আজকে থেকে প্রায় ১ হাজার বছর আগে চেঙ্গিসখানের সৈন্যরা যখন পৃথিবী দখল করে নিচ্ছিল, মুসলমানরা তাদেরকেই ইয়াজুজ মাজুজ ভেবে মাহদীর জন্য অপেক্ষা করছিল। বলেছিল যুদ্ধ করে কী লাভ! মাহদী ছাড়া আর কেউ ওদের ঠেকাতে পারবে না। সুলতান রুকনুদ্দিন বাইবার্স এবং তুর্কীরা ওদেরকে প্রথম ঠেকিয়ে দিয়ে অন্যদের বুঝিয়েছিল এরা ইয়াজুজ মাজুজ না।এরা অপ্রতিরোধ্য নয়, এদেরকেও পরাজিত করা যায়।
ক্রুসেডাররা যখন মসজিদুল আকসা দখল করে নিয়েছিল, তখন মুসলমানরা ধরেই নিয়েছিল এরাই দাজ্জাল। মাহদী আসবে, আল আকসা উদ্ধার করবে, মুসলমানদের বাঁচাবে। ঈমাম মাহদী আসেনি। সুলতান সালাউদ্দিন আল আয়ুবী জেরুজালেম বা আল আকসা খ্রিস্টানদের কাছ থেকে উদ্ধার করেন।
তারও আগে খলীফার ক্ষমতা যখন কেবল বাগদাদের প্রাসাদ কেন্দ্রিক হয়ে পড়ে, মুসলমানরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে, চারিদিক থেকে মার খাচ্ছিল। এমন খারাপ সময়ে মুসলমানরা মাহদীর অপেক্ষা করে। ধরে নেয় মাহদী এসে রক্ষা করবে। সে সময়ে সুলতান আল্প আরসালান এসে ছিন্নভিন্ন মুসলমানদের একত্রিত করেন, যাযাবরের মত ঘুরে বেড়ানো, চারিদিকে মার খাওয়া মুসলমানদের জন্য আনাতোলিয়ার সেলজুক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলমানদের জন্য শক্তিশালী একটি রাষ্ট্র গড়ে তুলে মুসলমানদের উদ্ধার করেন। আল্প আরসালান অর্থ সিংহ সৈনিক বা সিংহের মত বীর।সুলতান আল্প আরসালানের আসল নাম মুহম্মদ।
স্পেনে যখন মুসলমানদের পতন হচ্ছিল, তখনো অনেকে ধরে নিয়েছিল মাহদী এসে তাদেরকে রক্ষা করবে। কেউ রক্ষা করেনি, স্পেনের মুসলিম সভ্যতা হারিয়ে যায়।
৭শ বছর আগে বাইজেন্টাইন আর মঙ্গোলীয়দের কাছে যখন মার খাচ্ছিল মুসলমানরা তখনো অনেকে মাহদীর আশায় ছিল। তখন ওসমান ইবনে আর্তুরুল এসে বাইজেন্টাইনদের মার দিয়ে ওসমানী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। যারা পরে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যকেই ভেঙে দেয়, তাদের রাজধানী ইস্তাম্বুল জয় করে নেয়। প্রায় সব গুলো ক্রুসেড ঠেকিয়ে দেয়। প্রায় অর্ধেক ইউরোপের দখল নিয়ে নেয়। মুসলমানদের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। কনস্টান্টিনোপল বিজয়ী সেনাপতির নামও মুহম্মদ।
আজকে থেকে তিনশ বছর আগেও মানুষ মাহদী আসবে বলে প্রস্তুতি শুরু করেছিল, অপেক্ষায় ছিল।
বলেছিল চেষ্টা করে কী লাভ! মাহদী ছাড়া আর কেউ ওদের ঠেকাতে পারবে না। পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বিভিন্নবার মুসলমানরা নিজেদের বিপদ থেকে নিজেরা উদ্ধার হওয়ার চেষ্টার বদলে মাহদীর অপেক্ষা করেছে।ব্রিটিশ আমলেও ভারতের কাদিয়ানের একজন নিজেকে নবী, মাহদী, ঈসা/মসীহ দাবী করেছিল। তার শক্তিশালী সমর্থক গোষ্ঠীও রয়েছে। যারা আহমদিয়া বা কাদিয়ানী নামেও পরিচিত। কেয়ামতের অনেক আলামতের এখনো প্রচুর বাকী আছে। বলা হয়েছে কেয়ামতের আগে মাহদী আসবে, যার আসল নাম হবে মুহম্মদ।
মুসলমানদের যতবারই দূঃসময় আসে তারা মাহদীর জন্য অপেক্ষা করে। ধরে নেয় মাহদী এসে মুসলমানদের রক্ষা করবে। প্রত্যেকবারই কেউ না কেউ নিজেকে মাহদী দাবী করে বসে। যুগে যুগে আরো এমন মাহদী, ঈসা, মসীহ, নবী দাবীদার আসবে। মুসলমানরা কাউকে ইয়াজুজ-মাজুজ ভাববে, কাউকে দাজ্জাল ভাববে, কাউকে মাহদী/ঈসা মেনে নিয়ে অনুসরণ করবে। সালাউদ্দিন আয়ুবী, রুকনুদ্দীন বাইবার্স, আল্প আরসালান, ওসমানরা এসে রক্ষাও করবে।
এমন হয়তো আরো শতশত বছর চলবে। তবে সহসাই যে মাহদী/ঈসা/দাজ্জাল আসবে না, সেটা মোটামুটিভাবে বলে দেয়া যায়। তাই আমার মাহদী নিয়ে কোনো আগ্রহ নাই। মাহদী আসলে সেটা এমনিতেই বুঝা যাবে, কেউ তাকে বা তার ক্ষমতাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।
লিখেছেন: তাহমিদুল ইসলাম
No comments:
Post a Comment
Thanks for your Valuable comment