লেখকঃ- এখলাছ উদ্দিন
এআইইউডিএফ এর সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের সর্ব বৃহৎ চ্যালেঞ্জ সাম্প্রদায়িকতার অপবাদ। অসমীয়াদের কাছে তো দলটি বাংলাদেশি মুসলমানের দল। এমনকি বাঙালি হিন্দুরাও দলটিকে একটি হিন্দু বিরোধী মুসলিম রাজনৈতিক দল হিসেবে দেখে। হিমন্ত শিলাদিত্য বাবুরা দলটির গায়ে যে লেবেলটি লাগিয়ে দিতে চান, তার কাউন্টারে যখন AIUDF এর ব্রাণ্ডেড মৌলানা ব্রিগেড বেরিয়ে পড়েন, তখন হিমন্ত-শিলাদিত্য বাবুদের কাজটি আসান হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে, প্রখর রোদে তিন চার ঘন্টা ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে যারা ভোট দিতে যায়, তাদের বেশির ভাগই ইন্টেলেকচুয়েল নয়; বরং অতি সহজ সরল। তারা নেতাদের কথা শুনেই ভোট দেয়। ইন্টেলেকচুয়েলদের অধিকাংশই ভোটের লম্বা লাইনে দাঁড়াতে যায় না। ভারতীয় গণতন্ত্রের এ এক নিগেটিভ দিক। ভারতীয় ভোটারদের অধিকাংশই ব্রুটাস নয়; বরং এন্টনিয়র ভাষণ শুনতে পছন্দ করে। কিন্তু AIUDF যেখানে আরও বেশি টেকনিকেল এবং প্রেকটিকেল হবার কথা, সেখানে উল্টোটাই করে দলটি। দলটির রণকৌশল থেকে সাম্প্রদায়ী মেরুকরণবাদীরাই উপকৃত হয়ে যায় বেশি। এ উপলব্ধি অনেকেরই।
প্রশ্ন হল AIUDF কি আদৌ মুসলমানের দল বা বাংলাদেশি মুসলমানদের পক্ষে ওকালতি করার দল? অথবা AIUDF কি কোন সাম্প্রদায়ী দল? অথবা হিন্দু বিরোধী দল? তার সোজা উত্তর 'না'। যারা AIUDF এর জন্মের ইতিহাস জানে, তাদের কাছে AIUDF বঞ্চিত পীড়িতদের এক নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল। ভ্রষ্টাচার এবং শোষণের বিরুদ্ধে আপোষহীন এক মজবুত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক মঞ্চ। সবদিক দিক দিয়ে অবহেলিত এবং পদদলিতদের উদ্ধারের শপথ নিয়ে ১৩টি দলের সমাহারে গঠিত হয়েছিল UDF/ AUDF/AIUDF নামক রাজনৈতিক দলটি। কিন্তু বিভিন্ন কারণে দলটি আজ সেই অবস্থানে নেই। অনেকের কাছে দলটি এখন ভোট কাটুয়া। তারা বিজেপির উত্থানের পেছনে AIUDFকেই দায়ী করেন। তবে যে যাই বলুক, সমালোচকদের শত্রু না ভেবে AIUDFকে ঠাণ্ডা মাথায় সিরিয়াসলি আত্মচিন্তন করতে হবে। কোথায় গলদ রয়েছে তা বের করতে হবে। একটি ধর্মনিপেক্ষ গণতান্ত্রিক দলের গায়ে কেন এবং কিভাবে সাম্প্রদায়িকতার লেবেল লাগিয়ে দিতে বিরোধিরা সফল হয়ে গেল, তা দেখতে হবে। কোন অবস্থায়ই যাতে সাম্প্রদায়ী মেরুকরণবাদীরা AIUDF থেকে অক্সিজেন না পায় তা লক্ষ্য রাখতে হবে। দলের অভ্যন্তরে কোন সাম্প্রদায়িক দলের এজেন্ট অনুপ্রবেশ করেছে কি না, তা লক্ষ্য রাখতে হবে। সিন্ডিকেট মাফিয়া, টাউট-দালাল এবং সাম্প্রদায়িকতার পৃষ্ঠপোষকদের থেকে দলকে সাবধান থাকতে হবে। ভোটকাটুয়ার অভিযোগ থেকে দলকে মুক্ত রাখতে হবে। সর্বোপরি যে আদর্শ এবং লক্ষ্য নিয়ে দলটি গঠিত হয়েছিল, সেটা পুনরায় স্মরণ করতে হবে। দলটি যে আদৌ সাম্প্রদায়ী নয়; বরং বঞ্চিত নিপীড়িতদের উদ্ধারে এক গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ মঞ্চ- তার বাস্তব এবং ব্যবহারিক প্রমাণ দিতে হবে। দল প্রধানের মানবসেবা এবং অসাম্প্রদায়ী ইমেজ আরও সুন্দর ভাবে তুলে ধরতে হবে। দলপ্রধান থেকে দলের একজন সাধারণ সদস্য পর্যন্ত দুটি শব্দ সব সময় মাথায় রাখতে হবে। একটি হল গণতন্ত্র আর অপরটি ধর্মনিরপেক্ষতা। তখনই দল সব অপবাদ এবং অপপ্রচারের জবাব দিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতেই থাকবে।
No comments:
Post a Comment
Thanks for your Valuable comment