'ব্রাহ্মণ পাত্র চাই'- কৌতুহল বশতঃ একটি বহুল প্রচারিত দৈনিকের পাত্র পাত্রীর চাহিদা গুলো দেখছিলাম।কোথাও হিন্দু বা মুসলিম পাত্র চাই চোখে পড়লো না।বেশিরভাগ ব্রাহ্মণ , কায়স্থ,সাহা এইসব পাত্র চাই সঙ্গে একটা সরকারি চাকরিও চাই।
তাহলে আমারা সবাই হিন্দু ,এই কথার কোন মূল্য আছে?হিন্দু যদি সব বর্ণের হিন্দুদের বিবাহ করতেই রাজী নয় তবে এই ধর্মকে সাম্যবাদী কিংবা বর্ণবাদী বিরোধী ধর্ম বলা যায়?
আমেরিকায় যে বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে তার আগুন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পরছে।ভারতেও কিছু মানুষ বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছেন। কিন্তু আমাদের হিন্দু ধর্মের ভিত্তি হল বেদ,গীতা, মনুসংহিতা যেগুলোর মূলে আছে ভারতীয় সমাজকে চার বর্ণের বিভাজন। যেটা ব্রাহ্মণ্যবাদ বা মনুবাদ বলা হয়। বৈদিক ব্রাহ্মণদের কাজ হচ্ছে এই চার বর্ণের বিভাজন বজায় রেখে হিন্দু ধর্মের রক্ষা করা।
তাহলে হিন্দু ধর্ম থেকে বর্ণবাদকে আলাদা করা সম্ভব?ব্রাহ্মণ্যবাদে সবচেয়ে নিপীড়নের স্বীকার শূদ্ররা বর্তমানে যাদের দলিত বলা হচ্ছে। কিছু বর্ণহিন্দু বর্ণবিভাজনের বিরোধী যেমন আমি। আবার কিছু দলিত আবার ব্রাহ্মণ্যবাদীদের পক্ষে যারা আমি ব্রাহ্মণ্যবাদীদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলি বলে আমাকে রীতিমতো গালাগাল এবং হুমকি দিয়ে যাচ্ছে যদিও আমি ঐসবে ভয় পাই না। হাজার হাজার বছর ধরে নিপীড়িত শূদ্রদের পক্ষে বলে যাব তার জন্য যদি বর্ণ হিন্দুরা আমাকে সমাজচ্যুত করে তাতেও রাজী। মুসলিম সমাজকে কিছু দলিতরা ভালো চোখে দেখে না সেটা হচ্ছে ইতিহাসের নির্মম পরিণতি। যখন ব্রাহ্মণ্যবাদ বিস্তার লাভ করে তখন মুসলমানরা ভারতে ছিল না।আর ভারতের আম গরীব মুসলমানরা বিদেশ থেকে আসেনি। ব্রাহ্মণ্যবাদের স্রষ্টা আর্যরা বিদেশ থেকে এসেছে তার যথেষ্ট প্রধাণ আছে।
আমেরিকার বর্ণবাদ আর ভারতের বর্ণবাদ এক নয়। আমেরিকার সাদা গুলো একদম দুধের মত সাদা কালো গুলো কয়লার মতো!ভারতের ব্রাহ্মণগুলো কয়লার মতো না হলেও দুধের মতো সাদা নয়। সুতরাং ভারতের বর্ণ বিভাজনটা নেচারেল নয় বরং মনুষ্য সৃষ্টি।তাই গায়ের রঙ দেখে বুঝা সম্ভব নয় কে হিন্দু, কে মুসলমান, কে ব্রাহ্মণ বা কে শূদ্র।তেমনি চেহারা দেখেও আলাদা করতে পারবেন না।একমাত্র পারবেন পোষাক দেখে!
সুতরাং পাত্র পাত্রীর বিজ্ঞাপনে বর্ণ বিভাজন কেন?একমাত্র বর্ণহিন্দুদের রক্তের সংমিশ্রণ যাতে আলাদা রাখা যায় তার জন্য। কিন্তু তারা কি সেটা পেরেছে?তাহলে ব্রাহ্মণের গায়ের রঙ কালো হলো কেন?কিংবা শূদ্রেও গায়ের রঙ সাদা হলো কীভাবে? সরকারি চাকুরে হলে ব্রাহ্মণেরও অস্ববর্ণে আপত্তি নেই!
অথাৎ চাকুরে এবং সুন্দর হলে বর্ণহিন্দুদের রক্তের বিশুদ্ধতা ভঙ্গ হলেও অসুবিধা নেই। কালো কিংবা বেকার হলে সমাজচ্যুত হবে!
এইসব বিধান বৈদিক বিধানে আছে।কোন কোন গুণ থাকলে শূদ্রও ব্রাহ্মণ হতে পারবে।অথাৎ ভালো জিনিস গুলো ভগবান ওদের জন্যেই সৃষ্টি করেছেন।
বিবাহ বর্ণবাদী ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বর্ণবাদী ব্যবস্থার অবসান অসম্ভব।যতই গর্বের সঙ্গে হিন্দু বলুন না কেন এতে ব্রাহ্মণ্যবাদেই শক্তিশালী হবে।বর্ণহিন্দুদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে শূদ্রদের ততটা সামাজিক অবনতি হবে।
লেখকঃ- Babul Sen
No comments:
Post a Comment
Thanks for your Valuable comment