবছর। তবে কোটা পদ্ধতির কারণে ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রতি দেশের মুসলমানের জন্য নির্ধারিত কোটা বরাদ্দ করায় প্রত্যেকের পক্ষে এই ছফর করার সৌভাগ্য অর্জন হয় না। মক্কা থেকে প্রকাশিত হজ বুলেটিন সূত্রের তথ্যমতে, মুসলিম জনবহুল দেশ ইন্দোনেশিয়া থেকে সর্বাধিক সংখ্যক হজযাত্রী সৌদিতে আসছেন এবারে। সৌদি আরবের দেওয়া অতিরিক্ত ১০ হাজার কোটাসহ প্রায় ২ লাখ ৩১ হাজার ইন্দোনেশিয়ান এই বছর হজ আদায় করবেন। আরব নিউজের খবরে জানা গেছে, ইন্দোনেশীয় হজযাত্রীদের ৪০ বছরের দীর্ঘ কোটাটি ভেঙে দেওয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে সেদেশের আরও বেশি মুসলমান হজ পালনের সুযোগ পাবেন।
হজের পরিসংখ্যান অনুসারে ভারত থেকে প্রতি বছর পাঠানো হজযাত্রীদের কোটা ৩০ হাজার বাড়িয়ে ( আগে ছিল ১ লাখ ৭০ হাজার) ২ লাখ করা হয়েছে।
বর্ধিত কোটার কারণে ভারত ইন্দোনেশিয়ার পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক হজযাত্রী পাঠানোর গৌরব অর্জন করছে।
হজযাত্রীদের কোটায় আরও পাঁচ হাজার বৃদ্ধি পেয়েছে পাকিস্তানেরও। সে সূত্রে এ বছর ১ লাখ ৮৪ হাজার ২০১ জনেরও বেশি পাকিস্তানি হজ পালন করবেন। এতে তারা ২০১৯ সালের হজ-মৌসুমে হজযাত্রী পাঠানোর ক্ষেত্রে তৃতীয় বৃহত্তম জাতীয়তা অর্জন করবে। বাংলাদেশ রয়েছে ৪র্থ স্থানে। বাংলাদেশ থেকেও ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রী এই বছর হজ পালনে সৌদি পৌঁছাবেন। ৫ম স্থানে থাকা নাইজেরিয়া থেকে হজ পালন করবেন ৯৫ হাজার পূর্ণ্যার্থী। অন্যান্যদেশ থেকে একই ভাবে হজ্ব পূর্ণ্যার্থী কোটা বরাদ্দ রয়েছে। সৌদি আরব সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ মিলে ৩০ লক্ষ মুসলমান হজ্ব ২০১৯ পালনে শরিক হবেন বলে অনুমান। সবমিলিয়ে হজ্ব মহাসমারোহের অপেক্ষার পালা ঘনিয়ে আসছে।
ছবি- সিসি ক্যামেরায় নজরদারি রাখছেন মক্কা-মদিনার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলির।