একসাথে কাটিগড়া-বড়খলায় সংখ্যালঘু প্রার্থী দিয়ে চমক,
হারানো জমি ফিরে পাচ্ছেন সুস্মিতা
RTN tv Live, কাটিগড়া, ১৭ মার্চঃ- চল্লিশ বছর। এর মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে আটটি বিধানসভা নির্বাচন। প্রত্যেকটা নির্বাচনে কাটিগড়ায় সংখ্যাগুরু থেকে প্রার্থী দেওয়া হলে বড়খলায় সংখ্যালঘু থেকে প্রার্থী দিয়ে আসছে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। এই সুদীর্ঘ কালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস এক অলিখিত নিয়মের মধ্য দিয়েই বড়খলা এবং কাটিগড়ায় প্রার্থী মনোনীত করতে দেখা গেছে। হরহামেশাই প্রার্থী চয়ন করতে গিয়ে এই নিয়মটি নজরে রেখেছে দলীয় নেতৃত্ব। রাজনীতির 'র' বুঝেন এমন ভোটারদের মধ্যেও কংগ্রেসের এই নিয়ম বহুল চর্চিত। নির্বাচনের প্রাক মুহুর্তে কংগ্রেসের কাটিগড়ায় প্রার্থী কে হচ্ছেন, তার উপর পুরো মাত্রার নির্ভর করতো বড়খলার টিকেট প্রত্যাশীদের ভাগ্য।
"সংখ্যালঘু বনাম সংখ্যাগুরু" দীর্ঘ চল্লিশ বছরের এই ব্যালেন্স ট্রেডিশন ভেঙে একুশের মহারণে এই প্রথম কাটিগড়া এবং বড়খলায় একসাথে সংখ্যালঘু থেকে প্রার্থী দিলো কংগ্রেস। কাটিগড়ায় কংগ্রেস প্রার্থী করেছে খলিল উদ্দিন মজুমদারকে। পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ প্রাক্তন মন্ত্রী মিছবাউল ইসলাম লস্করকে দলীয় টিকেট ধরিয়ে দেওয়া হলো বড়খলায়। এর আগে ১৯৭৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে একসাথে উভয় আসনে কংগ্রেস সংখ্যালঘু থেকে প্রার্থী দিয়েছিল। সেসময় কাটিগড়ায় কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন প্রয়াত আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী। বড়খলায় ছিলেন লুৎফর রহমান। ১৯৮৩ থেকে ২০১৬ সাল। এর মধ্যে আটটি বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে রাজ্যে। প্রত্যেকটি নির্বাচনে কংগ্রেস নেতৃত্ব ঘুটির চালের মতো উভয় সম্প্রদায় থেকে দুই আসনে প্রার্থী দিয়ে আসছে। নেট দুনিয়ার ঘাটাঘাটি করলে দেখা যায়, ১৯৮৩ সালের নির্বাচনে কাটিগড়ায় কংগ্রেস প্রার্থী ছিলেন নেপাল চন্দ্র দাস । তখন বড়খলায় কংগ্রেস প্রার্থী ছিলেন আলতাফ হোসেন মজুমদার। ১৯৮৫ সালের নির্বাচনে এই দুজনকেই আবার প্রার্থী করে কংগ্রেস। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে কাটিগড়ায় কংগ্রেস প্রার্থী ছিলেন নিহার রঞ্জন লস্কর। তখন বড়খলায় প্রথমবার কংগ্রেস টিকিট পান মিছবাউল ইসলাম লস্কর। এরপর রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন হয় ১৯৯৬ সালে। সেসময় অনিল চন্দ্র দে কে কাটিগড়ায় এবং মিছবাউল ইসলাম লস্করকে আবার বড়খলায় প্রার্থী করা হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে প্রদীপ নন্দী কাটিগড়ায় কংগ্রেসের জার্সিতে ভোট ময়দানে অবতীর্ণ হন। বড়খলায় আবারো মিছবাউল ইসলাম লস্করের উপর ভরসা রাখে কংগ্রেস। স্থানীয় প্রার্থীর জিগির তুলে ২০০৬ সালে কাটিগড়ায় কংগ্রেসের টিকিট পান প্রয়াত প্রদীপ পাল। বড়খলায় আবারো মিছবাউল ইসলাম লস্করকে টিকিট দেওয়া হয়। ২০১১ সালের নির্বাচনে তৎকালীন বদরপুরের বিধায়ক আনোয়ারুল হক কে কাটিগড়ায় কংগ্রেস প্রার্থী করে। বড়খলায় দলীয় টিকেট ধরিয়ে দেওয়া হয় বিজেপি ত্যাগী ড. রুমি নাথকে। অনুরূপভাবে ২০১৬ সালের নির্বাচনে তৎকালীন বিধায়ক আতাউর রহমান মাঝারভূইয়া কে কংগ্রেস প্রার্থী করে কাটিগড়ায়। বড়খলায় ড. রুমি আবারো দলীয় টিকেট পান । এই আটটি বিধানসভা নির্বাচনে উভয় আসনে একসাথে একসম্প্রদায় থেকে কোনো দিন কংগ্রেস প্রার্থী দেয় নি। এবারই প্রথম কাটিগড়া এবং বড়খলায় একসাথে সংখ্যালঘু থেকে প্রার্থী দিলো কংগ্রেস। কাটিগড়ায় জনসংযোগ রক্ষা করে যাওয়ার ফলে কংগ্রেস প্রার্থী হয়েছেন খলিলবাবু। বড়খলায় স্থানীয় প্রার্থীর দাবির প্রতি লক্ষ্য রেখেই আবার মিছবাউল ইসলাম লস্করকে জার্সি পরিয়ে মাঠে নামিয়েছে কংগ্রেস। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এবার প্রার্থী চয়নে কংগ্রেস বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে। আমজনতার হৃদয়ে থাকা ব্যক্তিকে দলীয় টিকেট দিয়ে কংগ্রেস মোক্ষম জবাব দিয়েছে শাসকদলকে। জনসমর্থন থাকা প্রার্থীদের কে মনোনয়ন দেওয়ায় জোট থাকা সত্ত্বেও দলীয় অন্তর্কোন্দল তেমনটা পরিলক্ষিত হচ্ছে না আপাতত। আর এই চালে নিজের পায়ের তলার মাঠি অনেকটা মজবুত করে নিয়েছেন প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব। কাটিগড়ার খলিলের হয়ে মরণকামড় দিয়েছিলেন সুস্মিতা। যার পরিপ্রেক্ষিতে খলিল মজুমদার টিকেট পেয়েছেন। একইভাবে বড়খলায় পাপন দেবের হয়ে লড়াই করে শেষমেষ মিছবাউল ইসলাম লস্করকে দলীয় টিকেট প্রদানে রাজি হওয়ায় প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন তিনি। সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেস সভানেত্রী সুস্মিতা দেবের উপর নানা অভিযোগ এনে সংখ্যালঘুরা মুখ ফেরাতে শুরু করেছিলেন। একুশের মহারণে কাটিগড়া এবং বড়খলায় উপযুক্ত প্রার্থী চয়ন করার ফলে হারানো জমি অনেক ফিরে পেতে পারেন সন্তোষ-কন্যা, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা।
No comments:
Post a Comment
Thanks for your Valuable comment